গত ১৭ আগষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর আওয়মীলীগের সিনিয়র উপদেষ্টা জনাব এ.কে.এম বেলায়েত হুসেইন ও নগরীর উত্তর হালিশহর ২৬ নং ওয়ার্ডের চসিকের সংরক্ষিত ১১, ২৫, ২৬ আসনের বর্তমান নারী কাউন্সিলর হুরে আরা বেগম বিউটির ২ নং রোডের নিজ বাসার ৩য় তলায় গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে রেনু বেগম (৩৫) নামে একজন গৃহপরিচারিকা অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর ২৪ আগস্ট (বুধবার) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা “শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট”-এ ভর্তি করা হয়, বর্তমানে আহত রেণু বেগমকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে।
জানা যায়, ১৭ আগস্ট ভোর সারে পাচঁটায় প্রতিদিনের মতো কিচেনে নাস্তা রান্না করতে চুলা জ্বালালে অসাবধানবশতঃ গায়ের উড়নায় আগুন লেগে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষনিক জনাব এ.কে.এম বেলায়েত হুসেইন রেনু বেগমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেন এবং সেদিনই চমেকের ৩৬ নং বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে গেলে আহত রেনু বেগমের বড় ভাই তোফাজ্জেল হোসেন আপরাজিত বাংলা২৪.কম এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধিকে বলেন, ‘গত ৬ বছর ধরে আমার বোন রেনু বেগম চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা বেলায়েত হোসেনের চাচা এবং মহিলা কাউন্সিলর হুরে আরা বিউটি আপার বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে আসছে। প্রতিদিনকার মতো সকালে আমার বোন রেণু চা বানানোর জন্য চুলায় জ্বালালে তার গায়ের ওড়নায় আগুন লেগে যায় এবং কিছু বুঝে উঠার আগেই তার গায়ের জামায় আগুন ছড়িয়ে পরলে তার প্রায় পুরো শরীরে আগুন ধরে যায়। সাথে সাথে বেলায়েত চাচা আমাদের জানালে উনার ভবনের একজনের সাথে চট্টগ্নাম মেডিকেল হসপিটালে পাঠান। মারাত্মক ভাবে আহত তার শরীরের ৪০% পুড়ে গেছে বলে ডাক্তার আমাদের জানান।”

অগ্নিদগ্ধ রেণু বেগম (৩৫) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া বহনকারী ICU এ্যাম্বুলেন্স।
গত ১৮ আগস্ট আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের ৩৬ নং বার্ন ইউনিটের ৩২নং বেডে চিকিৎসাধীন রেণু বেগমকে দেখতে গেলে সেখানে মহিলা কাউন্সিলর হুরে আরা বেগম বিউটিকে রেণু বেগমের পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আহত রেণু বেগম বলেন, “গতকাল সকাল প্রায় সারে পাঁচটায় বেলায়েত কাকার বাসায় নাস্তার জন্য চুলা জ্বালাতে গেলে ওড়নায় কিভাবে আগুন লেগে যায় বুঝতে পারিনি, সাথে সাথে ওড়না সরাতে গেলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শরীরের কাপড়ে আগুন ছড়িয়ে পরে। তারপর আপা ও কাকা আমাকে নিজেদের লোক দিয়ে হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়ে দেন।”
কিন্তু আগের দিন রাতে চুলা বন্ধ না করায় সারা ঘরে গ্যাস জমার কারণে বিষ্ফোরিত হয়ে পুরো ঘরে আগুন লেগেছে বলে জানতে চাইলে আহত রেণু বেগম বলেন, “প্রতিদিন গ্যাসের চুলা জ্বলানোর আগে আমি রান্নাঘরে ঢুকে রান্নাঘরের সাথের বেলকনির দড়জা খুলে দেই, গতকালও তা করেছি। আর তাছাড়া কোনভাবেই গ্যাসের চুলা থেকে গ্যাস বের হওয়া সম্ভব না, গ্যাসের চুলা যদি খোলা থাকতো তাহলে অবশ্যই আগুন জ্বলা থাকতো, কারন গ্যাসের চুলাটা অটো সুইচের, শুধুমাত্র সুইচ অন করলে আগুন জ্বলে, চুলা জ্বালানোর জন্য কোন ম্যাচ ব্যবহার করা লাগে না। যদি চুলা না বন্ধ করা থাকতো তাহলে সারা রাত চুলায় আগুন জ্বলতো, অটো সুইচ চুলাতে গ্যাস বের হবার কোন সম্ভবনা নাই।”
