ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রুবিনা আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় গাড়ির নিচে চাপা পড়ে আটকে যাওয়া এক নারীকে রাস্তায় টেনেহিঁচড়ে নিয়েই পালাতে ছুট লাগানো সেই সাবেক ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতেই পরিবারের পক্ষ থেকে রুবিনা আক্তারের ভাই জাকির হোসেন বাদি হয়ে মামলাটি করেন। মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদ জানান, সড়ক পরিবহন আইনে এ মামলা করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে রুবিনাকে গাড়ির নিচে টেনে নেওয়া গাড়ির চালক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, এটি দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। সাবেক শিক্ষক স্বাভাবিক ছিলেন কি-না সেটা তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী যাতে ওই শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিসি মো. শহিদুল্লাহ আরো বলেন, এটি খুবই অমানবিক ও মর্মান্তিক একটি ঘটনা। চালক সুস্থ হলে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করব, কেন তিনি এমন করেছেন। চালকের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রাইভেটকার চালক মাদকাসক্ত ছিলেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি এখনও চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানানোর পরে জানা যাবে তিনি কোন অবস্থায় ছিলেন। এর আগে বলতে পারছি না। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, গাড়ি চালিয়ে শাহবাগ থেকে টিএসসির দিকে আসছিলেন সহযোগী অধ্যাপক জাফর। গাড়িতে আর কেউ ছিলেন না। তিনি নিজেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশের সড়কে এক নারী তার গাড়ির নিচে পড়ে আটকে যান। ওই অবস্থায়ই আটকে পড়া নারীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে তিনি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন। পরে পথচারীরা গাড়িটিকে পেছন থেকে তাড়া করে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে পলাশী অভিমুখী সড়কের মুখে গাড়িটি আটকে ফেলেন গাড়ির নিচ থেকে ওই নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয় আর চালককে দেয়া হয় গণপিটুনি। গাড়িটি ব্যাপক ভাঙচুরও করা হয়। আহত চালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। আর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত রুবিনার মৃত্যু হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত রুবিনা আক্তার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তেজকুনিপাড়ায় থাকতেন। তার স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন। তাদের এক সন্তান রয়েছে। হাজারীবাগের সেকশন এলাকায় দেবরের বাসায় তেজগাঁও থেকে দেবরের মোটরসাইকেলেই যাচ্ছিলেন তিনি। পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীত পাশে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয় ওই সাবেক শিক্ষকের গাড়ি। জাফর শাহর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী গণমাধ্যমকে বলেন, নৈতিক স্খলনের অভিযোগ ওই শিক্ষককে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তার সঙ্গে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।
