নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদকে (বাঁয়ে) মারধরের মামলায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ এরফান সেলিমকে আজ দুপুরে রাজধানীর চকবাজার এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব।
এদিকে গ্রেফতারকৃত মামলার অপর আসামী সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে এক দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমানের আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে এরফান সেলিমের চকবাজারের আট তলা ভবনে দুপুর থেকেই তল্লাশি চালান র্যাবের সদস্যরা। আট তলা বাড়ীর প্রতিটি ভবনে চলে র্যাব সদস্যদের চিরুনি অভিযান। সন্ধ্যার পর পর্যন্ত একটানা অভিযান পরিচালিত হয়।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, তল্লাশীতে অবৈধভাবে মজুত রাখা ভবনের বিভিন্ন ক্যাবিনেট থেকে বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া তার শয়নকক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ ওয়াকিটকি, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও একটি অস্ত্র উদ্ধার করা, হাতকড়া উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত বিভন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস গুলো কিছু সংযোগ অবস্থায় এবং বিপুল পরিমান ওয়াকিটকি সহ ডিভাইস সংযোগবিহীন জব্দ করেন অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব সদস্যরা।
প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে উদ্ধারকৃত অবৈধ ডিভাইস দিয়ে ঢাকা শহরের কৌশলগত বিভিন্ন পয়েন্টের সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রন ও তথ্য সংগ্রহ করা হতো। তবে এ বিষয়ে বিষদ জানা যাবে বলে জানান র্যাব সূত্র।
উল্লেখ্য যে, এর আগে গতকাল রোববার রাতে এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ‘সংসদ সদস্য’ লেখা সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। রাজধানীর কলাবাগান সিগন্যালের পাশে এ ঘটনা ঘটে। রাতে এ ঘটনায় জিডি হলেও আজ (সোমবার) ভোরে হাজী সেলিমের ছেলেসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এজহারে ওয়াসিফ আহমেদ উল্লেখ করেছেন, তিনি ও তার স্ত্রী মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা সামলে সড়কের পাশে মোটরসাইকেল থেকে নেমে গাড়িটির সামনে দাঁড়ান ওয়াসিম। তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে গাড়ি থেকে জাহিদ ও আবু বক্কর সিদ্দিকসহ আরও ২-৩ জন তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। তাকে ও তার স্ত্রীকে হত্যার হুমকিসহ তুলে নেয়ার হুমকি দেয় তারা। তারা মারধর করে ওয়াসিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যান। তার স্ত্রী, স্থানীয় জনতা এবং পাশে ডিউটিরত ধানমন্ডির ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
জানা যায়, মামলায় মোট পাঁচটি ফৌজদারি অপরাধের ধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপরাধগুলো হলোঃ
দণ্ডবিধি ১৪৩ অনুযায়ী বেআইনি সমাবেশের সদস্য হয়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধমূলকভাবে বল প্রয়োগ করা,
৩৪১ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করা,
৩৩২ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার কাজে বাধাদানের উদ্দেশ্যে আহত করা,
৩৫৩ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার ওপর বল প্রয়োগ করা এবং
৫০৬ ধারায় প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া।
এর আগে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিমকে মারধররের ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ২৬ অক্টোবর, সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান মন্ত্রী।
সরষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত গনমাধ্যমকে আরও বলেন, “কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সে যেই হোক। সে জনপ্রতিনিধি হোক বা যেই হোক। আইনের মুখোমুখি হতেই হবে।’
এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাজী সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ এরফান সেলিমকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সোমবার দুপুরে থেকে এরফান সেলিম র্যাব হেফাজতে রয়েছেন। এদিকে হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে এক দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে সাংসদ হাজী সেলিমের পুত্র ও কাউন্সিলর এরফান সেলিমের ভবনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এধরনের অভিযানে পুরো চকবাজার এলাকায় জনসাধারণের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কারন এরফান সেলিম একাধারে একজন বর্তমান সাংসদের পুত্র এবং নোয়াখালীর একজন বর্তমান সাংসদের জামাতা। অত্যন্ত প্রভাবশালী এমন একজনের বাড়ীতে র্যাবের অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সাধারন মানুষ।
