আট দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন সাম্প্রতিক আলোচিত ইলামিক বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান। ৮ জুন রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন ত্ব-হা। সঙ্গে ছিলেন দুই সহযোগী আব্দুল মুহিত ও মোহাম্মদ ফিরোজ এবং প্রাইভেটকার চালক আমির হোসেন ফয়েজ। এরপর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন তারা।
৩১ বছর বয়সী এই ইসলামি বক্তার নাম মো. আফছানুল আদনান ত্ব-হা। তবে আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান নামেই পরিচিত। বাড়ি রংপুরে। রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ-সংলগ্ন গলিতে তার পৈতৃক বাসা। বিয়ের পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শালবন এলাকার চেয়ারম্যানের গলিতে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
আদনানের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর নাম আবিদা নুর, দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিন বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান আছে। দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার সারা মিরপুর আল ইদফান ইসলামী গার্লস মাদ্রাসার পরিচালক ও শিক্ষক। তিন মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল।
একসময় দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলতেন ত্ব-হা আদনান। রংপুরের ক্রিকেট অঙ্গনে তুখোড় ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিতি পান। ক্রিকেটই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। কিন্তু অনার্সে পড়াকালে ধর্মের দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়েন। ধর্মের প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে যেতে ক্রিকেটকে বিসর্জন দেন তিনি। অবশ্য ছেলেবেলা থেকেই ধর্মীয় বিষয়ে আগ্রহ ছিল আদনানের। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো আরবি প্রতিষ্ঠানে না পড়লেও ইসলাম ধর্মের প্রচুর বই পড়তেন এবং গবেষণা করতেন সময় পেলেই।
আদনানের মা আজেদা বেগম জানিয়েছেন, ত্ব-হার হাতেখড়ি রংপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেখান থেকে এইচএসসি পাশের পর ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। অনার্সে দর্শনে বিষয় নিয়ে পড়েছেন। মাস্টার্সে দর্শনে ফার্স্ট ক্লাস পান তিনি। এরপর বাড়ির পাশে আল জামেয়া আসসালাফিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। সেই শিক্ষা নিয়ে করোনার শুরু থেকে অনলাইনে আরবি পড়াতেন তিনি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে জুমার খুতবা দিতেন। তার ফেইসবুকে পেজের অনুসারীর সংখ্যা ৫২ হাজার। তার কয়েকটি বক্তব্য ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক ভাইরাল। এসব ভিডিওতে ধর্মীয় উগ্রবাদ বা সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য নেই।
এদিকে তার সন্ধান পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন দ্বিতীয় স্ত্রী মাদ্রাসাশিক্ষক সাবিকুন নাহার সারা। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তাও চেয়েছেন তিনি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে স্বামীর জন্য কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি এ আরজি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাবিকুন নাহার বলেন, তিনি (ত্ব-হা) নিরীহ মানুষ, ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন, নয়তো আমাকে তার কাছে নিয়ে যান। যদি সত্যিকার অর্থে তিনি কোনো অপরাধে যুক্ত থাকেন তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনে তার বিচার হোক। আমি কিছু বলব না। তিনি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি কওমি-আহলে হাদিস, আওয়ামী লীগ-বিএনপি কিছু না।
সাবিকুন নাহার বলেন, ৮ জুন রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন ত্ব-হা। পথে বিকাল ৩টার দিকে বগুড়ায় একটি প্রোগ্রাম ছিল। প্রোগ্রাম শেষে আমার কাছে আসার কথা ছিল। বিকাল ৪টার দিকে আমি তাকে ফোন করে বলি রাতে (বাসায় এসে) কী খাবা? কী রান্না করব? এ কথা শুনে তিনি রেগে যান আমার ওপর। বলেন, আমাদের প্রাইভেটকারকে পেছন থেকে দুটি বাইক ফলো করছে। আমার জন্য দোয়া কর, আমি যেন ঠিকভাবে বাসায় পৌঁছাতে পারি। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি নিজেই আমাকে ফোন করে বলেন, বাইক দুটি আর দেখা যাচ্ছে না। তুমি রান্না কর, আমরা চারজন বাসায় এসে ভাত খাব।
সাবিকন নাহার বলেন, তার (ত্ব-হা) সঙ্গে যখনই কথা হয় তখনই তিনি লোকেশনসহ আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে স্ক্রিনশট পাঠান। ওইদিনও একাধিকবার আমাকে লোকেশন পাঠিয়েছেন। রাত ২টার দিকে সর্বশেষ আমি তাকে ফোন করি। কিন্তু তিনি ঘুমানোর কারণে আমার ফোন রিসিভ করতে পারেননি। ঘুম ভাঙার পরে রাত ২টা ৩৭ মিনিটে একটা ম্যাপ শেয়ার করেন। তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এরপর তার মেসেজ দেখে ঘুম থেকে উঠে খাবারের ব্যবস্থা করতে যাই। তার ম্যাপে দেখাচ্ছিল বাসায় পৌঁছাতে ১৮ মিনিট লাগবে। এরপর অপেক্ষা করতে করতে রাত ৩টার দিকে তার নম্বরে ফোন করলে বন্ধ পাই। এরপর কারচালক আমিরের নম্বরে ফোন করি। তার মোবাইলও বন্ধ পাই। তখন আমার সন্দেহ হয়। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে ভোর হয়ে যায়।