ঢাকাসোমবার , ২৭ নভেম্বর ২০২৩
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সন্দেহ হলেই গ্রেফতার, তোয়াক্কা করছেনা সাংবিধানিক নিয়ম।

অনলাইন ডেস্ক
নভেম্বর ২৭, ২০২৩ ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

রাজধানীতে গত ২৮ জুলাই থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কাউকে বাসস্থান বা কর্মস্থল ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের জানাতে হবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত হাজির করা হয়।

রাজধানীর তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ হেলাল থাকেন কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। গত ২৮ অক্টোবর সকালে লালবাগ এলাকায় আসার পর তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় লালবাগ থানা পুলিশ। সেদিনই তাঁকে ভবঘুরে ও অভ্যাসগত অপরাধে জড়িত অভিযোগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

৯ দিন কারাভোগের পর গত ৬ নভেম্বর আদালত হেলালকে জামিন দেন। পরদিন তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাঁর আইনজীবী ফজলুল হক শেখ বলেন, যে ছেলেটির সুনির্দিষ্ট পরিচয় আছে, যে ছেলেটি সেদিন বারবারই বলেছিল, তিনি তিতুমীর কলেজে লেখাপড়া করেন। তার পরও পুলিশ বিনা পরোয়ানায় তাঁকে ভবঘুরে হিসেবে গ্রেপ্তার করল। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।

লালবাগ থানার পুলিশ আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, হেলালের বিরুদ্ধে বিরূপ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তাহলে একজন নিরপরাধ ছাত্রকে ভবঘুরে হিসেবে গ্রেপ্তার করা হলো কেন? এ প্রশ্নের জবাবে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার হেলাল উদ্দিন বলেন, সন্দেহের ভিত্তিতে হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

শুধু হেলাল নন, গত ২৮ জুলাই থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে অন্তত ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের অভিযোগ হলো, এরা ভবঘুরে, অভ্যাসগত অপরাধী ও আমলযোগ্য অপরাধের ষড়যন্ত্রে জড়িত।

গ্রেপ্তার হওয়া অন্তত ৫০ জন ব্যক্তির আইনজীবীর জানান, সুনির্দিষ্ট পেশা থাকার পরও ভবঘুরে হিসেবে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও জানানো হয়নি।

গনমাধ্যম ও আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে রাজনৈতিক নেতা–কর্মী গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৬৪ জন।
এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা তিন হাজার ১৪০ জন। বিএনপি নেতা–কর্মীদের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অন্তত ১৫ জন আইনজীবীর দাবি, গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের অপব্যবহার রোধে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট যে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
তার একটি হচ্ছে, বাসস্থান বা কর্মস্থল ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনার এক ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের জানাতে হবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা মানছে না পুলিশ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না বলেন, গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের অপব্যবহার রোধে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
আপিল বিভাগও হাইকোর্টের নির্দেশনা বহাল রেখেছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, হাইকোর্টের বেশির ভাগ নির্দেশনা মানছেন না সংশ্লিষ্টরা।
যেমন, কাউকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তির স্বজনেরা অভিযোগ করছেন, গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনেককে আদালতে তোলা হয় না।
আবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আগে সরকারি চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করাতে হয় এবং চিকিৎসকের প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে হয়। এসব নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, তার প্রত্যেকটি নির্দেশনা পুলিশ মেনে চলে।
শুধু সুনির্দিষ্ট ও আমলযোগ্য অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগেই পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করছে। গ্রেপ্তার করার পর তাঁদের স্বজনদের জানানো হয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কাউকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে।
রাস্তা থেকে কাউকে বিনা পরোয়ানায় ধরে ভবঘুরে হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো সরাসরি সংবিধানের মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী।
এটা আদালত অবমাননার শামিল। গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো যারা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

১৯৯৮ সালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে।

সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টসহ (ব্লাস্ট) অন্যরা হাইকোর্টে রিট করে। শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট এ বিষয়ে কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন।
এই রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে ১৫ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর ২০১৬ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগ রায় দেন।
হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন সেটি বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। রিভিউ আবেদনটি এখন বিচারাধীন। ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা ও সাবেক জেলা জজ এস এম রেজাউল করিম বলেন, ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও নির্দেশনা আপিল বিভাগ বহাল রেখে রায় দেন। ফলে ওই রায় সবাই মানতে বাধ্য। সূত্র: প্রথমআলো।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।