ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধে শাস্তি মৃত্যুদন্ডকে নিষ্ঠুর সাজা বলে বিবৃতি দিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলে। তিনি বলেন, মৃত্যুদন্ডের ফলে অপরাধ থামছে না তাই ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বন্ধে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডকে সমাধান বলা যায় না।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ধর্ষণকারী, নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। তবে মৃত্যুদণ্ড সমাধান নয়।
মৃত্যুদণ্ড নিষ্ঠুর সাজা উল্লেখ করে ব্যাচেলে বলেন, “এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধ যারা করে, তাদের শাস্তি দিতে গিয়ে নিষ্ঠুর আইন করে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরও পথ খুলে দিতে পারি না।”
বিবৃতিতে মিশেল ব্যাচেলে বলেন, ‘বাংলাদেশ, মরোক্কো, আলজেরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়াসহ যেসব দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তাতে জনমনে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে প্রকৃত বিচার আমিও চাই। কিন্তু কিছু দেশ এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করায় আমি উদ্বিগ্ন।’
বাংলাদেশে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে সম্প্রতি সরকার সর্বোচ্চ সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করেছে। এরপরই এমন উদ্বেগ জানালেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, এখনো এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, মৃত্যুদণ্ডের ফলে অপরাধ একেবারে থেমে গেছে। তাই মৃত্যুদণ্ড একমাত্র সমাধান নয়।
মৃত্যুদণ্ডই সমাধান, এটা বলছেন না বাংলাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরাও। তারা বিচারে দেরি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণ না হওয়া, সাক্ষ্য আইনের দুর্বলতাসহ নানা বিষয় তুলে ধরছেন।
বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, তারা মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি দ্রুত বিচারের বিষয়েও উদ্যোগী হচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মূল সমস্যা হল, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ভিকটিমরা শুরুতেই আইনের আশ্রয় পান না। সেটা কখনও সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে, কখনও আরও ক্ষতির আশঙ্কায়। কখনও সমাজের গভীরে প্রোথিত লিঙ্গ বৈষম্য আর ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার কারণে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন অন্য কথা। পাকিস্তানের প্রখ্যাত জার্নালিষ্ট আকবর খোরেশী বলেন, “মানবাধিকার সংস্থা গুলোকে তখন কথা বলতে শোনা যায়না উদ্বিগ্ন হতেও দেখা যায় না যখন একজন নারী ধর্ষকদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন, খুন হয়ে যাচ্ছেন এমনকি পুরো পরিবার লন্ডভন্ঠ হয়ে যাচ্ছে। কৈ কোন মানবাধিকার কোন সংস্থাকে দেখি না তারা কোন ধর্ষনে নীপিরীত কোন নারীকে কিংবা তার পরিবারের দায়িত্ব নিচ্ছেন, আর যাও নিচ্ছে তা বিশাল সাগরে এক ফোঁটা পানির মতো। বরং এ ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড একমাত্র শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।”
