ঢাকাশনিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দলবল সহ বাংলাদেশে ঢুকে পরেছে কুখ্যাত রোহিঙ্গা নেতা নবী হোসেন।

অনলাইন ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪ ১০:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংঘাতময় মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশে ঢুকে ধরা পড়েছেন ২৩ জনের মতো রোহিঙ্গা। তাদের অনেকে ওপারে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না এমন প্রশ্নও উঠেছে। তবে সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে দলবল নিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রের দাবি, শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝেরপাড়া গ্রাম সংলগ্ন সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন নবী হোসেন গ্রুপ।

স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, বিকেলের দিকে সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের লোকজনের শব্দ শুনতে পেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গ্রামবাসীর সহযোগিতা চায়। বিজিবির ডাকে সাড়া দিয়ে হাজারো গ্রামবাসী সীমান্তে গেলে নবী হোসেন ও তার দলের সদস্যরা ওই এলাকা থেকে সরে যায়।

সীমান্তে ফের গুলির শব্দ, ‘মর্টার শেল আতঙ্ক’
স্থানীয়রা বলছেন, পালিয়ে আসা এই ব্যক্তিরা আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির (এআরএ) সদস্য। সশস্ত্র এই বিচ্ছিন্নতাবাদী দলটির প্রধান হচ্ছেন নবী হোসেন। বিজিবির তথ্য বলছে, সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধের হোতা এই নবী হোসেন। যাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, ওপার থেকে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এর ধাওয়া খেয়ে মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার ভোরে নবী হোসেনের দলের কিছু লোক বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। তার দলের লোকদের প্রায় সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তালিকাভুক্ত বাসিন্দা। তবে নবী হোসেন এখনও গ্রেপ্তার হননি। তার অবস্থানও জানা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টার কথা জানিয়েছে পুলিশ। নবী হোসেন ক্যাম্পে ঢুকেছেন এমন কথা চাউর হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে, আতঙ্কও ছড়িয়েছে।

সীমান্ত অতিক্রমকালে শিশুসহ ৪ রোহিঙ্গা আটক
হোয়াইক্যংয়ের স্থায়ী বাসিন্দা সাইফুদ্দিন বলেন, প্রথম দফা চেষ্টা করে নবী হোসেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে ব্যর্থ হয়েছে। তবে নবী হোসেন ফের রাতের বেলায় একই ইউনিয়নের উলুবনিয়া হতে উনচিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য পেয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবী হোসেনকে ধরিয়ে দিতে দুই বছর আগে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পোস্টার সাঁটিয়েছিল বিজিবি। সীমান্তে ইয়াবা ও অস্ত্র পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে তিনি যুক্ত বলে বিজিবি সে সময় জানায়।

আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির ফেসবুক পাতা থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নবী হোসেনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তাকে অনেক রকম অস্ত্র ও গোলার ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশকে মেরে এই অস্ত্রগুলো পেয়েছি। আমরা আরও অনেক মালামাল (অস্ত্র) পেয়েছি, যা অন্য ভিডিওতে দেখাব। ও রোহিঙ্গা নওজোয়ান তোমরা আসো, তোমাদের জন্য আমাদের দরজা খোলা।’

স্থানীয়দের মধ্যে বলাবলি হচ্ছে, সীমান্তের ওপারে ঢেকিবুনিয়ায় ওই ক্যাম্পটির দখলে নিয়েছিল নবী হোসেনের লোকজন। কিন্তু ভিডিও প্রকাশের পরদিনই আক্রমণের শিকার হয় তারা। সোমবার রাত থেকে গোলাগুলির যে শব্দ পাওয়া গেছে, তা মূলত নবী হোসেনের দলের সঙ্গে আরাকান আর্মি ও আরএসও- এর লড়াইয়ের ফল বলে স্থানীয়দের ধারণা।

