এই ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী যুদ্ধে আজারবাইজান জয়ী হয়েছে। আজারবাইজানের সকল শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে আরমেনিয়া। আরমেনিয় অর্থডক্স খৃষ্টানদের শত শত বছরের তুর্কী বিদ্বেষ, ইসলামোফোব ঘৃণা আর বিশ্বাসঘাতকতার এটা ছিল অবসানের শুরু। ২৮ বছর আগে নগরনো কারাবাখ হতে ৮০ লক্ষ্ তুর্কী বংশোদ্ভুত আজারবাইজানী মুসলমানকে নির্মম ভাবে উচ্ছেদ (বাস্তবিক পক্ষে এটা ছিল এথনিক ক্লিনসিং এর একটা টেক্সটবুক ভার্সন) এর পরিপূর্ণ, ন্যায্য ও ন্যায়ানুগ প্রতুত্তর। বিজয়ী হয়েও আজারবাইজান প্রতিশোধে লিপ্ত হয় নাই- নগরনো কারাবাখের আদি নিবাসী আরমেনীয়দের তারা উচ্ছেদ করবে না।
আজারবাইজানের মূল শর্তগুলো যা আরমেনিয়া মেনে নিয়েছে সেগুলো হলঃ
১) নগরনো কারাবাখ এবং অন্যান্য আজেরী ভূমির অপদখল হতে সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত প্রত্যাহার।
২) নগরনো কারাবাখে যুদ্ধরত বিদ্রোহী আরমেনীয় সেনা ইউনিট ও সরকারের আজেরী বাহিনীর নিকট জেনেভা কনভেনশন ও সেইফ কন্ডাক্টের অধীনে আত্মসমর্পণ।
৩) আজারবাইজানের বিচ্ছিন্ন নাকিচেভান প্রদেশের সাথে নাগরনো কারাবাখের করিডোর প্রদানে আরমেনিয়ার বাধ্যবাধকতা স্বীকার করা।
৪) আরমেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে রাশিয়ান ও তুর্কী শান্তিরক্ষীবাহীনির মিশণ স্বীকার করে নেয়া।
তুরস্ক ও রাশিয়া কি অর্জন করল?
বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে কোন সংঘাত হলে তা দুটি দেশকেই ব্যপকভাবে দূর্বল করে দিবে। তাই আজারবাইজানীদের তারা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে নগরনো কারাভাখ ও অন্যান্য অপদখলীয় জমি হয়ে আরমেনিয়াকে প্রত্যাহারে বাধ্য করার বিনিময়ে আজেরীরা যেন যুদ্ধকে আরমেনিয়ার সীমান্ত প্ররযন্ত টেনে না নেয়। তাহলে আড়াইয়া ও আরমেনিয়ার প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। এই শান্তিচুক্ত্র মাধ্যমে আজারবাইজানের রাজনৈতিক ও জাতী উদ্দেশ্য পূর্ণতা পেল। তুরস্ক তার প্যান টার্কিক রিসার্জেন্সকে বিজয়ী করল। রাশিয়া যুদ্ধ এড়ালো এবং বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তুরস্কের সাথে কৌশলগত একতাকে বজায় রাখতে সক্ষম হল।
ইরানের প্রাপ্তি কি?
ইরানের আজারবাইজান সীমান্তবর্তী আজেরী অধ্যুসিত প্রদেশগুলোতে প্যান টার্কিক জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে পড়া হতে রক্ষা পেল। কারন আজারবাইজান ও তুরস্ক এই বিষয়ে ইরানকে আগেই নিশ্চয়তা দিয়েছিল। মার্কিন ও ন্যাটোর পূর্বমুখী বিস্তার ও পারস্য উপসাগরে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তুর্কী-পারসীক-রুশী সহযোগীতার পথ উন্মুক্ত থাকল।
আরমেনিয়রা কেন মেনে নিল?
১) কারন তারা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম নয়।
২) শান্তিচুক্তির ফলে তারা আরমেনিয়ার মূল ভূখন্ডে আজারবাইজানী ও তুর্কী আগ্রাসনকে এড়াতে পারল।
৩) স্বান্তনা পুরস্কার হিসাবে তারা নগরনো কারাবাখে আত্মীয় স্বজনদের বেসামরিক যাতায়াতের জন্য একটি করিডোর পেয়েছে। আর আজারবাইজান নগরনো কারাবাখের বহুজাতিক বৈশিষ্টকে মেনে নিয়েছে এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন দিতে সন্মত হয়েছে।
যুদ্ধের জয় অনেকভাবেই হয়। জয়ী সেইপক্ষ যাদের রাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত স্বার্থ উদ্ধার হবে তারাই জয়ী। উদাহরন স্বরূপ, অনেকসময় একটি ছোট রাষ্ট্রও আগ্রাসনের মুখে যদি বৃহৎ শক্তিকে যুদ্ধক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা (Stalemate) মেনে নিতে বাধ্য করতে পারে তাহলে ওই ছোট দেশটির রাজনৈতিক-সামরিক উদ্দেশ্য সফল হয় এবং সে বিজয়ের দাবীদার হয়। যুদ্ধের হাতিয়ার শুধুই অস্ত্র নয়, কূটনীতি ও আন্তর্জার্তিক সম্পর্কের উপরেও অনেকাংশে নির্ভরশীল।
