ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৬ নভেম্বর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মীরসরাই শিল্প নগরীতে পানি সরবরাহ, হালদাকে ধ্বংসের পাঁয়তারা!

ইউনুস মিয়া, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।
নভেম্বর ২৬, ২০২০ ৩:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে মিরসরাই ও ফেনী শিল্প নগরীর জন্য পানি সরবরাহ নিয়ে পাঁয়তারা করা হচ্ছে। দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি তোলা হলে নদীতে কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন ও ডলফিনসহ জীববৈচিত্র্য হুমকি মুখে পড়বে এবং হালদা মরা গাঙ এ পরিনত হবে বলে আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ” প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ” এর আয়োজনে “হালদা নদীর পানি উত্তোলন ও তার প্রভাব ” বিষয়ক এক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে তাঁদের বক্তব্যে মতামত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে রক্ষায় হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন না করে বিকল্প উৎস থেকে পানি সরবরসহ করা হোক। তাঁরা আরো বলেন, ” বিশেষজ্ঞ সমীক্ষার নামে প্রতারণার মাধ্যমে হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলনে পক্ষে খোড়া যুক্তি দেখিয়ে হালদাকে মরা গাঙ এ পরিনত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। হালদা শুধু হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান কিংবা চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের সম্পদ নয়। এটি পুরো বিশ্বের সম্পদ।

এমনিতেই নানা দূষণ,বালি ও পানি উত্তোলনের ফলে নদীর মা মাছ ও ডলফিন হুমকির মুখে পড়েছে। নতুন করে ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের ফলে এ নদীর জীববৈচিত্র্য আরো ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মত প্রকাশ করেন।

তাঁদের মতে, কনসালটেন্টের পানি উত্তোলনের বিষয়ে দেয়া তথ্য ভুলে ভরা ও বিজ্ঞানসম্মত নয়। ফেব্রুয়ারি -মাস হলো কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন পূর্ব মাস। এ সময়ে মা-মাছের পর্যাপ্ত গুণগতমান পানি ও খাবার যেমন প্লাংটন মাইক্রোবেনথিক অর্গানিজম দরকার। এ সময় যদি সব মিলিয়ে নদীর মোট ৩০ শতাংশ পানি তুলে নেয়া হয় তাহলে পানি স্বল্পতা ও লবণাক্ত বেড়ে কার্পজাতীয় মাছ ও ডলফিন হুমকিতে পড়ার সম্ভাবনাই বেশী।

বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ভাষায় বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই, তবে নদীকে মেরে ফেলে নয়। হালদা নদী থেকে মদুনাঘাট-মোহরা পানি শোধানাগার, ভূজপূর রাবার ড্যাম, হারুয়াছড়ি রাবার ড্যাম, ধুরং কংক্রিট ড্যাম ও হাটহাজারী অংশে প্যারালাল খালে ১৮টি স্লুইস গেইট দিয়ে নিয়মিত পানি তোলা হচ্ছে। নতুন করে ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের পক্ষে খোড়া যুক্তি দিয়ে হালদাকে মেরে ফেলার আয়োজন কখনো কেউ মেনে নেয়া যায়না । তাই, হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন না করে বিকল্প উৎস থেকে পানি উত্তোলন করার ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, প্রধান বক্তা ছিলেন পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত। প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের আহবায়ক ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব শাইখ সিরাজ ও পরিবেশ আইনজীবী এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোঅর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার এম. আবদুল কাইউম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিদ, হালদা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য শমশের আলী ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন গৌরাঙ্গ নন্দী প্রমুখ।

এদিকে, গেল এক সপ্তাহ ধরে হালদা নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময় ৩ সদস্যের একটি টীম হালদার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি পরিমাপ করতে জরিপ চালিয়েছে।

এক তথ্যে জানা গেছে, মোহরা পয়েন্ট থেকে বর্তমানে ওয়াসা তুলছে ৯ কোটি লিটার, মদুনা ঘাট থেকে ৯ কোটি লিটার, প্রস্থাবিত মোহরা থেকে ১৪ কোটি লিটার আর হালদা প্যারালাল প্রজেক্টের মাধ্যমে ২৫ কোটি লিটার।

হালদা নদী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া দৈনিক অপরাজিত বাংলাকে জানান,
হালদা নদীর মত অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই মীরসরাই-ফেনী অঞ্চলের শিল্প জোনের পানির জন্য যথাসম্ভব প্রাকৃতিক উৎস থেকে নয়, প্রযুক্তিগত ব্যবহারের মাধ্যমে পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। হালদা নদী বাংলাদেশের প্রস্তাবিত “বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ” এবং একটি মাত্র অনন্য নদী। এই নদীর বৈশিষ্ট্য রক্ষার্থে আইডব্লিওএম-এর মত স্ববিরোধী মিথ্যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা মনগড়া রিপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম সম্পদকে নিয়ে গিনিপিগ টেস্টের কোন সুযোগ নাই।

তাই, মীরসরাই-ফেনী অঞ্চলে স্থাপিত শিল্প নগরীর পানির চাহিদা পূরণের জন্য হালদা নদী থেকে নয়, স্থানীয়ভাবে এবং বিকল্প উৎস থেকে পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য জোর সুপারিশ করেছেন ড. কিবরিয়া।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।