আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে রেল যাওয়ার কথা।
কিন্তু গত সপ্তাহের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নির্মাণাধীন রেললাইনের নিচে মাটি ধসে কয়েক জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
এতে করে রেললাইনের নিচের গর্ত দিয়ে এপার থেকে ওপারে সাঁতারও কাটা যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, কোথাও কোথাও রেললাইন দেবে গেছে।
পাথর সরে যাওয়াসহ রেলবিটও খুলে গেছে।
এ অবস্থায় সেপ্টেম্বরে ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী এলাকায় বন্যার পানিতে রেললাইন ডুবে যায়।
টানা অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকা গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে ডুবতে শুরু করে ও মঙ্গলবার ভোরে রেললাইন পানিতে তলিয়ে যায়।
পরদিন বুধবার পানি নামতে শুরু করে।
এরপরই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নজরে আসে।
দেখা যায়, প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আদার মায়ের মাজার থেকে পাঠানপুল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রেললাইন।
অন্তত ১০টি অংশে রেললাইন থেকে একেবারে পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
বন্যায় পাথর পাশের জমিতে গিয়ে পড়েছে। রেললাইন দেবে গেছে, রেলবিটও উঠে গেছে।
চলাচলের আগে এমন উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য অপরিকল্পিত রেলপথ নির্মাণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ ও এলাকাবাসী।
তারা বলছেন, ছোট ছোট যে কালভার্ট রাখা হয়েছে, সেগুলো পানিনিষ্কাশনের জন্য যথেষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেললাইন নির্মানের সময় এখানের অবস্থা বিবেচনায় নেয়া দরকার ছিল।
যে অঞ্চলে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখান দিয়ে বান্দরবানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে এসে সাগরে গিয়ে পড়ে।
এখন রেললাইন করার ফলে পানিনিষ্কাশনের পথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এতে বন্যার ব্যাপকতা বেড়েছে। মানুষকে যেমন ভুগতে হচ্ছে, তেমনি রেলের সম্পদ নষ্ট হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এলাকায় এমন ভয়াবহ বন্যা হয়নি।
রেললাইনের কারণে পানিনিষ্কাশনের পথ আটকে যাওয়ায় তাদের এলাকার বাড়িঘর ডুবে গেছে।
যদি রেললাইনে পর্যাপ্ত কালভার্ট বা সেতু নির্মাণ করা হতো, তাহলে এত ক্ষতি হতো না।
গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রেলওয়ের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করে বলেন, এক কিলোমিটারজুড়ে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করা যাবে।
তাই নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চালু নিয়ে সমস্যা হবে না।
বন্যার পানিতে রেললাইনের এ অবস্থার কারণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং তা সংস্কারে কত অর্থ ব্যয় হবে, তা এখনো পরিমাপ করা হয়নি বলে জানান তারা।
এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার রেললাইনে ২৪৫টি কালভার্ট ও ৩৯টি ব্রিজ নির্মাণের কথা জানালেও
আদার মা মাজার থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত দুই কিলোমিটারজুড়ে মাত্র দুটি কালভার্ট দেখা গেছে।
এসব কালভার্টের নিচ দিয়ে পানি খুব কমই নামছে। এতে দু-এক দিনের বৃষ্টিতে পানি জমে বাড়ি ঘরে উঠে যাচ্ছে।