চট্টগ্রাম উত্তর হালিশহর ২৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত বি-ব্লকের মোঃ আবু ইউসুফ নামে এক ইতালি প্রবাসীকে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ডিবি পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয়ে জিম্মি করে ৪ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে। এসময় তারা ভুক্তভূগীকে বিবস্ত্র করে অন্য এক নারীর সাথে ছবি ও ভিডিও তুলতে বাধ্য করে এবং নগদ ৪ লক্ষ টাকা না দিলে ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি প্রদান করে। প্রতিবাদ করায় এসময় সন্ত্রাসীরা ভুক্তভূগী ও তার ছেলেকে মারধর করে আহত করে।
নারকীয় এ ঘটনাটি ঘটে গত ২১ এপ্রিল (বুধবার)। উক্ত ঘটনায় ঘটনার পরদিন প্রবাসীর ছেলে মোঃ আরাফাত হোসেন সজিব (২৫) নিজে বাদী হয়ে হালিশহর থানায় ১০ জনকে আসামী করে একটি মামলা (মামলা নং-১৯, তারিখ- ২২/০৪/২০২১ ইং) দায়ের করেন। উক্ত মামলায় মোঃ সোহেল (২৪) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ।

মামলার আসামী মনা, সোহেল, মিরন, পারভেজ, মিল্টন ও মামুন। ছবিঃ সংগৃহীত।
মামলার আসামীরা হচ্ছেন-
১) মহিউদ্দিন সুমন উরফে মাইকেল সুমন (৩২), ঠিকানা: লেইন ০৭, রোড ০১, এ-ব্লক, হালিশহর।
২) মিল্টন (৩৫), ঠিকানা: লেইন: ০৮, এ-ব্লক।
৩) ছোটন (৫০), ঠিকানা: বাসা ০৬, লেইন ১৮, রোড ০২, বি-ব্লক।
৪) সোনিয়া (২৫), ঠিকানা: লেইন ১০, এ-ব্লক।
৫) মোঃ হৃদয় (২২), ঠিকানা: বাসা ০৬ (তাহির উদ্দিনের বাড়ী), লেইন ০১, রোড ০৩, বি-ব্লক।
৬) পারভেজ (৩৩), ঠিকানা: লেইন ০৫, এ-ব্লক।
৭) মোঃ সোহেল (২৪), ঠিকানা: ৯ নং লেইনের শেষ মাথায়, বি-ব্লক ট্রেড স্কুলের পূর্ব পার্শ্বের বাসিন্দা।
৮) মোঃ মামুন (৩৫), ঠিকানা: লেইন ০৭, এ-ব্লক।
৯) মনাই মনা (৩৩), ঠিকানা: ৯ নং লেইনের শেষ মাথায়, বি-ব্লক ট্রেড স্কুলের পূর্ব পার্শ্বের বাসিন্দা। বর্তমান ঠিকানা: উত্তরা আবাসিক।
১০) নুরুল ইসলমি মিরন (৩২), ঠিকানা: বাসা ২৪, লেইন ০৩, রোড ০১, এ-ব্লক।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায় যে, বি-ব্লকস্থ ২ নং রোডের ২০ নং লেইনে অবস্থিত ০৩ নং বাসাটির মালিক ইতালী প্রবাসী মোঃ আবু ইউসুফ। ৬ কামড়ার সেমি পাকা বাসাটি তিনি পুরাটাই ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। ঘটনার দিন যোহরের পর তিনি তার বাসার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য আসলে অজ্ঞাতনামা ২ জন ৪ নং আসামী সোনিয়া’কে নিয়ে মোঃ আবু ইউসুফকে মুখ চেপে জোড় পূর্বক ভাড়াঘরের ভিতর একটি রুমে নিয়ে যায়। ভুক্তভূগী প্রবাসী কিছু বুঝে উঠার আগেই মামলার ১নং আসামী (মহিউদ্দিন সুমন) ও তার সাথে অজ্ঞাতনামা আরও দু’জন সন্ত্রাসী জোড় করে আবু ইউসূফের পরিধেয় বস্ত্র জোড় পূর্বক খুলে মামলার ৪ নং আসামি সোনিয়া নামক মহিলার সাথে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারন করে। এতে ভুক্তভূগী প্রবাসী প্রতিবাদ করলে মামলার ১ ও ৬ নং আসামী (মহিউদ্দিন সুমন ও পারভেজ) তাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরও দুজন মিলে তাকে মারধর করে মারাত্মক ভাবে আহত করে এবং ১ নং আসামী মহিউদ্দিন সুমন প্রবাসীর সাথে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এসময় মামলার ১ নং আসামী ০১৬৮৮৭৮৮৬৫৩ নম্বর থেকে মোবাইল করে প্রবাসী আবু ইউসুফ এর ছেলেকে জানায় যে, তার বাবা একটি মেয়ে সহ অনৈতিক কাজে ধরা পরছে, তাকে ছাড়িয়ে নিতে হলে নগদ ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে। তাৎক্ষনিক ভুক্তভূগীর ছেলে ও ছেলের মামা ঘটনাস্থলে এসে ৩ জন ব্যক্তিকে দেখতে পায়। উপস্থিত ৩ ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে ১০ নং আসামী নুরুল ইসলমি মিরন নিজেকে পুলিশের লোক ও অজ্ঞাতনামা ২ জনের ১ জন নিজেকে ডিবি পুলিশ ও অপরজন নিজেদের সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়। এসময় ভুক্তভূগীর স্বজন সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশকে অবগত করেছে বললে উপস্থিত ৩ জনের মধ্যে ২ জন দৌড়ে পালিয়ে যায় এবং অপর ১ জনকে ভুক্তভূগীর স্বজনরা ধরে ফেলে। পরবর্তিতে ১নং আসামী একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ‘কে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে আটককৃত ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য। পরবর্তিতে আটককৃত ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য মামলার ১ নং থেকে ১০ নং পর্যন্ত সকল আসামী অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জন আততায়ী মোঃ আবু ইউসূফ ও তার ছেলেকে খুন করবার উদ্দেশ্যে সবাই মিলে এলোপাথারি মারা শুরু করে, সে মুহুর্তে পুলিশ চলে আসলে আসামীরা পালিয়ে যায় এবং ঘটনাস্থল থেকে আহত বাবা ছেলেকে পুলিশ উদ্ধার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশ কান্তি নাথ, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম), সিএমপি বলেন, এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এধরনের ঘটনা ঘটানোর জন্য তারা পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করে। ইতিমধ্যে ১জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন অন্য কথা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ২০ নং লেইনের একজন বাসিন্দা বলেন, ২১ তারিখের ঘটনায় আসামীরা সকলেই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। প্রশাসন খুব ভালো করে জানেন তারা কে এবং কোথায় আছে, তারপরও প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকা এলাকাবাসীকে বিষ্মিত করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বি-ব্লকের আরেকজন বাসিন্দা জানান, মামলার সকল আসামীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এতো এতো মামলা থাকা সত্বেও এসব সন্ত্রাসীরা এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকে এসে প্রশাসনের নাকের ডগায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে যাচ্ছে, কিন্ত প্রশাসন নিশ্চুপ!
সবদিক প্রেক্ষাপটে, এলাকার প্রবাসীরা এনিয়ে তীব্র আতংকে আছেন। তারা অতি দ্রুততার সাথে প্রশাসনকে এবিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানান।
