‘সাধারণ মানুষ কী খাবে বলে দেন সরকার।
খাবারের লিস্ট দিয়ে দেন, আমরা কী খাব—আর পারছি না রাষ্ট্র।’
গতকাল রোববার সকালে ফেসবুকে এমন একটি পোস্ট দেন দেশের চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানী।
তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
মানুষ বাঁচবে কীভাবে। খাবেটা কী? এমনটা তো ছিল না। কেন এমনটা হলো। বাধ্য হয়েই লিখলাম।’
আপনার এই উপলব্ধি কত দিনের?এমন প্রশ্নের উত্তরে উমর সানী বলেন, তা হচ্ছে,
‘এটা তো অনেক দিনের।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসার শুরুতে যে মেনু তৈরি করেছি ৩২ টাকায়, পাঁচ থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে তা এখন ৭০-৭৫ গেছে।
ভারতীয় গরুর মাংস তো বিক্রি করতে পারি না।
দেশি গরুর মাংস দিতে হয়। কারণ, আমি নিজে যেটা খেতে পারব না, সেটা তো অন্য মানুষদের খাওয়াতে পারব না।
বাড্ডার যেখান থেকে গরুর মাংস নিতাম, শুরুতে ৫৫০ টাকা কেজি, সেটা এখন ৮০০ টাকা কেজিতে দাঁড়িয়েছে!’
কথায় কথায় ওমর সানী বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, আল্লাহ আমাদের ইলিশ মাছ দান করেছেন।
এটা চাষ করা লাগে না। অনেকটা গাজীপুরের শালবনের মতো।
আমরা দুজন আয় করা মানুষ, সেই আমাদের যদি এত হিসাব করে চলতে হয়, এ দেশের আর সাধারণ মানুষেরা কী অবস্থায় আছে!
ভাবলেই যেন অস্থির লাগে। দম বন্ধ হয়ে আসে।
একসময় পাঙাশ মাছ ছিল গরিবের খাবার। সস্তা।
সেই পাঙাশের দামও এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে, কেজি ২০০ টাকার ওপরে।
এদিকে ইলিশ কলকাতায় গিয়ে নাকি এক হালি পাওয়া যায় এক হাজার টাকার মধ্যে।
যে ইলিশের জন্ম আমাদের এখানে, সেটা তো আমরা পুঁটি মাছের দামে পাব, তাই না।
কিন্তু হচ্ছেটা কী, ইলিশের দাম যেন আগুন, হাত দেওয়া যায় না!
আমার দেশের রাজশাহীর আম যদি আমেরিকায় ২০ ডলারে কিনতে হয়, তাহলে মেনে নেওয়া যায়।
কারণ, আমেরিকায় গিয়ে খাচ্ছি। এটা স্বাভাবিক, সেটাও বুঝি।
কিন্তু বিষয়টা মোটেও এমন না যে আমরা কিছুই বুঝি না।
স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সাধারণ ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আমাদের যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পাওয়ার কথা,
সেসব নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কেন!’
ওমর সানী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। একদমই বাইরে।
আমরা ভাই দল করি না, কিছুই করি না।
রাষ্ট্র কে চালাইল, কীভাবে চালাইল, সেটাও আমাদের দেখার বিষয় নয়।
আমরা চাই, রাষ্ট্র আমাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দিক।
আমরা একেবারে সাধারণ মানুষ। নিজেদের ভিআইপি মনে করি না।
রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ বলতে পারেন। এই রাষ্ট্র আমার, আমার বাপের, আমার চৌদ্দগুষ্টির।
তো রাষ্ট্র কেন আমাদের পরিচালনা করতে ব্যর্থ হবে!
মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে কেন জিম্মি থাকতে হবে রাষ্ট্রকে।’
সবশেষে ওমর সানী বলেন, ‘রাষ্ট্রের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনি আমাকে খাটান।
আপনাকে আমি শতভাগ ট্যাক্স দেব।
কর্মের দক্ষতায় কাজ করে খাব। কোনো অপরাধ করলে শাস্তিও দেবেন। কোনো সমস্যা নাই।
কিন্তু যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঘিরে আমার বা আমাদের সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা, তা তো আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে।
এটা অবশ্যই সম্ভব। রাষ্ট্র চাইলে এক তুড়িতে এসব সিন্ডিকেট দূর করতে পারে।
আন্তরিকভাবে চাইলে, দেশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীকে শান্তিতে রাখতে পারে।
আমার বয়স তো আর কালে কালে কম হইল না।
৫০ পার করছি বহু আগে।
এই রাষ্ট্রকে জন্মের পর থেকে দেখে আসছি। রাষ্ট্র চাইলে সবকিছুই সম্ভব।’