মোঃ জাবেদ মাহমুদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ গতকাল ১৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম নগরীর কৈবাল্যধাম ভিক্টোরিয়া জুট মিল গেইট সংলগ্ন “মেসার্স রাম সাহা ট্রেডার্স” গুদামে, গুদাম কর্তৃপক্ষের সাথে নগরীর সাগরিকা ও হালিশহর এলাকার মুদি পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। জানা যায়, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের প্রখ্যাত “রাম সাহা গ্রোসারী” নির্দিষ্ট অর্ডারের পণ্য বুঝিয়ে দিতে না পারায় বিক্ষুদ্ধ পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর ২ টায় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংঘর্ষে ৩ জন ব্যবসায়ী সহ ৫ জন আহত হয়।
গুদাম কর্তৃপক্ষ মারফত জানা যায়, গত ১৪ই আগস্ট অগ্রিম মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের খাদ্য পণ্যের পাইকারী প্রতিষ্ঠান “রাম সাহা গ্রোসারী”র সাথে চট্টগ্রামের সাগরিকা ও হালিশহর এলাকার বেশ কিছু মুদি পণ্যের পাইকারী ব্যবসায়ীদের পণ্য ক্রয় অর্ডার করা হয়। উক্ত অর্ডারকৃত পণ্যের ডেলিভারীর সময় ছিলো ১৮ আগস্ট (বুধবার), কিন্তু বাজারে পণ্যের সংকটের কারণে সবাইকে পণ্য বুঝিয়ে দেয়া সম্ভ হয়নি বলে গুদাম কর্তৃপক্ষ জানায়। এপ্রসঙ্গে গুদাম ফোরম্যান বিল্লাল হোসেন ‘আপরাজিত বাংলা ২৪.কম’কে জানান, “বাজারে পণ্যের স্বল্পতার কারণে আমরা সবাইকে তাদের পণ্য ডেলিভারী দিতে সক্ষম হইনি। এ অবস্থায় আমরা যেসব ব্যবসায়ীরা তাদের অর্ডারকৃত মালামাল বুঝে পাননি তাদের বলেছি সোমবারের মধ্যে সকলের অর্ডারকৃত মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হবে। তার সাথে আমরা এও বলেছি যে, চাইলে তারা অর্ডার বাতিল করে অগ্রিম টাকা ফেরৎ নিতে পারবেন, কিন্তু তারা অগ্রিম টাকা ফেরৎ নিতে অস্বীকৃতি জানায় ও পণ্য তাদের বুঝিয়ে দিতে বললে একসময় গুদামে কর্তব্যরত স্টাফদের সাথে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।”
কিন্তু পাইকারী ব্যসায়ীরা জানালেন অন্য কথা। সাগরিকা মুদি পণ্য পাইকারী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান “নিয়ন ব্রাদার্স” এর কর্ণধার জনাব বিপ্লব সওদাগর জানান, “গুদামের ফোরম্যান সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। তিনি জানান পণ্য সংকটের কারন বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। গত ৮ বছর ধরে “মেসার্স রাম সাহা ট্রেডার্স” সাথে আমি ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু বিগত তিন চার মাস ধরে গুদামের কিছু অসাধু স্টাফদের কারনে আমরা যারা ক্রয় অর্ডার করেছি তাদের অনেকের অর্ডারকৃত পণ্য অতিরিক্ত দামে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে নান টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে অনেকে পণ্য দেরীতে পাবার কারণে অগ্রিম টাকা তুলে ফেলতে বাধ্য হন আর যারা অগ্রিম টাকা ফেরৎ নিতে অস্বীকৃতি জানায় তাদের পণ্য নির্দিষ্ট সময় থেকে ১৫ থেকে ২০ দিন পরে পণ্য ডেলিভারী দিয়ে থাকে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে আমাকে কখনো পরতে হয়নি গত ৮ বছরের কোন সময়ে।”
