নারায়নগঞ্জে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে।
শনিবার (৫ সেপ্টম্বর) সকাল সোয়া ৯টায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, চিকিৎসাধীন সবাই আশঙ্কাজনক, কেউ আশঙ্কামুক্ত নয়। শুক্রবার রাতে হাসপাতালে ভর্তির পর শনিবার সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় দগ্ধ রাশেদ (৩৪) নামে দগ্ধ আরেকজন মারা গেছেন বলে বেলা ১১টার দিকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২ জনে দাঁড়িয়েছে।
নিহতরা হলেন— মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫), সাব্বির (২২), জুয়েল (১৮), জামাল (৪০), জুবায়ের (৭), হুমায়ন কবির (৭০), মোস্তফা কামাল (৩৪), ইব্রাহিম (৪৩), রিফাত (১৮), জুনায়েদ (১৭) ও কুদ্দুস বেপারী (৭০) এবং রাশেদ (৩৪)।
ডা. সামন্ত লাল সেন সকাল ৯টার দিকে বলেন ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জন মারা গেছেন। আমাদের কাছে মোট ৩৭ জন রোগী এসেছিল। বাকি যারা ভর্তি আছেন, তাদের অবস্থাও শঙ্কামুক্ত নয়।’
জানা গেছে, দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের শরীরের ৮০ ভাগ থেকে শতভাগ পুড়ে গেছে। ফলে তাদের কেউই আশঙ্কামুক্ত নন। ইনিস্টিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল জানান, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় সবারই চিকিৎসা চলবে। তবে কেউ শঙ্কামুক্ত নন।’
এদিকে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের জন্য প্রচুর রক্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুসেইন ইমাম।
তিনি বলেন, ‘আহতদের জন্য প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। যারা রক্ত দিতে ইচ্চুক তাদের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’
তিনি আরো জানান, জানান, সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের জন্য একটা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পরিদর্শন করেছেন।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন দিয়েছিলেন। তিনি দগ্ধদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। চিকিৎসার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তার নির্দেশনা অনুযায়ী সব ব্যবস্থা করেছি। যারা এখানে চিকিৎসাধীন সবাই আশঙ্কাজনক। আমরা তাদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে, মসজিদে এসি বিস্ফোরণে নিহতদের লাশ স্বজনরা যেভাবে চাইবেন সেভাবেই দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াও লাশ বুঝিয়ে দেয়া হবে। আজ বেলা পৌনে ১২টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে হতাহতদের দেখতে এসে একথা বলেন নারায়ণগঞ্জের এসপি।
উল্লেখ্য যে, গতকাল ৪ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এশার নামাজ আদায়ের সময় নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যেই মসজিদের চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ অর্ধশতাধিক মুসুল্লি দগ্ধ হন। ফরজ নামাজের মোনাজাত শেষে অনেকে সুন্নাত ও অন্য নামাজ পড়ছিলেন। এসময় মসজিদের ভেতরে প্রায় ৪০ জনের মতো মুসল্লি ছিলেন। বিস্ফোরণে তাদের প্রায় প্রায় সবাই দগ্ধ হন।