ছাত্রলীগের সশস্ত্র মহড়ায় ফের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সিলেটের পূর্বাঞ্চলের প্রবেশমুখ টিলাগড়ে। স্থানীয়রা উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। মঙ্গলবার রাতভর টিলাগড় এবং পার্শ্ববর্তী এমসি ও সরকারি কলেজের ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি মহড়া হয়েছে। এ সময় ছাত্রলীগের বিবদমান দু’গ্রুপের কর্মীদের মুখোমুখি সংঘাতে কয়েকজন ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। রাতের মহড়ায় কলেজের ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। সিলেটের টিলাগড়কে বলা হয় ছাত্রলীগের হেডকোয়ার্টার। পাশেই এমসি ও সরকারি কলেজ। এ কারণে টিলাগড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ছাত্রলীগের গ্রুপ-উপগ্রুপের নেতারা সংঘর্ষে জড়ায়। হয় খুন-খারাবিও। দেড় বছর আগে ছাত্রলীগের গ্রুপিং-কোন্দলে খুনের ঘটনা ঘটে।এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের কড়াকড়ি ভূমিকার কারণে শান্তি ফিরে আসে। গত কয়েকদিন ধরে ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে টিলাগড়। এখন টিলাগড়ে কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ গ্রুপের ছাত্রলীগের শক্তি নেই। নেতারা থাকলেও নীরব রয়েছেন। টিলাগড় এখন একাই শাসন করছেন আওয়ামী লীগ নেতা রণজিৎ বলয়ের কর্মীরা। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম এই গ্রুপেরই নেতা। ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল বর্তমানে ব্যক্তিগত কাজে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। এই সুযোগে রণজিৎ বলয়ের নেতারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন।
ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বিরোধের নেপথ্যে রয়েছেন সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ও সিটি কাউন্সিলর রুহেল আহমদ ও এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন রাহী। টিলাগড়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উভয় গ্রুপের নেতারা দ্বন্দ্বে জড়ান। তুহিন ও সৌরভ নামের দুই ছাত্রলীগ কর্মীর মধ্যে সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের রাহী গ্রুপের কর্মীরা টিলাগড় এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় সশস্ত্র অবস্থায় তারা মহড়া দিতে থাকে। একই সময় ছাত্রলীগের রুহেল গ্রুপের কর্মীরাও ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। প্রকাশ্যে দা, রামদা নিয়ে তারাও মহড়া দেয়। বিবদমান দু’পক্ষের মহড়া, পাল্টা মহড়ায় টিলাগড়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। রাতে গোপালটিলা এলাকা, এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ও সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়া হয়। এ সময় চোরাগুপ্তা হামলায় অন্তত ৭ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। কলেজ হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, রাতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষই ছাত্রাবাস ও ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। এ সময় এক পক্ষ আরেক পক্ষের নেতাকর্মীদের খুঁজে খুঁজে মারধর করে। এ কারণে ছাত্রাবাসে অবস্থানরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে পুলিশ এলে ছাত্রলীগ কর্মীরা চলে যায়। এদিকে এ ঘটনার পর রণজিৎ বলয়ের সিনিয়র নেতারা সরব হয়েছেন। তারাও বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। তারা জানিয়েছেন; এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাহী ও তার অনুসারীরা নিয়ন্ত্রণ করে। আর কাউন্সিলর রুহেল গ্রুপের কর্মীরা সরকারি কলেজ নিয়ন্ত্রণ করে। রুহেল সরকারি কলেজের ছাত্রও। এখন এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সরিয়ে দুটি ক্যাম্পাস একসঙ্গে দখলে নিতে মরিয়া। এ কারণে এই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।
নেতারা জানিয়েছেন, রাহী ও রুহেল গ্রুপের নেতারা রণজিৎ গ্রুপের কর্মী। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম তাদের নেতা। কিন্তু নাজমুল দেশের বাইরে অবস্থান করার সুযোগে তারা শক্তি প্রদর্শনে নেমেছেন। এই বিরোধের জের ধরে রণজিৎ বলয়ের নেতাদের মধ্যে টিলাগড় ও মেজরটিলাকেন্দ্রিক দুটি উপ-বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। রাহীর সঙ্গে টিলাগড় উপ-বলয়ের নেতারা আর রুহেলের পক্ষে মেজরটিলার উপ-গ্রুপের নেতারা এক হয়েছেন। ফলে ছাত্রলীগের এই বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করছে বলে জানান তারা। সিলেটের শাহপরান থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। পরে পুলিশ গিয়ে শান্ত করেছে। তবে কেউ আহত হওয়ার খবর পাননি বলে জানান ওসি। এদিকে- এ ঘটনায় বিব্রত সিলেট ছাত্রলীগের নেতারা। আংশিক কমিটি দিয়ে দুই বছর চলার পর বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে জেলা ও মহানগরের নেতারা দুটি কমিটি কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছেন। এই অবস্থায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।