অপর আরেক ব্যবসায়ী কাসিম এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর জনাব হাবিব জানান, “মেসার্স রাম সাহা ট্রেডার্স” এর সাথে আমার দীর্ঘ দিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক, তাদের ব্যবসায়িক কমিটমেন্টের সুনাম আছে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময় গুদামে কিছু নতুন স্টাফ নিয়োগ পরার পর হতে এধরণের অনিয়ম হচ্ছে। বেশীর ভাগ সময় তারা পণ্য ডেলিভারী না দিতে পারার বহু অযুহাত দেখায় আর অগ্রিম টাকা ফেরৎ নেবার জন্য চাপ সৃষ্টি করে”।
গুদামের কারা এ ধরনের কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত তা জানতে চাইলে হালিশহরের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ ইমরান আক্তার জানান, “গুদামের নতুর সিকিউরিটি গুলার ব্যবহার খুব বাজে। তারা টাকা খেয়ে ট্রাকের সিরিয়াল নিয়ে উল্টা পাল্টা করে। বিশেষ করে গুদামের কেয়ারটেকার জয়ন্ত, স্টাফ আশীষ, সাইফুল, বিষ্ণু, আনিছ এরা এধরনের কর্মকান্ডে লিপ্ত।”
এবিষয়ের সত্যতা জানতে চেয়ে আমাদের প্রতিনিধি ফোনে কুমিল্লা চোৗদ্দগ্রাম “মেসার্স রাম সাহা ট্রেডার্স”এর স্টোর কিপার প্রীতম সাহার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “গত ১৪ আগস্ট যাবতীয় সকল অর্ডারকৃত ক্রয় মাল পাঠানো হয়েছে, কারো পণ্য না পাওয়ার কথা না। যদি তেমন কিছু হয় অবশ্যই ব্যবসায়ী যারা পণ্য ডেলিভারী পাননি তাদের অতিদ্রুত পণ্য বুঝিয়ে দেয়া হবে।” ব্যবসায়িদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রীতম সাহা জানান, “আমি স্টোরের দায়িত্বে আছি জুলাই মাস থেকে, তাই এসব অভিযোগ সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। এখন বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজ খবর নিবো এবং গুদামের কোন স্টাফ জড়িত থাকলে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
স্টোর কিপার প্রীতম সাহার বক্তব্যের বিষয়টি গুদামের ফোরম্যানের কাছে জানালে, ফোরম্যান বিল্লাল হোসেন তা এড়িয়ে যান।
এদিকে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম থেকে প্রতিষ্ঠানের নিজেস্ব পণ্যবহনকারী কাভার্ডভ্যান নম্বর “ঢাকা মেট্রো- ১৪-৬৯৪৮” ও ট্রাক নম্বর “ঢাকা মেট্টো ১৩-৩২৯০” গাড়ি দুটি দিয়ে প্রায় ১৩ টন পণ্য নিয়ে ১৭ আগস্ট রাত সারে ১১ টায় গুদামে এসে পৌঁছায়।
ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে পাহাড়তলী থানার উপ পরিদর্শক পরিমল কান্তি দেবনাথ মোবাইলে আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, “গুদামের স্টাফ ও সিকিরিউটির সাথে ব্যবসায়িদের পণ্য বুঝে পাওয়া নাপাওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়। এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে গুদামের ভিতরে হাতাহাতি সংঘর্ষে রুপ নেয়। খবর পাবার সাথে সাথে আমরা গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। উভয় পক্ষের ৬ থেকে ৭ জন আহত হয়। তবে কোন পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি। বিষয়টি মূল প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম থেকে “মেসার্স রাম সাহা ট্রেডার্স” তারা সুরাহা করবেন বলে সেখান থেকে আমাদের জানানো হয় এবং ভুক্তভূগী ব্যবসায়ীদের সকল পণ্য বুঝিয়ে দিবে বলে জানায়।”
দু’পক্ষের সংঘর্ষের কারনে “মেসার্স রাম সাহা ট্রেডার্স” গুদামে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোন মাল লোড আনলোড হয়নি।