একের পর এক আইনি জটিলতায় জড়িয়েও রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রত্যাশী হিসেবে
ডনাল্ড ট্রাম্পের ফ্রন্ট-রানারের মর্যাদা তো কমেইনি, উল্টো প্রথম সাড়িতে তার অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে।
সবশেষ এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৭ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রন
ডিস্যান্টিসকে পেছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছেন অ্যামেরিকার এই সাবেক প্রেসিডেন্ট।
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলেও তার প্রচারকাজ অব্যাহতভাবে চলছে এবং সমৃদ্ধও হয়েছে।
২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য লাল দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা পেতে লড়ছেন ১৪ জন।
এর মধ্যে ট্রাম্প ও ডিস্যান্টিসই জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন।
ফাইভথার্টিএইট ডটমের ৩১ জুলাইয়ের জরিপে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ রিপাবিলকানের সমর্থন
পেয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প।
আর ডিস্যান্টিসের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন ১৬ শতাংশ।
অন্য সবারই সমর্থনের পরিমাণ ৬ শতাংশ ও এর নিচে। অনেকে তো ১ শতাংশ ভোটও পাননি।
প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের জরিপে।
সেখানে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৪ শতাং আর ডিস্যান্টিস পেয়েছেন ১৭ শতাংশের সমর্থন।
ডনাল্ড ট্রাম্প গত চার মাসে দুই বার ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন, দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন একটি দেওয়ানি মামলায়।
এখন ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে তৃতীয়বার অভিযুক্ত হওয়ার মুখে রয়েছেন তিনি।
আর তার বিরুদ্ধে জর্জিয়ায় ২০২০ সালের নির্বাচনি ফল জালিয়াতির চেষ্টার অভিযোগের তদন্ত এখনও চলছে।
অ্যামেরিকার ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্ট বা সাবেক প্রেসিডেন্টকে কখনওই কোনো ফৌজদারি মামলায় জড়াতে হয়নি।
এসব ঘটনার আগে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে হওয়া জরিপে ডিস্যান্টিসের চেয়ে কেবল দুই
পয়েন্ট বেশি পেয়ে ৪১ শতাংশ ভোটে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প।
ফ্লোরিডার গভর্নর ডিস্যান্টিসের এখন পর্যন্ত সেটিই কোনো জরিপে পাওয়া সর্বোচ্চ ভোট।
আর গত এপ্রিলে প্রথমবার ব্যবসায়িক জালিয়াতির ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন হু হু করে বেড়েছে, কমেছে ডিস্যান্টিসে পক্ষে ভোট।
এখন তাদের মধ্যে জনপ্রিয়তার বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, প্রথমবার নিউ ইয়র্কে ব্যবসায়িক জালিয়াতির ফৌজদারি মামলায়
গ্রেফতার ও আদালতে হাজির হওয়ার পর থেকে ট্রাম্পই বেশিরভাগ রিপাবলিকান ভোটারের প্রথম পছন্দ।
মার্কেট রিসার্চ সংস্থা ইপসোসের ইউএস পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট ক্লিফোর্ড ইয়ংয়ের মতে,
ট্রাম্পের সঙ্গে তার সমর্থকদের বন্ধন খুবই মজবুত, তা ভাঙা যে কারও জন্য কঠিন।
তিনি বলেন, ‘সমর্থকরা বিশ্বকে দেখে ট্রাম্পের চোখ দিয়ে।
তাদের বিশ্বাস, ট্রাম্পের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
রাষ্ট্রীয় গোপন নথির অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ফেডারেল তদন্তে অভিযুক্ত হওয়ার পর বিবিসিকে
দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের এক ভক্ত অ্যারিযোনার ৬১ বছর বয়সী রম সোলেন বলেন,
‘এটি স্পষ্টতই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়ার নির্লজ্জ তৎপরতা।
এই দেশের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক মুহূর্ত এটি।’
ট্রাম্প সমর্থক না হলেও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিউ ইয়র্কবাসী রিপাবলিকান ভোটার লুক গর্ডন।
তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগপত্রের বৈধতা নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। এমনকি আমি ট্রাম্পের কিছু কার্যকলাপকে সমর্থনও করি না।
তারপরও তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারকাজ পরিচালনার উদ্দেশ্য নিয়ে আমার গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে।’
ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান ভোটার ড্যানিয়েল ব্রাউন বলেন, ‘ডিস্যান্টিসকে নিয়ে আমার অনেক উচ্চাশা আছে। তবে ট্রাম্প যতদিন এখানে আছেন, ততদিন আমার কাছে ট্রাম্পই যোগ্য ব্যক্তি।’
ট্রাম্প না থাকলে ডিস্যান্টিসকেই সমর্থন দিতেন বলে জানালেন ওহাইওর স্ট্যনটন স্ট্রোমেন্জার।
সিবিএস নিউজের গত জুনের জরিপে দেখা গেছে, গোপন নথির মামলায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করাকে
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন ৭৬ শতাংশ রিপাবলিকান প্রাইমারি ভোটার।
৬১ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার জানিয়েছেন, এসব মামলার কারণে ট্রাম্পের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গীর কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আর ১৪ শতাংশ বলেছেন, এসব ঘটনার পর ট্রাম্পের প্রতি তাদের মনোভাব আরও ইতিবাচক হয়েছে।
ক্লিফোর্ড ইয়ং বলেন, ‘ট্রাম্পকে নিয়ে দুটি স্বতন্ত্র বুদবুদ তৈরি হয়েছে।
একটি বুদবুদে সবাই ট্রাম্পের আচরণকে অনাচার হিসেবে দেখছে।
আরেকটিতে সবাই ট্রাম্পকে তাদের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখছে এবং ভাবছে যে এই জনপ্রিয়তার কারণেই ট্রাম্পকে নানাভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে।’
এখন তৃতীয় বা চতুর্থবার অভিযুক্ত হলেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে আগামী বছর এসব মামলার বিচারকাজ বা সম্ভাব্য দোষী সাব্যস্ততায় ট্রাম্পের প্রতি এই বিপুল
সমর্থনে প্রভাব ফেলে কিনা- সেটি এখন দেখার বিষয়।
কারণ আগামী বছরের প্রথমার্ধজুড়ে প্রচারকাজ ও বিচারকাজের শিডিউল সামলাতে হিমশিম খেতে হতে পারে তাকে।
এক অনুষ্ঠানে গত শুক্রবার ট্রাম্প বলেছেন, দোষী সাব্যস্ত হলেও নির্বাচনি প্রচারাভিযান চালিয়ে যাবেন তিনি।
এদিকে, টাইমস/সিয়েনার জরিপে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে ট্রাম্প ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেনের মধ্যে জনপ্রিয়তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে।
এখন নির্বাচন হলে কাকে ভোট দেবেন- এর জবাবে ৪৩ শতাংশ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন আর ৪৩ শতাংশ বাইডেনকে পছন্দ করছেন।