পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য সম্ভাব্য দুটো প্রধান হুমকি হচ্ছে আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত এবং বৈশ্বিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল বা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ভারত তার চিকেন নেকের দুর্বলতা কাটাতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে একীভূত করে ভারত তার মূল ভূখণ্ড ও সেভেন সিস্টার্সের মধ্যে বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রীক সরাসরি নৌযোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে। ফলে সেভেন সিস্টার্সের নিরাপত্তার জন্য কেবল চিকেন নেকের উপর নির্ভর করতে হবে না।
তবে, ভারত বাংলাদেশের কোন ভূ-খণ্ড দখলে নিলে নানারকম নিষেধাজ্ঞায় পতিত হবে এবং দখলদার হিসেবে বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে। যা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও অস্থিতিশীল করে তুলবে। সুতরাং, ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেষ্টা করবে বলে মনে হয় না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দ্বিতীয় হুমকি হচ্ছে বৈশ্বিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে খুব সহজেই বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যেতে পারবে। এতে চীনের উত্থান মোকাবিলা করা তাদের জন্য সহজ হবে। তাছাড়া, ‘ক্যারোট এ্যান্ড স্টিক’ পলিসির মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের আধিপত্যও নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে। শুধু তাই নয়, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
গত কয়েক মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী সম্পর্ক, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং আমেরিকার বিশ্বস্ত ড. ইউনূসের ক্ষমতা দখল বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরব উপস্থিতির বিষয়ে সন্দিহান করে তোলে। শেখ হাসিনাকে উৎখাতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে রাশিয়া থেকেও ২০২৩ সালের শেষের দিকে সতর্কবার্তা এসেছিলো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির ব্যাপারে সন্দেহ জাগা অমূলক নয়।
গত ১৬ বছরে পাহাড়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তি বিরাজ করেছে। বাঙালি-পাহাড়ী সকলে একসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছে, একসাথে বসবাস করেছে। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা নিশ্চিন্তে, নির্বিবাদে গহীন পাহাড়ে বেড়িয়ে আসতে পেরেছে। কিন্তু, ইউনূস সরকার ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। মনে রাখতে হবে, ড. ইউনূসকে যুক্তরাষ্ট্র ভালোবেসে ক্ষমতায় বসায়নি, বরং তার মাধ্যমে নিজেদের কিছু স্বার্থ হাসিল করতেই বসিয়েছে। সম্ভবত সেই ‘কিছু’ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
অস্থিতিশীলতার কারণটা লক্ষ্য করুন। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ খাগড়াছড়িতে যেয়ে মতবিনিময় সভায় ‘আদিবাসী বনাম উপজাতি’ পরিচয় উস্কে দেয় এবং তৎক্ষনাৎ উপস্থিত বাঙালিদের তোপের মুখে পড়ে। হাসনাত পেছন বাঁচিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসলেও, ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি। হাসনাতের উস্কানিমূলক বক্তব্যের জের ধরেই আজকের রক্তাক্ত পাহাড়ের সূচনা ঘটে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করলে সেখানে পাহাড়ী-বাঙালি সংঘর্ষ বাঁধবে। সংঘর্ষ প্রতিহত করতে একদিকে সেনাশাসন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে সশস্ত্র বিদ্রোহ মাথাচাড়া দেবে। তখন নিরাপত্তার অজুহাতে ড. ইউনূসের সঙ্গে ‘জয়েন্ট সিকিউরিটি’ ট্রিটি করে যুক্তরাষ্ট্র এখানে তার অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পারবে। ‘আদিবাসী অধিকার’ বা ‘মানবাধিকার’ পর্যবেক্ষণ নামক আরেকটি অজুহাত তারা তুলে ধরতে পারে। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের ছদ্মবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি আরো সহজ হবে।
পাহাড়ের আজকের অস্থিতিশীলতা স্থানীয় জনগণের নিজেদের সৃষ্টি নয়, বরং বাহির থেকে অবৈধ ইউনূস সরকার ও তার পোষা সমন্বয়কদের সুপরিকল্পিত সৃষ্টি। ইউনূসের পোষা সমন্বয়কদের উস্কানিতেই এই পরিস্থিতির জন্ম হয়েছে, কিন্তু তারাই এখন শেখ হাসিনার পরামর্শে ভারতের ষড়যন্ত্র বলে সমস্ত দায় আওয়ামী লীগের উপর চাপিয়ে জনগণকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করবে। জনগণের চোখে কালো কাপড় বেঁধে এই অবৈধ, অপশক্তি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। জনগণ সচেতন না হলে এই শক্তিকে দমন করা দুঃসাধ্য। নিজের দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, স্বাধীনতার স্বার্থে এই অবৈধ শক্তির সমস্ত অপচেষ্টা আমাদের প্রতিহত করতেই হবে।