ঋণের ফাঁদে আত্মহত্যা নিয়ে ১১ অক্টোবর বিবিসি একটি
প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে ভূমি সিনহার কথা উঠে এসেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ভারতসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও
লাতিন আমেরিকার প্রায় ১৪টি দেশে দ্রুত ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ফাঁদ দেখিয়ে অবৈধ ব্যবসা চলছে।
ভারতে এই ফাঁদে পা দিয়ে নির্যাতন আর অপমানের শিকার হয়ে অন্তত ৬০ জন আত্মহত্যা করেছেন।
এসব অ্যাপ থেকে যারা ঋণ নিতেন, তাদের কাছ থেকে
বাড়তি টাকা চাওয়া হতো।
টাকা না দিলে ফটোশপ করে নগ্ন ছবি পরিচিতজনদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হতো।
বিবিসি বলছে, অ্যাপটি চালু করার সময়ই মানুষের ফোনে থাকা নম্বর ও অন্যান্য তথ্যে প্রবেশাধিকার নিয়ে নিত।
ভূমি সিনহার এমন একটি বানানো ছবি তার সহকর্মীদের
কাছে পাঠানো হয়েছিল, যা তাকে আত্মহত্যার দিকে
ঠেলে দেয়।
ভুক্তভোগীরা লজ্জায় কাউকে বলতে পারতেন না। অপরাধীরাও ছিলেন অদৃশ্য।
বিবিসির প্রতিবেদনটিতে বলা হয়,
এসব অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঋণের টাকা উদ্ধারের জন্য কল সেন্টার নিয়োগ দেয়।
কল সেন্টারের কর্মীরা দাবি করা টাকা পরিশোধের জন্য অশ্লীল ভাষা ব্যবহার ও হুমকি দিয়ে থাকেন।
অ্যাপভিত্তিক ঋণের ব্যবসায় চীনের কিছু নাগরিকের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে বিবিসি।
বাংলাদেশে ঋণের অ্যাপগুলোর ব্যবহার কতটা বাড়ছে,
তা জানা যায় ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সিমিলারওয়েবে।
তারা বাংলাদেশের যেসব আর্থিকবিষয়ক অ্যাপকে জনপ্রিয়
হিসেবে উল্লেখ করেছে, সেগুলোর মধ্যে অন্তত ৩২টি বাংলাদেশে অবৈধ।
ক্যাশ বক্স, হ্যাপি মানি, কুইক অ্যান্ড সেফ, লোন ট্রাই,
গাইড লোন ইত্যাদি অ্যাপ রয়েছে এই তালিকায়।
বাংলাদেশে অনুমোদনহীন ঋণ বিতরণ, অনলাইন জুয়া,
অনুমোদনহীন ফরেক্স ট্রেডিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন
নিষিদ্ধ।
নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান বাদে কেউ আর্থিক লেনদেন সেবার প্ল্যাটফর্মও চালাতে পারে না।
কিন্তু অ্যাপে ঋণ, জুয়া ও ফরেক্স ট্রেডিং—সবই চলছে।
যেমন তিন পাত্তি নামের একটি খেলার অ্যাপের বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘৪০০ টাকা ভরেছি ওয়ালেটে, ১ লাখ টাকা উত্তোলন করেছি’।
নিচে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের তিনটি জনপ্রিয় মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের লোগো লাগানো।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনের আদালতে চলতি বছরের
ফেব্রুয়ারিতে ৩৪ কোটি ডলারের পঞ্জি স্কিম চালানোর দায়ে
ফোরসেজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চার প্রতিষ্ঠাতাকে অভিযুক্ত করা হয়।
এই বহুস্তর বিপণন বা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের
নামে বাংলাদেশে অনেকগুলো ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে,
যার একটি ‘ফোরসেজ আইও বাংলাদেশ’।
এই গ্রুপের সদস্যসংখ্যা প্রায় ৬৭ হাজারের বেশি।
তাছাড়া ‘সান ওয়ালেট সিকিউর লোন’ নামের একটি অ্যাপ
ব্যক্তিপর্যায়ে ৬ থেকে ২৪ শতাংশ সুদে ৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের প্রস্তাব দিচ্ছে।
অ্যাপটি চলতি বছরের এপ্রিলে গুগলের প্লে স্টোরে আসে।
এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে।
মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ ইনকরপোরেটেড নামের
একটি প্রতিষ্ঠান দেশের মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিপুল অর্থ
হাতিয়ে নিয়ে চলে গেছে বলে গত আগস্টে অভিযোগ ওঠে।
২৯ আগস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়।
সেখানে এ ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তও হয়।
টাস্কফোর্স গঠনের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গনমাধ্যমকে বলেন, কাজ চলছে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ছয় হাজার জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে।
তবে আশপাশের দেশের জুয়ার অ্যাপের বিজ্ঞাপন অনলাইনে বাংলাদেশে চলে আসছে।
মানুষ লোভের বশে কোনো কিছু যাচাই না করেই এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
বিটিআরসি আরও জানায়, গত ৯ মাসে আর্থিক প্রতারণা,
জুয়া বা অনলাইন বেটিং-সংশ্লিষ্ট ১ হাজার ৯৪৭টি ওয়েবসাইট ও ৪৮টি অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জুয়ায় প্ররোচিত
করা হয়, এমন ২ হাজার ৫টি ফেসবুক লিংক এবং
৪৩২টি ইউটিউব লিংক অপসারণ করা হয়েছে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি বন্ধ হলে অন্য আরেকটি চলে আসছে। মানুষ ফাঁদে পা দিচ্ছেন।