মহানবীকে নিয়ে কটুক্তিকর কার্টুন প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে গতবছর ফ্রান্সে এক চেচেন মুসলিম যুবকের হাতে স্কুল শিক্ষকের মৃত্যুর পর গোটা বিশ্বে তোলপাড় তৈরী হয়েছিলো। তখন থেকে বেশ চাপে পরে ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলমানরা। তার রেশ না কাটতেই এবার খুন হলেন ফ্রান্সের এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা।
প্যারিসের দক্ষিণ-পশ্চিমে র্যামবুইলেট-র থানার ৪৯ বছর বয়সী এক প্রশাসনিক সহকারী পুলিশ কর্মীকে গলায় দু’বার ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করা হয় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তিনি সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াডের একজন সিনিয়র অফিসার ছিলেন বলে জানা যায়।
হত্যাকান্ডটি গতকাল প্যারিস সময় দুপুর ২ টা ২০ মিনিটে প্যারিস থেকে ৩৫ মাইল দূরে যোভালিনস ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ দিকের র্যামবুইলেট নামক এলাকায় থানায় ঢুকার প্রবেশদ্বারে ঘটনাটি ঘটে। সেসময় নিহত পুলিশ কর্মকর্তা নিরস্ত্র ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
প্রাথমিকভাবে হত্যাকারী একজন ৩৭ বছর বয়সী তিউনিসিয়ার নাগরিক বলে জানা যায়। নিহত আততায়ী ২০০৯ সালে অবৈধভাবে ফ্রাসে প্রবেশ করে এবং পরবর্তিতে ১০ বছরের জন্য বৈধভাবে থাকার জন্য কাগজপত্র করে যার মেয়াদ ২০১৯ সালেই শেষ হয়ে যায় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। তারপর থেকে সে অবৈধভাবে কোন কাগজপত্র ছাড়াই ফ্রান্সে বসবাস করে আসছিলো। হত্যাকারীকে অবশ্য ঘটনার পরপর গ্রেপ্তার করার চেষ্টাকালে নিহত পুলিশ কর্মীর কলিগের গুলিতে ঘটনাস্থলে মারা যায়।
জানা যায়, নিহত মহিলা পুলিশ কর্মী তার দুপুরের খাবার শেষ করে থানার প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকার সময়ে আততায়ীর হামলার শিকার হন। নিহত পুলিশ কর্মী ১৮ এবং ১৩ বছর বয়সের দু’ সন্তানের মা।
এদিকে ঘটনার পরপর প্রধানমন্ত্রী জিন কাসটেক্স এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা এ নারকীয় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং ঘটনার সাথে আরও সংশ্লিষ্ট কেউ আছে কিনা তা তদন্তে জোর তৎপড়তার নির্দেশ দেন। এসময় তারা, ফ্রান্সে ইসলামের সন্ত্রাসবাদ কঠোর হস্তে দমনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এক টুইট বার্তায় জিন প্রধানমন্ত্রী ক্যাসটেক্স বলেন, “কাপুরুষতার এক
বর্বর আচরণের মধ্য দিয়ে ফ্রান্স
প্রজাতন্ত্র একজন বীরকে হারিয়েছে।”
এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ফরাসী প্রশাসন ভদ্রতাবশতঃ শুধুমাত্র অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্ত বলে উল্লেখ করতো কিন্তু এখন তারা অনেককিছু সরাসরি টিভি লাইভে প্রকাশ্যে এসে তীব্র সমালোচনা করছেন।
এদিকে, থানার মতো নিরাপত্তাবেষ্টিত জায়গায় পুলিশ হত্যার মতো এরকম একটি ঘটনা ঘটার কারণে ফ্রান্স সরকারসহ এখানকার সকল রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায় যে, আততায়ী সাধারন মানুষের মতোই থানার কম্পাউন্ড প্রবেশ দ্বারে মোবাইল হাতে খুব স্বাভাবিকভাবে হাঁটাহাটি করছিলেন। দুপুরের খাবার শেষ করে থানার প্রবেশদ্বার দিয়ে যেই পুলিশ কর্মীটি ঢুকছিলেন ঠিক তখনিই তার গলায় ও কাঁধে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করে আততায়ী। তখন অন্য এক পুলিশ অফিসারের গুলিতে আততীয় নিহত হন বলে জানা যায়।
তদন্তের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে হামলার সময় লোকটি “আল্লাহু আকবর” বলে চিৎকার করেছিল। আরো জানা যায় যে, হত্যাকারী ইউটিউবের কিছু ভিডিও দেখে দেখে সেগুলোর উস্কানীমূলক প্ররোচনায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
ঘটনার পরপর ফ্রান্সের মসজিদ গুলোকে কঠোর নজরদারিতে আনা হয়েছে। গত বছর স্কুলশিক্ষক নিহত হবার ঘটনার পর গতকালের পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় ফ্রান্সে বসবাসরত অনান্য মুসলমানরা আবার প্রসাশন ও সরকারের তোপের মুখে পরতে যাচ্ছেন বলে আশংকা ব্যাক্ত করেন।
মহিলা পুলিশ হত্যার ঘটনায় ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলমানরা ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, এটা ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কর্ম নয়, এটা পুরোপুরি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। সন্ত্রাসীরা কখনো কোন ধর্মের হতে পারে না। ইসলাম কখনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সমর্থন করে না।
বাংলাদেশ বংশদ্ভূত ফ্রান্সের নাগরিক মুহাম্মেদ আশফাক দেওয়ান বলেন, “আমরা মুসলমানরা কখনোই এমন হত্যাকান্ড সমর্থন করি না। কিছু উগ্রপন্থী যারা কিনা ইসলামকে ব্যবহার করে এমন জঘন্য কর্মকান্ড করছে আমরা ফ্রান্সে বসবাসরত সকল মুসলমান তার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই।”
তিনি ফ্রান্স সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, এধরনের মুসলমান নামধারী কিছু উগ্রপন্থীদের কারনে ফ্রান্সে বসবাসরত অনান্য মুসলমানরা কোন চাপে না পরে।
এদিকে এঘটনার পর পরই রাষ্ট্রপতি এমমানুয়েল ম্যাক্রন তাঁর এক টুইটে লিখেছেন যে, তার দেশে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের ছাড় দেবে না। ইসলামী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
গেল বছর, প্যারিসের স্কুল শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাট তার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মহানবী (সাঃ) কে ব্যাঙ্গ করে কার্টুন প্রদর্শন এবং পরবর্তিতে ঐ স্কুল শিক্ষককে রাস্তায় গলা কেটে হত্যার কারনে মুসলিম বিশ্বের সাথে ফ্রান্সের সম্পর্ক তিক্ততার মধ্যে পৌঁছেছে। ঐ ঘটনাকে ঘিরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ মন্তব্য নিয়ে মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিলো।
