নিজেকে পরাক্রমশালী রুশ সম্রাট পিটার দ্য গ্রেটের সঙ্গে তুলনা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বলেছেন, পিটার দ্য গ্রেটের মতো তিনি কারও ভূখণ্ড কেড়ে নিচ্ছেন না। তিনি নিজেদের ভূখণ্ড ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের মধ্যে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাজধানী মস্কোয় পিটার দ্য গ্রেটের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুশ সম্রাট পিটার দ্য গ্রেট ১৬৭২ সালের ৯ জুন মস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রথমে জার এবং তারপর ১৬৮২ সাল থেকে ১৭২৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সম্রাট হিসাবে সমগ্র রাশিয়া শাসন করেন।
পিটার বেশ কয়েকটি সফল যুদ্ধের মাধ্যমে রাশিয়াকে একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। শুধু তাই নয়, বাল্টিক সাগরের বন্দরগুলো ধরে রাখার পর রাশিয়ার নৌবাহিনীর জন্য ভিত্তি স্থাপন করেন। আঠারো শতকে সুইডেনের বিরুদ্ধে বড় একটি অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে বাল্টিক উপকূলও জয় করেন তিনি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে সেই অভিযান। এই মুহূর্তে পূর্ব-ইউক্রেনের দনবাস দখলে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার ছিল ১০৬তম দিন
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন রাশিয়ার সাবেক জার সম্রাট পিটার দ্য গ্রেটের ৩৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী মস্কোতে আয়োজিত একটি প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেখানে তরুণ রুশ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাশিয়া তার নিজস্ব ভূখণ্ড ফিরিয়ে নিচ্ছে এবং নিজেকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করছে।
পুতিন আরও বলেন, তিনি (পিটার দ্য গ্রেট) সুইডেনের সঙ্গে যুদ্ধ করে অর্জন করে নিয়েছিলেন। তিনি কারও কাছ থেকে কোনো কিছু দখল করেননি। তিনি ফিরিয়ে এনেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, পিটার দ্য গ্রেট যখন সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এটিকে রাশিয়ার রাজধানী ঘোষণা করেছিলেন তখন ইউরোপের কোনো দেশই এই অঞ্চলটিকে রাশিয়ার অন্তর্গত বলে স্বীকৃতি দেয়নি। সবাই এটিকে সুইডেনের অংশ বলে মনে করত। কিন্তু অনাদিকাল থেকে ফিনো-ইউগ্রিক জনগণের পাশাপাশি স্লাভরা এখানে বসবাস করত।
এই পর্যায়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান অভিযানের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে পুতিন বলেন, আমাদের দায়িত্ব (আমাদের যা আছে, তা) ফিরিয়ে নেওয়া এবং শক্তিশালী করা। হ্যাঁ, আমাদের দেশের ইতিহাসে এমন এমন সময় এসেছে যখন আমরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র আমাদের শক্তি ফিরে পেতে এবং নতুন করে আবারও এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
ঐতিহাসিকদের মতে, ১৭০০ সাল থেকে ১৭২১ পর্যন্ত হওয়া গ্রেট নর্দার্ন যুদ্ধে মস্কোর কাছে সুইডেনের পরাজয় রাশিয়াকে বাল্টিক সাগর অঞ্চলে নেতৃস্থানীয় শক্তিতে পরিণত করে। এতে করে ইউরোপীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ তথা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় রাশিয়া।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন অভিযানের ফলে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক কার্যত ভেঙে পড়েছে। পাশাপাশি ইউরোপের প্রতি পিটারের যে সখ্যতা ছিল সেটিকেও কার্যত খাটো করে দেখছে মস্কো কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে রাশিয়া বর্তমানে এই অঞ্চলে তার ভূখণ্ড সম্প্রসারণের দিকে মনোনিবেশ করেছে।