আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে জাতীয় পার্টি মিয়্রমাণ, নিষ্প্রভ।
ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির ১৮ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোন আইনি বৈধতা নেই।
কারণ একজন প্রার্থী যখন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করেন তখন আপনাআপনি ভাবেই তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে যান।
ব্যালট বাক্সে তার নাম থাকে। তিনি নির্বাচন থেকে সরে গেলেন কি সরে গেলেন না সেটি আইনের দৃষ্টিতে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বরং ব্যালট পেপারে তার নাম এবং প্রতীক থাকার ফলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আইনের দৃষ্টিতে পরিগণিত হবেন।
কিন্তু তিনি নির্বাচন করুন না করুন বাস্তবতা হল যে জাতীয় পার্টির অর্ধেকের বেশি প্রার্থী মোটামুটি নিষ্ক্রিয়। তারা নির্বাচনের মাঠে তেমন সরব নন।
জাতীয় পার্টির বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জাতীয় পার্টি এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থেকে সরে আসবে কিনা এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও নিয়ে এক রহস্যময় ভূমিকা পালন করছেন। বিভিন্ন মহল মনে করেন যে, জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে আসতে চায়।
কিন্তু বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পারিপার্শ্বিকতার কারণে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকছে। তবে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচনে জাপার যে রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল, সেরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারে কাছেও দলটি নেই। বরং জাতীয় পার্টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে দর কষাকষি এবং সমঝোতার মাধ্যমে অন্তত ৩০ টি আসন চায় এমন গুঞ্জন বাজারে রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এই নির্বাচন জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সারা বিশ্ব এই নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে। কাজেই জাতীয় পার্টিকে সমঝোতার ভিত্তিতে ৩০ টি আসন ছেড়ে দেওয়া প্রায় অবাস্তব এবং অসম্ভব ব্যাপার।
কিন্তু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, জাতীয় পার্টির যে সাংগঠনিক অবস্থা তাতে শতভাগ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টির ৬ থেকে ৭ টির বেশি আসন পাবে না। এরকম পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি নিজেদেরকে নির্বাচন থেকে গুটিয়ে নেওয়ার নাটকীয় ঘোষণা দিতে পারে। আর ৩০ থেকে ৩২ যদি জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচন সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় হয়েছে কি না, সেই বিতর্ক নতুন করে চাড়া দিতে পারে। এ রকম অবস্থায় সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কী করবে সেটি একটি দেখার বিষয়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, জাতীয় পার্টি তার প্রায় ২৮২ টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলছে এবং যেখানে প্রার্থীদেরকে অত্যন্ত সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। বাকি আসনগুলোতে তারা নিষ্ক্রিয়।
এখন প্রশ্ন হল যে জাতীয় পার্টির এই ভূমিকা কেন? জিএম কাদের অবশ্য বলেছেন, জাতীয় পার্টির অনেক প্রার্থী দুর্বল। তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এ কারণে তারা নির্বাচন থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির যে সমস্ত প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এলাকাগুলোতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে তার মধ্যে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুর সদর আসন।
দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জের আসন। রুহুল আমিন হাওলাদারের আসন, আনিসুল ইসলাম মাহমুদের চট্টগ্রামের আসন এবং জিএম কাদেরের পত্নীর ঢাকা-১৮ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সালমা ইসলাম তার নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। জাতীয় পার্টির আরেক নেতা বাবলাও ঢাকা-৪ লড়াই জমিয়ে তুলেছেন। এরকম বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এখন দেখা যাক জাতীয় পার্টি নির্বাচনের মাঠে শেষ মুহূর্তে কী চমক দেখায়।
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।