এরই মধ্যে এ ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, মসজিদের মাইকে করা সেনার প্রার্থনা আসলে ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব ‘হানুকার’ গান। তবে এ সময় কোনো বাজনা বাজানো হয়নি।
এ ঘটনায় ইসরায়েলেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারবিরোধীরা। সেখানকার একটি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ওফার কাসিফ বলেন, ‘এই ছবিতে প্রমাণিত হলো, ইসরায়েলি কট্টর ধর্মান্ধে বিশ্বাসী।’
এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সেনাবাহিনীর সেই সেনাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানায় ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম দ্য আর্মি রেডিও। তবে জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন–জির বলছেন, সেনার দায় নেই।
ইতামার বেন–জির ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম দ্য আর্মি রেডিওকে বলেন, ‘আমাদের এই যোদ্ধাদের পাশে থাকতে হবে। তবে যুদ্ধের সময় এদের এমন কাজ করা উচিৎ নয়।’
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই বলছে, ওই বিশেষ গান ‘হানুকা গান’ নামে পরিচিত। মসজিদের মাইকে ভেসে আসছিল গানের কয়েকটি কথা, ‘উই কেম টু ভ্যানিস দ্য ডার্কনেস’।
আরও একটি ভিডিও ছড়িয়েছে। তাতে দেখা যায়, এক ইসরায়েলি সেনা মাইক নিয়ে বলছেন, ‘মহান স্রষ্টার নামে, যিনি পরম করুণাময়, আমি আইডিএফের মুখপাত্র বলছি। এই ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে গেছে। কোনো সশস্ত্র ব্যক্তিকে এখানে প্রবেশ করতে দেব না। আমরা চাই, আপনারা এখানে শান্তিতে থাকুন। আল্লাহর শক্তির কাছে কোনো শক্তিই প্রাধান্য পাবে না।’
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই বলছে, ইসলামকে ব্যঙ্গ করেই এসব কথা বলে থাকতে পারেন ওই সেনা। ওই হামলায় ৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি নাগরিকরা মনে করেন, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস না করা পর্যন্ত গাজায় সেনাবাহিনীর অভিযান চালানো উচিত। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান, সেনা হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের এত মৃত্যু সত্ত্বেও এমনটা চায় অধিকাংশ ইসরায়েলি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমনটা জানা যায়।
আপাতত গাজা অভিযান বন্ধ হচ্ছে না, যুদ্ধবিরতির প্রশ্নই নেই বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। কূটনৈতিক চাপ কিংবা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণহানি কোনোকিছুই ইসরায়েলকে সংঘাত থেকে দূরে সরাবে না বলে জানান তিনি। মঙ্গলবারই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ইসরায়েল এতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। হামাসকে শেষ না করে এ লড়াই থামবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এর পর থেকে গাজা উপত্যকা নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা গাজা অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ১৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে ৫০ হাজার ৫৯৪ জন।