শেয়ারবাজারে বিরাজ করছে একরকম মন্দাভাব। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মিউচুয়াল ফান্ডসহ ২১৫টি প্রতিষ্ঠানের দাম নিম্নসীমায় (ফ্লোর প্রাইস) ছিল। এদিন ৩০টি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। অর্থাৎ বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। তবে দুর্বল কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সুনির্দিষ্ট কিছু গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। সামগ্রিকভাবে সোমবার ডিএসইতে ১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। দিনশেষে মূল্যসূচক কমেছে ৬৫ পয়েন্ট এবং বাজারমূলধন কমেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারের প্রতি আস্থা সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট চলছে। এরপর সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বমন্দাসহ নানা নেতিবাচক খবর আসছে। এছাড়াও সামষ্টিক অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক নিম্নমুখী। হয়তো বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
উল্লেখ্য, স্বাভাবিক নিয়মে একদিনে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারে। অর্থাৎ আজ কোনো শেয়ারের দাম ১০০ টাকা থাকলে আগামীকাল তার দাম ১১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। আবার দাম কমলে তা ৯০ টাকার নিচে নামতে পারবে না। শেয়ারবাজারের পরিভাষায় একে সার্কিট ব্রেকার বলা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক অর্থনীতিতে অস্থিরতাসহ নানা কারণে বাজারে টানা পতন চলছে। এ কারণে অস্থিরতা ঠেকাতে নতুন নিয়ম চালু করেছে। এর নাম শেয়ারের ‘ফ্লোর প্রাইস’। এক্ষেত্রে কোনো শেয়ারের দামের ভিত্তি হবে আগের ৫ দিনের সর্বশেষ লেনদেনের (ক্লোজিং প্রাইস) গড় দর। কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না। কিন্তু দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে।
এদিকে সোমবার ডিএসইতে ৩৬১টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২১৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ফ্লোর প্রাইসে। অর্থাৎ এসব কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা নেই। এই তালিকায় গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক, সিঙ্গার বাংলাদেশ, তিতাস গ্যাস, রেনেটা এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামসহ ডিএসইর শীর্ষ ৩০ কোম্পানির অধিকাংশই রয়েছে। কোনো কোনো কোম্পানির মাত্র কয়েকটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া বাজারে ৩০টি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি।
একক দিন হিসাবে সোমবার ডিএসইতে ৩৬১টি কোম্পানির ১৮ কোটি ২৯ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ১ হাজার ২৯৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪১৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএস-৩০ মূল্যসূচক ২১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৭৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪০৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ১৫৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
শীর্ষ দশ কোম্পানি : সোমবার ডিএসইতে যে সব কোম্পানির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো-ইস্টার্ন হাউজিং, ওরিয়ন ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, পেপার প্রসেসিং, কেডিএস এক্সেসোরিজ, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বিবিএস, মনোস্পুল পেপার, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং জেএমআই হসপিটাল। ডিএসইতে সোমবার যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছে সেগুলো হলো-মনোস্পুল পেপার, ফাইন ফুডস, রহিমা ফুডস, ইস্টার্ন ক্যাবলস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, কেডিএস এক্সেসোরিজ, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বিডি থাই, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল এবং দেশ গার্মেন্টস। অন্যদিকে যে সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেশি কমেছে সেগুলো হলো-অ্যাপেক্স ফুডস, ফারইস্ট নিটিং, বিডিকম অনলাইন, নাভানা সিএনজি, অ্যাপেক্স নিটিং, আজিজ পাইপস, ফার কেমিক্যাল, পেনিনসুলা চিটাগং, আফতাব অটোস ও ইনডেক্স এগ্রো।