আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ করায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামে জেলা ও খুলশী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবরে পাঠিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (আইন) মো. আব্দুছ সালাম।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এনামুল হক সাংবাদিকদের জানান, ইসি’র নির্দেশনা পেয়েছি। খুলশী থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। আমরা পাবলিক প্রসিকিউটরের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কবে নাগাদ মামলা করা হবে সেটা নির্ধারণ করবো। মামলা দায়েরের প্রাথমিক প্রস্তুতি আমাদের আছে।
নগরীর হালিশহর, ডবলমুরিং, খুলশী, পাহাড়তলী, আকবর শাহ ও পাঁচলাইশের একাংশ নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন। মোট প্রার্থী ৯ জন। এর মধ্যে প্রচার-প্রচারণায় সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছেন তিন প্রার্থী- নৌকার মহিউদ্দিন বাচ্চু, ফুলকপি প্রতীকে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম এবং কেটলি প্রতীকে ফরিদ মাহমুদ।
গত ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরের আসনসমূহের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে চিঠি দিয়ে বাচ্চুর বিরুদ্ধে টাকা বিলির অভিযোগ আনেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলম। এতে বলা হয়, গত ২২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের আগে বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু চট্টগ্রাম-১০ আসনের সকল মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ব্যক্তিগতভাবে এক হাজার টাকা করে দেন। এছাড়া ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের মাদানি মসজিদে এক লাখ টাকার একটি চেক দেন যা ওই মসজিদের ইমাম জুমার নামাজের আগে খুতবায় মুসল্লিদের অবহিত করেন। একইভাবে ২৪ ডিসেম্বর লালখান বাজারে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ৬০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা এম মনজুর আলমের অভিযোগ তদন্তের জন্য নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠান। কমিটির তলবে মহিউদ্দিন বাচ্চু গত ২৮ ডিসেম্বর প্রতিনিধির মাধ্যমে অভিযোগের জবাব দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এসব অনুদান সরকারিভাবে বরাদ্দ হওয়া বলে তিনি দাবি করেন।
অন্যদিকে কমিটি অভিযোগকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী এম মনজুর আলমকেও অভিযোগের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের জন্য নোটিশ দেয়। তিনি অভিযোগের সমর্থনে স্থিরচিত্র, অনুদানের অর্থ বিতরণের খামের কপি ও মসজিদে বৈঠকের ৬টি ছবি দাখিল করেন। এরপর কমিটির পক্ষ থেকে নগরীর হালিশহরের নতুনবাজার জামে মসজিদ, নয়াবাজার ও আব্বাস পাড়া (মাদানি) জামে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ক্যাশিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সাক্ষ্য এবং নিজস্ব অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে গত ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠায় কমিটি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে জানিয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম ও জেলা জজ নাজমুল হোসেন প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।
এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনকে সরকারি অনুদানের চেক দিয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চু সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ অবস্থায় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অ-আমলোযোগ্য অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

 
 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                     
 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                