ওই গোলাগুলির বিষয়ে একটি অডিওবার্তা ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেখানে নিজেকে নবী হোসেন পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তার দলের লোকেরা আরাকান আর্মি ও আরএসও সদস্যদের যৌথ আক্রমণের শিকার হয়েছে। সেই হামলার মুখে তার দলের লোকেরা পিছু হটে বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে গেলে বিজিবি ও গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়েছে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গফুর উদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলছেন, গত মঙ্গলবার রহমতের বিল, আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। কিছু রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশে দিয়েছে গ্রামবাসী। পুলিশ পরে এদের বিজিবি হেফাজতে দেয়। তবে এ বিষয়ে বিজিবির কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলতাজ হোসেন বলেন, স্থানীয় মাধ্যমে তারা জেনেছেন, রহমতবিল সীমান্তের ওপারে নবী হোসেনে দলের লোকেদের আস্তানা ছিল। মঙ্গলবার ভোর ও রাতে তার দলের লোকেরা অস্ত্রসহ বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। ওই দলের অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদেরই গ্রামবাসী আটক করে পুলিশ ও বিজিবির কাছে দেয়।

শুক্রবার এক ডজন অস্ত্রসহ যে ২৩ জনকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি, সেখানে নবী হোসেনের লোকও রয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, এরা কোন গ্রুপের লোক তা এখনো আমরা জানাতে পারিনি। তাদেরকে শস্ত্রসহ বাংলাদেশের সীমানায় পেয়েছে বিজিবি।

শুক্রবার উখিয়ার সীমান্ত ঘেঁষে বালুখালী দক্ষিণ পাড়ায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল নবী হোসেনকে নিয়ে। তারা বললেন, এখানে ‘সবাই জানেন’ যে নবীর লোকেরা মঙ্গলবার রাতে আরাকান আর্মি এবং আরএসও-এর ধাওয়া খেয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। তাদের ভাষ্য, যতজন ধরা পড়েছে তার চেয়ে আরও বেশি লোক ঢুকেছে।

মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদী ঘেঁষে এই বালুখালী থেকে এক কিলোমিটার গেলে রহমতের বিল গ্রাম। এইদিক দিয়েই মঙ্গলবার রাতে ঢুকেছিল বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা। বালুখালীতেই রয়েছে একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প।

দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মোহাম্মদ মুক্তারের দোকানে বসে কথা হচ্ছিল কয়েকজনের সঙ্গে। এর মধ্যে বাসের সুপারভাইজার দানু মিয়া বলেন, এখানে সবাই বলাবলি করছে যে নবী হোসেন অনেক অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়েছে। ওর ভয়ে আমাদের লোকজন নাফ নদীতে যেতে পারেনি। নদীতে জাল ফেললেই ওর লোকে বেঁধে মারত, পরিবারের কাছে টাকা চাইত। এখন যদি ও আরও উন্নত অস্ত্র পায় তাহলে পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করবে।

মুক্তার স্টোরের মালিক মোহাম্মদ মুক্তারও যোগ দিলেন আলোচনায়। তিনি বলেন, নবী হোসেন যদি বাংলাদেশে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য বড় বিপদ। আর ওপারে গোলাগুলি হলে তো সরাসরি আমাদের বাড়িতে এসে গুলি লাগে। এদিকে চাউর হয়ে গেছে যে নবী হোসেন ক্যাম্পে ঢুকেছে। তবে পুলিশ বলছে, নবী হোসেন ক্যাম্পে ঢুকেছেন এমন কোনো তথ্য তারা পাননি।

বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বি বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে সন্ত্রাসী নবী হোসেন ও তার দলের সদস্যরা ওপার থেকে (মিয়ানমার) সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তারা কেউ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকেছে এমন তথ্য পুলিশের কাছে নেই। নবী হোসেন ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারে এমন আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে এপিবিএন সদস্যরা।

কে এই নবী হোসেন? ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ছিলেন নবী হোসেন। তার বাড়ি নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্যের ঢেকিবনিয়ায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, আসার পরপরই ইয়াবা চোরাচালানে যুক্ত হন নবী। নিজের নামে গড়ে তোলেন বাহিনী। কয়েকটি ডাকাত দলও তার পৃষ্ঠপোষকতা পেতে থাকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নবী হোসেনকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে বিজিবি।

বিজিবির কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সীমান্ত দিয়ে নবী হোসেনের মাধ্যমেই ‘সবচেয়ে বেশি’ ইয়াবার চালান পাচার হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মজুদ হতো সে সময়। উখিয়া সীমান্তে গোলাগুলির পর তার গোপন আস্তানা থেকে ক্রিস্টাল মেথের বড় চালান উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া অস্ত্র পাচার, অপহরণ ও ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িত নবী। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।