ইসরাইলে হঠাৎ হামাসের হামলা এবং নতুন করে শুরু হওয়া ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রভাব পড়েছে দেশেটির অর্থনীতির প্রতিটি খাতে।
বিশেষ করে, হামলার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে ইসরাইল।
করোনার প্রকোপ কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়া, সেই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ববাজারে মন্দাভাব এবং মূল্যস্ফীতির করাঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত আবার নতুন করে নেতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে।
ইসরাইলে অবস্থিত বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম সীমিত করেছে।
অনেকে আপাতত সব ধরনের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে।
বিশেষ করে বিমানসংস্থা, ব্যাংক এবং জ্বালানি খাত রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা
হয়, ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকান বিমানসংস্থাগুলো
তেল আবিবে আপাতত নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ বিমানসংস্থা ডেল্টা এয়ার জানিয়েছে,
চলতি মাসের ৩১ তারিখ অবধি তেল আবিবে তাদের বিমান সেবা বন্ধ থাকবে।
আন্তর্জাতিক বিমানের অভাবে নিজেদের বিমানসংস্থা এল আল দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে ইসরাইলকে।
বিমানের পাশাপাশি ক্রুজার জাহাজগুলোও আপাতত ইসরাইলের বন্দরগুলো এড়িয়ে চলছে।
সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে রয়াল ক্যারিবিয়ান,
কার্নিভাল এবং নরওয়েজিয়ান উডের মতো ক্রুজার সার্ভিস ইসরাইলকেন্দ্রিক কার্যক্রমকে সীমিত করেছে।
ইসরাইলের জ্বালানি বিভাগের আদেশানুসারে,
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ জ্বালানি প্রতিষ্ঠান শেভরন দেশটির উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এটি চলমান থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি বাণিজ্যে ক্ষতির মুখে পড়বে শেভরন।
ইসরাইলের ব্যাংকিং ব্যবস্থাও এই হামলাকে কেন্দ্র করে ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্স প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বাসা থেকেই অফিসিয়াল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেছে।
শুধু গোল্ডম্যান স্যাক্স নয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগানও ইসরাইলে কর্মরত তাদের ২০০ কর্মকর্তাকে একই নির্দেশ দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্স জানিয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ইসরাইলে নিজেদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে ব্যাংক অব আমেরিকা।
পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে ইসরাইলে কর্মরত বৃহত্তম করপোরেট প্রতিষ্ঠান
সিটি গ্রুপের কর্মীদের কাজে যাওয়া বা না যাওয়া নিজেদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
হামলার পর নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে হোম অফিস চালু করেছে আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান মরগান স্ট্যানলি।
তবে ইসরাইলের হাফিফা বন্দরে অবস্থিত আদানি পোর্ট
এখন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পরিস্থিতি
আরও অবনতি হলে সাময়িক সময়ের জন্য ইসরাইলে
ব্যবসা বন্ধ রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির কোম্পানি।
এছাড়া এক হামলার কারণে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
(এআই) এবং চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিভিদা তেল আবিবে তাদের আয়োজিত কনফারেন্স বাতিল করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জেনসেন জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।
এমনকি ইসরাইলের বাজার-ঘাটেও বিরাজ করছে শুনশান
নীরবতা।
কাপড়ের বৃহৎ কোম্পানি এইচঅ্যান্ডএম হামলার পর থেকে ইসরাইলে তাদের সবকটি আউটলেট বন্ধ রেখেছে।
একইভাবে আরেক ফ্যাশন হাউজ জারা জানিয়েছে, বর্তমানে ইসরাইলে তাদের ৮৪টি দোকানের সবকটি বন্ধ
রাখা হয়েছে এবং সেগুলো ঠিক কবে নাগাদ খোলা হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
দেশটির ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিনের হামলায়
ইসরাইলে যা হলো তাতে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে
ইসরাইলে ব্যবসা করা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক না হলে ব্যবসাখাতে বড় রকমের ঝুঁকির মুখে পড়বে ইসরাইল।
যা দেশটির অর্থনীতিকে পর্যুদস্থ করতে যথেষ্ট।
সোর্স: সময় নিউজ।
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।