রান্নাঘর সহ সারা ঘরে আগুন লেগে গেছে বলে অনেকে বলছে এমন মন্তব্যে রেণু বেগম বলেন, “রান্না ঘরে বা বাসার কোথাও আগুন লাগেনি, কারা কেন কি কারণে একথা বলছে তা আমি জানি না। আগুন শুধু আমার ওড়না লেগে সারা শরীর ছড়িয়ে পরে। পুরাটাই একটা দুর্ঘটনা, এর জন্য আমি কাউকে দায়ি করছি না, আমার কপালে কষ্ট ছিলো আল্লাহ দিয়েছেন।”
উপস্থিত কাউন্সিলর হুরে আরা বেগমের কাছে দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভিকটিম আপনার সামনেই আছে, আপনারাই জিঙ্গাস করেন কি হয়েছিলো।” অনিরাপদ গ্যাস লাইন গ্যাস ব্যবহার ও অবহেলায় গ্যাসের চুলা বন্ধ না করার কারণে বিষ্ফোরণের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা কাউন্সিলর জানান, “ঐগুলো পুরো বানোয়াট কথা। আমার কিচেন কিংবা ঘরের কোথাও আগুন লাগেনি। প্রয়োজনে তার সত্যতা জানার জন্য সংবাদমাধ্যমের যেকেউ আমার বাসায় গিয়ে স্বশরীরে দেখে আসতে পারেন।” তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরে নিকটস্থ থানা থেকে প্রশাসনের লোকজন গিয়ে সরজমিনে তদন্ত করেন কিন্তু গ্যাস জমে বিষ্ফোরণে রান্না ঘর থেকে শুরু করে সারা ঘরে আগুন লেগেছে বলে যে গুজব উঠেছে তার কোন আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি। আসল ঘটনাটি কি তা ভিকটিমের মুখ থেকেই শুনুন। খালি রিপোর্ট করবেন তা তো হবে না। একটা রোগী অসহায় মানুষ যখন বিপদে পড়ে, এখানে শুধুই ভিক্টিম-ই দায়ী থাকবে না। সবাই মিলে সহযোগীতা করবেন। রিপোর্ট করার প্রয়োজনে আপনারা উঠে পড়ে লাগেন। কন্টিনিউ খবর নিচ্ছি, আমি ও আমার পরিবার।”
ভর্তি পরবর্তি মালিক পক্ষের কেউ এসেছিলেন কিনা জানতে চাইলে রেণু বেগমের ভাই তোফাজ্জেল হোসেন জানান, “মেডিকেলে ভর্তির দিন বেলায়েত চাচা এসে দেখে গেছেন, ডাক্তারদের সাথে কথা বলে চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা করে গেছেন। কাউন্সিলর বিউটি আপা প্রতিদিন হাসপাতালে এসে দেখা করে খোঁজ খবর রেখেছেন। এছাড়া বিউটি আপা দুজনকে সার্বক্ষনিক দেখাশোনার জন্য রেখে গেছেন।”
চিকিৎসার খরচ কিভাবে জোগার করছেন জানতে চাইলে রেণু বেগমের স্বজনরা জানান, ” এখন পর্যন্ত সকল চিকিৎসার খরচ কাউন্সিলর বিউটি আপাদের পরিবার দিচ্ছেন। বেলায়েত চাচা বলেছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা করা করা প্রয়োজন তা সবই উনি করবেন এবং করছেন।”
এদিকে আহত রেণু বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এ.কে.এম বেলায়েত হুসেইনের পরিবার তাদের নিজ দায়িত্বে আইসিইউ এ্যামবুলেন্সে চমেক থেকে রেণু বেগমকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে “শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট”-এ উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দুর্ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্যঃ স্বজনদেন ক্ষোভ-
গৃহপরিচারিকা রেণু বেগমের আহত হবার ঘটনাটিকে নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে অপপ্রচার ও মিথ্যে তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
অনলাইন পত্রিকা “দৈনিক চট্টগ্রাম.নেট”, “পত্রিকা৭১.কম”, “দ্যা ডেইলি সাঙ্গু.কম”, “আলোকিত চট্টগ্রাম.কম” সহ বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রায় একই ধরণের সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, উক্ত ঘটনার বিষয়ে ভিকটিম যেনো কোন সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা না বলে, রেণু বেগমের পরিবারকে হুমকি দেওয়া- ঘটনা পরবর্তি গোপনে রেনুকে ভর্তি করা, রেনু বেগম দগ্ধ হওয়ার ঘটয়া ধামাচাপা দিতে হুরে আরা বিউটির বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখানো, মিডিয়ার কাউর কাছে মুখ খুললে এবং ছবি তুললে চট্টগ্রাম থেকে বের করে দিবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
