গ্যাসের লাইনের ওপর কীভাবে মসজিদ নির্মাণ হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারায়ণগঞ্জের দুর্ঘটনায় আহতদের বিষয়ে প্রতিনিয়তই খোঁজ রাখছেন বলেও জানান তিনি। দুপুরে সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরিকল্পিভাবে কিছু গড়ে তোলা হলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা বেশি থাকে। যেখানে সেখানে গড়ে উঠা মসজিদগুলোর অনুমতির বিষয় খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নারায়াণগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সব ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা করেছি।
নারায়ণগঞ্জের মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের পরিবারে প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক নূর হাসান আহমেদ গণ মাধ্যমকে বলেন নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি। লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বের হওয়া আগুনেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন ।
তিনি বলেন, মসজিদের এসি থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। ছয়টি এসির প্রতিটির প্লাস্টিক খোলস পুড়েছে কিন্তু ভেতরের সব ঠিক আছে। বিস্ফোরণ হয়েছে গ্যাসের ও বিদ্যুতের স্পার্ক থেকেই।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সিআইডির তদন্ত কমিটির সদস্যও পুলিশ পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন উজ্জলও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি, হওয়ার কথাও নয়।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, সিআইডি এবং ডিপিডিসির পক্ষ থেকে আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠনা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা-এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে তারা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে বলে কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ অফিসের ডিজিএম মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে তিতাস গ্যাসের ঢাকা অফিসের মহাব্যবস্থাপক আবদুল ওহাবকে। শনিবার সকালে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোহাম্মদ আল মামুন।
অপরদিকে ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ কে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
ঘটনা তদন্তে কাজ করছে সিআইডির পাঁচ সদস্যের একটি দলও।
এদিকে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরো বেড়েছে। সবমিলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪ জনে। বার্ন ইনস্টিটিউটে বাকি ১৩ জন, যারা মৃত্যুর সাথে লড়ছেন তাদের সবার অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রত্যেকেরই শ্বাসনালি, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তারা কেউ আশঙ্কামুক্ত নন। এদের মধ্যে ৩ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকিরা রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দৈনিক অপরাজিত বাংলা