সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। শনিবার (৪ জুন) ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ৯ অগ্নিনির্বাপণকর্মীসহ ৪৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে সবার জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে বলেও অঙ্গীকার করেছে সংস্থাটি।
সোমবার (৬ জুন) এক বিবৃতিতে আইএলও বলছে, হতাহতদের পরিবারের প্রতি আমরা গভীর শোক ও সংহতি জানাচ্ছি। এই দুর্ঘটনা বলে দিচ্ছে, রাসায়নিক গুদাম যথাযথ নিয়ন্ত্রণ, সতর্কতা বাড়াতে ও পরিচালন পর্যায়ে কর্মীদের সঠিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি। আর দুর্ঘটনাস্থলে যাতে ভিড় না জমে, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বাংলাদেশে কার্যকর শিল্প ও উদ্যোক্তা নিরাপত্তা কাঠামো দরকার জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, সব ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠা, তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া ও প্রস্তুতির জন্য কাঠামোগত পদ্ধতি দরকার। আর তা প্রয়োগে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, নিয়োগদাতা, সুশীল সমাজ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের মধ্যে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
এসব সমস্যার মোকাবিলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে হবে। আইএলও জানিয়েছে, এ জন্য পরিবহন, পণ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, আহত-অক্ষম হয়ে পড়া শ্রমিক এবং কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের উপার্জনে সহায়তাসহ বিভিন্ন খাতে বর্তমানে যেসব নিয়মনীতি ও প্রয়োগ রয়েছে, তা পর্যালোচনা করতে হবে। পরিবহন, পণ্য ব্যবস্থাপনা ও জরুরি সেবাকর্মীদের নিরাপত্তা বাড়াতে প্রচার চালাতে হবে।
সম্প্রতি মডার্ন, কমপ্রিহেনসিভ এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) নামের একটি প্রকল্পে একমত হয়েছেন সরকার, নিয়োগদাতা ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা। তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) খাত থেকে যা শুরু হয়েছে। এই স্কিম অন্য খাতগুলোতে বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসার সুযোগ ও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ইআইএসে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর তৈরি পোশাক খাত থেকে শিক্ষা নিয়ে সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মপরিবেশ উন্নত করতে বাংলাদেশ সরকার, নিয়োগদাতা ও শ্রমিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা।আইএলও বলছে, বাংলাদেশে নিরাপদ কর্মপরিবেশের উন্নতিতে শিল্প কারখানায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি যথাযথভাবে বুঝতে পারা, সুরাহা ও প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে সরকারকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
আইএলও ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা আশা করছে, এই মর্মান্তিক ঘটনার পর কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণ করতে সবপক্ষ নতুন উদ্যোমে কাজ করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আইএলও সহায়তার হাত বাড়াবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।