সংবাদ মাধ্যমের এমন সংবাদের সত্যতা জানতে চাইলে রেণু বেগমের ভাই ও স্বজনরা জানান, “এমন অভিযোগ এখনই জানতে পেলাম। কিন্তু কারা কেন এসব অহেতুক এসব খবর ছড়াচ্ছেন তা আমরা জানিনা। আমরা তো নিজ থেকে কোন সংবাদিক এমনকি থানায়ও যাইনি। কেনইবা যাবো, এটা তো একটা দুর্ঘটনা, যার উপর কোন হাত ছিলো না। আমরা দরিদ্র মানুষ, আমাদের বোনের চিকিৎসা করানোর মতো কোন আর্থিক ক্ষমতাও আমাদের নাই। চিকিৎসার ব্যয় সহ সব খরচ এমনকি আমাদের বোনের পরিবারের ছোট ছোট তিনটা সন্তান যেনো উপোষ না থাকে সেজন্য প্রতিদিন কাউন্সিলর আপা খাবার বাজারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। সবাইকে অনুরোধ করবো আমাদের বোনের এই দুর্ঘটনাকে নিয়ে কেউ নিজেদের স্বার্থ হাসিল না করেন।”
বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় হুরে আরা বিউটি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ভিকটিমকে হুমকী দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফোনে কাউন্সিলর হুরে আরা বিউটি আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, “আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ ও অপপ্রচান নতুন কিছু না। ঘটনাটিকে নিয়ে এলাকার একটা পক্ষ রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে, কে এবং কারা করছে তাও জানি। তাছাড়া আমি এবং আমার বাবা এ.কে.এম বেলায়েত হুসেইন বর্তমানে ঢাকায় আছি। গতকাল রেণু বেগমের আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় এনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট-ভর্তি করিয়েছি। বর্তমানে এখানে তার নিবিড় পরিচর্যায় চিকিৎসা চলছে। আপনারা আমার এলাকায় গিয়ে ভিকটিমের স্বজন যারা আছে তাদের সরাসরি জিগাস করেন কিংবা আমার নিজ বাসার আশেপাশের প্রতিবেশীদের জিঙ্গেস করুন, তাহলে এসব হলুদ পত্রিকার হলুদ সাংবাদিকদের প্রচার করা তথ্যের সত্য-মিথ্যা জানতে পারবেন। যেসব প্রত্রিকায় এসব মিথ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে সেসমস্ত পত্রিকা থেকে অদ্যবধি কেউ আমার বাসায় আসেনি কিংবা কেউ আমাকে বা আমার বাবাকে ফোন পর্যন্ত করেনি।”
এসব মিথ্যে অভিযোগের বিরুদ্ধে মহিলা কাউন্সিলর হুরে আরা বিউটি আরও বলেন, ” আমি বা আমার পরিবার এসব মিথ্যে অভিযোগ নিয়ে বিচলিত নই, ঘটনার আসল সত্যতা পুরো এলাকা জানে। আমি এবং আমার পরিবারে এখন একটাই কাজ তা হলো কিভাবে এই অসহায় মহিলাকে সুস্থ করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা যেকোন সময় আমার বাসায় গিয়ে কি হয়েছে, তা নিজ চোখে দেখে আসতে পারেন। তিনি সবাইকে রেণু বেগমের জন্য দোয়া করতে বলেছেন এবং তার সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার থেকে শুরু করে তার পরিবারের দেখভাল করবেন বলেও জানান।
রেণু বেগমের সর্বশেষ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের ঢাকার প্রতিনিধি সাঈফ আকবর জানান, বর্তমানে আহত রেণু বেগমকে “শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট”-এ উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে রেণু বেগমের শারিরীক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত, তাকে ড্রেসিং করা হয়েছে এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন বলে চিকিৎসকরা আশাবাদি।