বেলারুশের দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর পুননির্বাচিত হওয়ার পরে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পরে। এতে পুলিশ ৬,৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা করেছে এবং কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছে। এই নির্বাচনটি স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা নিরপেক্ষ নয় বলে সমালোচনা করেছেন।
রবিবার থেকে কয়েক হাজার বেলারুশিয়ান রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে , যখন এক্সজিট পোল দেখিয়েছে যে ২৬ বছর ধরে বেলারুশকে শাসন করা লুকাশেঙ্কো ৮০% ভোট পেয়েছে।
বিরোধী দলগুলি দাবি করে যে লুকাশেঙ্কোকে ক্ষমতায় রাখার জন্য নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং ভোট জালিয়াতির হয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীন তদারকি গোষ্ঠী “সৎ মানুষ” বলেছে যে তার তথ্য অনুসারে বিরোধী প্রার্থী স্বেতলানা তিখনভস্কে কমপক্ষে ৮০ টি ভোটকেন্দ্রে জিতেছিলেন। বেলারুশে অনেকেই এখন পুনঃভোট গণনার দাবি করছেন।
প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভের প্রথম রাতে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে, পর্যায়ক্রমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বন্ধ করে দিয়েছিল যেটাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে “অপ্রয়োজনীয়” শক্তি প্রয়োগ বলে অভিহিত করেছে।
রাস্তায় বিক্ষোভ চলাকালে কমপক্ষে ৫০ জন সাংবাদিককেও আটক বা আহত করা হয়েছে বলে বুধবার বেলারুশের প্রেস অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী ও সাংবাদিকদের প্রতি পুলিশের সহিংসতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছি। নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিবাদকারীদের সাথে সংলাপ চায় না বা তাদের শান্তিপূর্ণ স্বাধীন সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে দেয় বলে মনে হয় না ।”
লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, লাত্ভিয়া এবং এস্তোনিয়াতে রাষ্ট্রপতিরা একটি যৌথ বার্তায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানালে এই বিবৃতি আসে। তাদের বিবৃতিতে লুকাশেঙ্কোকে তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে শক্তির ব্যবহার বন্ধ করার, আটককৃত সমস্ত বিক্ষোভকারীদের মুক্তি এবং জনগণের সাথে সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানানো হয়েছে
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল বাছেলেট বুধবার এক বিবৃতিতে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “প্রতিবাদ চলাকালীন শক্তি প্রয়োগ সর্বদা ব্যতিক্রমী এবং শেষ অবলম্বনের একটি পরিমাপ হওয়া উচিত, যে কোনও সহিংস ব্যক্তি এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের মধ্যে স্পষ্টতই পার্থক্য করা উচিত, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করা উচিত নয় !”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকা উভয়ই তাদের প্রতিক্রিয়ায় বেলারুশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বিবেচনা করছে, অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন লুকাশেঙ্কোর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মস্কোতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সাংবাদিকদের বলেন, “সমাজে ফাটল সৃষ্টি এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে বেলারুশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাহিরের রাষ্ট্র গুলোর হস্তক্ষেপ প্রচেষ্টা স্পষ্ট রাশিয়া দেখতে পাচ্ছে” তিনি বলেন, “বেলারুশিয়ান কর্তৃপক্ষের পৃথক বিদেশী অংশীদারদের দ্বারা “অভূতপূর্ব চাপ” প্রয়োগ করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন “আমরা সকলকে সংযম ও শুভবুদ্ধি অনুশীলন করার আহ্বান জানাই। আমরা আশা করি যে দেশের [বেলারুশ] পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং শীঘ্রই শান্তিতে ফিরে আসবে,”।
দৈনিক অপরাজিত বাংলা