আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন অনেক নেতা। এখন শুধু মনোনয়ন বোর্ড থেকে চূড়ান্ত প্রাথীদের তালিকা প্রকাশের জন্য অপেক্ষা। আর এই মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে একজনকে মনোনয়ন দেবেন বলে দলীয় তহবিলে ২০ কোটি টাকা জমা দেয়ার কথা বলেন মো. ইয়াছিন (৪৬) নামের এক ব্যক্তি। দলীয় তহবিলে এই অর্থ জমা দিলে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে বলে জানান মো. ইয়াছিন।
একজন সংসদ সদস্যকে ফোন করে মো. ইয়াছিন বলেন, গণভবন থেকে বলছি। আপনার মনোনয়নের ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী হিসেবে দলীয় তহবিলে আপনাকে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে। প্রস্তুত রাখবেন টাকা। যেকোনো মুহূর্তে টাকা জমা দিতে বললে এই টাকা তাৎক্ষণিক জমা দেবেন। টাকা জমা দেয়ার পর আপনার মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে। শর্তে রাজি থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন বলে ফোন রেখে দেন।
এভাবেই গণভবনের কর্মকর্তা পরিচয়ে সম্প্রতি একজন সংসদ সদস্যকে ফোন করে এসব কথা বলেন মো. ইয়াছিন। বিষয়টি ওই সংসদ সদস্যের কাছে সন্দেহের মনে হলে দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে জানান। এরপর ওই কেন্দ্রীয় নেতা বুঝতে পারেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে অভিনব প্রতারণা করা হচ্ছে। তাইতো ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) ঘটনাটি খতিয়ে দেখে প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন ওই কেন্দ্রীয় নেতা।
এরপর বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) নোয়াখালী থেকে প্রতারক মো. ইয়াছিন ও তার মেয়ে সুরাইয়া ইয়াছিনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। আর এ ঘটনায় ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) ওই সংসদ সদস্যের পক্ষে মানছুরুল আউয়াল শাফী নামের এক ব্যক্তি একটি মামলা করেন
এদিন আদালতে হাজির করা হয় আসামিদের। এরপর প্রতারণার এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের তিনদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদ।
এর আগে এদিন দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, বাবা ও মেয়ে দু’জনই পেশাদার প্রতারক। বিভিন্ন সময় সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি কিংবা দেশের বাইরে পাঠানোর নাম করে অনেকের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করে। প্রতারকরা তখন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়নি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছিলেন। তাদের ফোন পেয়ে অনেকে টাকাও দিয়েছেন। আবার কেউ টাকা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এছাড়া ডিবি কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মো. ইয়াছিন ও তার মেয়ে জানিয়েছেন, তাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াকালি। একসময় তারা রাজধানীর নবাবগঞ্জে ইলেকট্রনিক জিনিসের ব্যবসা করতেন। পরে একপর্যায় প্রতারণায় জড়ায়। মেয়ে সুরাইয়া ইয়াছিনের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু ক’বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ায় বাবার কাছে চলে আসে সে। এরপর বাবার সঙ্গে সেও প্রতারণায় জড়ায়।
