গাজাবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী সংগঠন- হামাস। অর্থাৎ, আবারও শান্তির পথে হাঁটতে চাইছে হামাস। কিন্তু বরাবরের মতোই একগুঁয়ে আচরণ করছেন ইহুদিবাদী ইসরাইলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সবশেষ প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে পূর্বপরিকল্পিত রাফাহ অভিযান শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
ইসরাইলের বিমান থেকে পূর্ব রাফাহতে ফেলা হচ্ছে মুহুর্মুহু বোমা। বিধ্বস্ত হচ্ছে ঘর-বাড়ি। ঝরেছে নিরীহ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রাণ। এরিমধ্যে মৃত্যুকূপে পরিণত হওয়া গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নেমে এসেছে মানবিক বিপর্যয়। তবুও থামার কোন লক্ষণ নেই। এমন করে আর কত রক্ত ঝরালে ক্ষান্ত হবেন গণহত্যাকারী, কসাই আখ্যা পাওয়া নেতানিয়াহু?
গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ রাতভর বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে আরও বলা হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে মিসরের কায়রোয় আলোচনা চলার মধ্যেই রাফাহতে বোমা হামলা চালাল ইসরাইল। আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে ইসরাইলের এ হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছে।
হামলার বিষয়ে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইলের মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে হামাসের ওপর সামরিক চাপ প্রয়োগের জন্য রাফাহতে অভিযান অব্যাহত রাখতে একমত হয়েছে। রাফাহতে হামলা করে নেতানেয়াহু ভাবছেন হামাসকে ভয় দেখালেন । এবং যুদ্ধবিরতিতে তিনি যেতে চান না । কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর এমন কাণ্ড কি খাল কেটে কুমির আনার মতো নয়?
কারণ এর আগেও হামাস যখনই নরম হয়ে কোন শান্তির পথে হাঁটার কথা ভেবেছেন তখনই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী সেটাকে দুর্বলতা ভেবে হামলার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার ফলাফল তিনি বহুবার পেয়েছেন। এবারও শান্ত হামাসকে খেপিয়ে তুলে আবারও জ্বলন্ত অগ্নিতে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু! হামাসকে শায়েস্তা করতে গিয়ে অতীতের ন্যায় আবারও শায়েস্তা হবেন তিনি।
কী আছে হামাসের প্রস্তাবে যেটা মানতে চাইছেন না নেতানিয়াহু? টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হামাসের প্রধান নেতা ইসমাইল হানিয়া সোমবার যে প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন সেটি মূলত কাতার ও মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীদের তিন-ধাপের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা। এতে ধাপে ধাপে গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর নিজ বসতে ফেরা এবং বন্দি বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু ইহুদিবাদী ইসরাইল দৃশ্যত যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেয়নি। তবে হামাসের ডেপুটি পলিটব্যুরো প্রধান খলিল আল-হাইয়্যা বলেছেন, বাস্তবায়নের দিক দিয়ে এই ধাপগুলো পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং প্রথম ধাপ বাস্তবায়িত হলেই দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়ন শুরু হবে। তিনি বলেন, বল এখন ইসরাইলের কোর্টে এবং এখন সে এই প্রস্তাব মেনে নেবে কিনা, তা তেল আবিবের ওপর নির্ভর করছে।
মজার বিষয় হলো, এমন অবস্থায় বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে। যদিও হামাস নেতা খলিল আল–হায়া বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন মধ্যস্থতাকারীরা।