মোট আক্রান্ত ৯,৯৯,০৪৩ জন, মোট মৃত্যু ৩৪,২১০ জন। তথ্যটি এতটুকুতে থাকলে করোনা পরিস্থিতিতে কোন নতুন কিছু ছিলো না ইউরোপের কোন দেশের জন্য। কিন্তু করোনার প্রাথমিক স্তরের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে ২য় প্রবাহে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত ৪১,৬২২ জন এবং নতুন করে মৃত্যু ১৬২ জন, এ সংখ্যাটি অবশ্যই কপালে ভাঁজ ফেলে চিন্তিত হবার মতো বিষয়।
পাঠকরা, উল্লেখিত তথ্যগুলো ফ্রান্সের গত ২৪ ঘন্টা সমেত করোনা উপাত্ত তথ্য। তবে আরো ভীত করে তুলেছে ICU তে ভর্তি হওয়া রোগীদের সংখ্যা নিয়ে। শুধু গত এক সপ্তাহে ICU তে ভর্তি হয়েছেন ১৫৮৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। যা কিনা ফ্রান্সের মোট ভ্যান্টিলেটরের এক তৃতীয়াংশ। ফান্সে মোট ভ্যান্টিলেটরের সংখ্যা ৫০০০।
অন্যদিকে, করোনার সেকেন্ড ওয়েভ থেকে নিজেদের বাঁচাতে আয়ারল্যান্ডে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ৬ সপ্তাহের জন্য লকডাউন। লকডাউন দেবার চিন্তা করছে জার্মান, ইতালি, স্পেন এর মতো দেশগুলো। ফ্রান্স সরকার তার দেশে কারফিউর পরিধি বাড়াতে যাচ্ছে। আরও ৩৩ টি শহরে আজ সন্ধ্যা (ফ্রান্সের সময়) ০৭:০০ কিংবা কাল থেকে কারফিউ কার্যকর হতে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাক্রো করোনা সংস্পর্শে এসে ৭ দিনের কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এমনিতেই প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো তার স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাক্রোকে নিয়ে খুব একটা বের হতেন না। কিন্তু গত ১৫ ই অক্টোবর তিনি এমন এক ব্যক্তির সংস্পর্শে ছিলেন যার করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে আজ ১৯ শে অক্টোবর। এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের উপসর্গ না থাকলেও, ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাক্রো আজ ৭ দিনের জন্য স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন।
জানা যায়, করোনার প্রথম ধাপে আলাদা আলাদা বা একজন দুজন ব্যাক্তি করোনায় আক্রাস্ত হতেন কিন্তু ২য় ধাপে এসে আক্রান্ত হচ্ছেন দলে দলে যেটাকে বলা হয় Cluster।
ফরাসী সরকারের একজন প্রভাবশালী সদস্যের ভাষ্যমতে কারফিউর পরিধি রাত ৯ টার থেকে সন্ধ্যা ৭ টার থেকে শুরু হতে পারে যদি আগামী সপ্তাহে পরিস্থিতি উন্নতি না হয়। তবে ফরাসি জনগণের একটি বড় অংশ পুনরায় লক-ডাউনের পক্ষে। তারা চায় যে করেই হোক বড়দিনের আগে পরিস্থিতি যাতে উন্নতি হয়।
মঙ্গলবার দুপুর ২ টা থেকে বুধবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ২৮৪ জন ICU তে ভর্তি হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ১৫৮৪ জন ICU তে ভর্তি হয়েছে। এই দুইটি পরিসংখ্যানই খুব আশংকা জনক।
ফ্রান্সে আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে। সব মিলিয়ে এখন ২২৩৯ ICU তে চিকিৎসাধীন আছে। ফ্রান্সে ICU এর ধারণ ক্ষমতা ৫০০০ রোগীর। অর্থাৎ ধারণ ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক করোনা রোগীতে ভোরে গেছে। অন্য রোগী তো আছেই। গত মার্চের শেষের থেকে এপ্রিলে প্রথম দিকে সর্বোচ্চ ৭০০৪ জন ICU তে চিকিৎসাধীন ছিল। ওটাই ছিল পিক টাইম। এরপরই কমতে শুরু করে এখন আবার বাড়তির দিকে।
গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ১৬২ জন যা আরেকটি আশংকার কথা। গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ১৪০ জনের উপর মারা যাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৪১,৬২২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। চিত্রটি আঁতকে দেবার জন্য যথেষ্ঠ। যে পরিমান করোনা টেস্ট হচ্ছে তার ১৩.৭% পজিটিভ হচ্ছে।
আশংকাজনক আরেকটি খবর হলো ফ্রান্সে “Cluster” নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বেড়েই চলছে “Cluster”। বিশেষ করে কফি শপ, বার গুলোতে যাওয়া মানুষদের মধ্যে Cluster তৈরী হচ্ছে কল্পনাতীত ভাবে। কারন এ ধরনের স্থানগুলোতে মাস্ক ব্যবহার হচ্ছে কম। বর্তমানে ১৮৫২ টি “Cluster” পর্যবেক্ষণে আছে। তবে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে “Cluster” ছড়াচ্ছে কম। কারন ফ্রান্সে বাহিরে গেলে রাস্তায়, ট্রান্সপোর্টে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যমূলক।
করোনার সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হওয়া ইউরোপের দেশ ইতালির প্রধানমন্ত্রী গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মাস্ক পরিহিত অবস্থায় এক ভাষণে বলেন, ‘আমরা সময় নষ্ট করতে পারি না, অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ঢালাও লকডাউন এড়াতে এখনই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।’
করোনার প্রথম ধাপে বিশ্বে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রানহানী ঘটেছিলো ইউরোপের দেশগুলোতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ করোনার প্রাথমিক ধাপে থাকতেই গোটা বিশ্বকে হুঁশিয়ারী দিয়েছিলো ২য় প্রবাহ কতটা ভংঙ্কর হতে পারে।
