ঢাকাশনিবার , ২১ নভেম্বর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যৌতুকের জন্য এমন রোমহর্ষক বর্বরতার ই‌তিহাস হ‌য়ে থাক‌বেন রাঙ্গু‌নিয়ার গৃহবধূ!

‌দৈ‌নিক অপরা‌জিত বাংলা।
নভেম্বর ২১, ২০২০ ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

‘তোর বিষ কমাচ্ছি’ বলেই ইয়াসমিনের যোনি ও পায়ুপথসহ পুরো নিম্নাঙ্গে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন স্বামী।

শরীর ভর্তি দাউদাউ করে জ্বলন্ত লেলিহান শিখা। ৮ বছরের সংসার এবং ৫ বছর বয়সী সন্তানের দোহাই দিয়ে অসহায় ইয়াসমিন স্বামীর কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও স্বামী রাফেলের তাতে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই।

যৌতুক চেয়ে না পেয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া এক পাষন্ড স্বামীর বিরুদ্ধে পেট্রল ঢেলে স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড গোয়ালপুরা গ্রামের সন্দ্বীপপাড়া এলাকায় শুক্রবার (২০ ন‌ভেম্বর) ভোরে এই ঘটনা অমান‌বিক, রোমহর্ষক ঘটনা‌টি ঘটেছে। ওই নারী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে।
ওই গৃহবধূর শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক ব‌লে হাসপাতাল বার্ণ ইউনিট সূ‌ত্রে জানা যায়।

আরও জানা যায়, উপায়ান্তর না দেখে নিজেকে রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে ঘর থেকে বের হবার চেষ্টা করেন ইয়াসমিন। কিন্তু হায়, এখানেও স্বামীর বাঁধা। পুড়ে মরতে হবে, বের হওয়া চলবে না।

পুড়তে পুড়তে এক পর্যায়ে শরীরে লেপ্টে থাকা পেট্রল ফুরিয়ে গেলে ইয়াসমিনের শরীরের আগুনও নিভে যায়। কিন্তু নেভেনি রাফেলের নিষ্ঠুরতার আগুন।

এবার নতুন খেলায় মাতে সে। স্ত্রীর পোড়া শরীর থেকে কাবাব করা মুরগির মতো করে চামড়া তুলে নিতে থাকেন দুই হাতের ঘষায়। একেক ঘর্ষণের সাথে খসে পড়তে থাকে পুড়ে যাওয়া চামড়া, সাথে ইয়াসমিনের মরন আর্তচিৎকার। কিন্তু তাতেও রাফেলের নিষ্ঠুরতায় কোন হেরফের ঘটে না।

উল্টো মেয়ের যন্ত্রণার খানিকটা ভাগ বাবা-মাকেও দিতে ফোন করেন ইয়াসমিনের বাসায়। এত গভীর রাতে জামাইর ফোন পেয়ে উৎকন্ঠিত শাশুড়ী ফোন তুলতেই তাকে সোজা জানিয়ে দেন, ‘তোর মেয়েকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি। এসে নিয়ে যা’।

রাফেলের পাশবিকতা-হিংস্রতার এখানেই শেষ নয়। পৈশাচিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করে আর্তচিৎকার করতে থাকা স্ত্রীকে রেখেই পাশের কক্ষে গিয়ে দিব্যি ঘুমিয়েও পড়েন তিনি।

ঘটনার শিকার নারীর নাম ইয়াছমিন আকতার (৩০)। তিনি উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলি ইউনিয়নের নবগ্রাম এলাকার হারুনুর রশিদের মেয়ে।
অভিযুক্ত স্বামীর নাম রাছেল (৩০)। তিনি সন্দ্বীপপাড়ার মৃত মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে। ঘটনার পর থেকে রাছেল পলাতক ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাঙ্গুনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রামের পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) আনোয়ার হোসেন শামীম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাছেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন ইয়াছমিনের বাবা হারুনুর রশিদ।

উপরের ঘটনাবলির বর্ণনা শুনে যদি অবাক হয়ে থাকেন, গ্রেপ্তারের পর রাফেলের আচরণের বিষয়ে জানলে হতবাক হবেন নিশ্চিত। আজ বিকেলে পালানোর চেষ্টারত অবস্থায় আসামি রাফেলকে গ্রেপ্তার ক‌রে পু‌লিশ।

গ্রেপ্তারের বিষয়ে তার কোন বিকার ছি‌লো না এমন‌কি নি‌জের কৃতকর্মের জন্য ন্যূনতম অনুতাপবোধ দেখা যায়‌নি ব‌লে জানা যায় পু‌লিশ সূ‌ত্রে।।

পু‌লিশ সূ‌ত্রে জানা যায়, “আসামী খোশমেজাজে জানায় যে, সে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেতে চান।”
থানার হাজতে বসে কাউকে এত নির্বিকারভাবে কথা বলতে কোনদিন শুনেন নি ব‌লে জানান পু‌লিশ।

ইয়াছমিনের চাচা চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউপির সদস্য আবদুল মালেক বলেন, ইয়াছমিনের সঙ্গে প্রায় আট বছর আগে বিয়ে হয় রাছেলের। তাঁদের সংসারে ৫ বছরের এক ছেলেসন্তান রয়েছে।

ইয়াস‌মি‌নের বাবা হারুনুর রশিদ জানান, “যৌতুকের দাবিতে ইয়াছমিনকে প্রায়ই নির্যাতন করত জামাতা রাছেল। যৌতুক নিয়ে কথা–কাটাকাটির জেরে শুক্রবার ভোররাতে রাছেল ইয়াছমিনের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার পর রাছেল আমাকে ফোন করে। এ সময় সে মুঠোফোনে বলে, ‘তুর মেয়েকে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি, এসে নিয়ে যা।’

চট্টগ্রামের পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ‘চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে গৃহবধূর অবস্থা দেখেছি। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।