একটা সময় ছিলো এদেশের গান ভক্ত পাগলগুলো তাদের প্রিয় শিল্পী ব্যান্ড পোষ্টারগুলো নিজের বেড রুম থেকে শুরু করে ঘরের দড়জায় পর্যন্ত টাঙ্গিয়ে রাখতো। প্রয়াত আজম খান, আইয়ুব বাচ্চু, খালেদ হাসান মিলু, জেমস্ কত কত প্রিয় গায়কদের ছবি থাকতো ব্যান্ড পিপাসুদের হৃদয় জুড়ে।
আজ আমরা কথা বলবো এমনই একটি ব্যান্ড নিয়ে যার কথা হয়তো এ প্রজন্মে শতকরা ৯০ জনই জানেন না।
ব্লু বার্ডস-
বাংলাদেশের ব্যান্ড ইতিহাসে প্রথম ব্যান্ড যেখানে সব সদস্যই ছিলেন নারী! চট্টগ্রামের লালখান বাজার, মতিঝর্ণা নামক এলাকা থেকে উত্থান হয়েছিলো দেশের প্রথম নারী ব্যান্ড দলটির।
“ব্লু বার্ডস” নামক ব্যান্ডটির জন্ম ১৯৯০ সালের ১১ই নভেম্বর। ভোকাল থেকে ড্রামার পর্যন্ত প্রতিটি পারফর্মারই নারী।ওই সময়কার প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত।নব্বুই সালে বিজয় মেলাতেই প্রথমবারের মতো মঞ্চে উঠে “ব্লু বার্ডস”।
১৯৯৬ সালে বিবিসি তাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদনও করেছিলো, ফলে, দেশ তো বটেই, দেশের বাইরেও ব্যান্ডটির নাম ছড়িয়ে গিয়েছিলো। ব্যান্ডটিতে বিভিন্ন সময়ে অনেক সদস্যই এসেছে, অনেকে চলেও গেছে।
কয়েকজন সদস্যের পরিচয় বলি-
ঝুমড়ি চৌধুরী (ভোকাল এবং কী-বোর্ড),
পলি সেন (ড্রামার), লিপি (কী-বোর্ড),
টিনা ডি কস্টা (বেইজ গিটার),
সোমা (লিড গিটার),
আনজুমান আরা (ভোকাল এবং কী-বোর্ড),
মুক্তা (ভোকাল), সীমা (ভোকাল),
রুবা হোসাইন (ভোকাল),
এনিটা (ভোকাল), বেলী (ড্রামার)।
কফি হাউজের ভেঙ্গে যাওয়া আড্ডা’র মতো ব্যান্ডটির পুরানো অনেক সদস্যই এখন নেই। কেউ কর্মব্যস্ততায় দূরে চলে গেছেন। কেউ অন্য কোথাও নিজের ক্যারিয়ার খুঁজে নিয়েছেন।
পপি নামে ব্যান্ডটিতে একজন সদস্য ছিলেন। জানা যায়, তিনি এখন বাহরাইনে।
সীমা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন অনেক দিন হলো।
শিখা আর নমিতা নামের দুই সদস্য পাড়ি জমিয়েছেন ইতালিতে।
রুবা হোসাইন লন্ডনে “ফ্যামিলি টাইজ” নামে নিজেরই একটা ব্যান্ড গড়ে তুলেছেন। বেলী ব্যান্ড ছেড়ে এখন চলচ্চিত্রের আইটেম সং গান।
এছাড়া পুরানো অনেক সদস্যই বিয়ে করে দূরে চলে গেছেন। অনেকেই সময় দিতে পারেন না।
পপ-রক জনেরা এই ব্যান্ডটির প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র এলবামটি বের হয় ১৯৯৫ সালে।
এলবামটির নাম “সৈকতে একদিন”। ১৪ টি ট্র্যাক নিয় এই এলবামটি তারা প্রকাশ করেন। যদিও অনলাইনে এই গানগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না। ক্যাসেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার কারণে এই গানগুলোর ডিজিটালভার্শন হয়নি।
তবে নারীদের এই প্রথম ও ঐতিহাসিক এই ব্যান্ডটির গানগুলো সংরক্ষণ করা উচিৎ। পাশাপাশি গানগুলো নতুন প্রজন্ম যেনো শুনতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সহজ সাবলীল লিরিক্স ও গায়কীর এই ব্যান্ডটি তাদের গানসহ হারিয়ে যেতে বসেছে। শুরুর দিকের সেই জৌলুস আজ আর নেই।
তবুও এত কিছুর পরেও, আশ্চর্য কথা হচ্ছে এই ব্যান্ডটি এখনো টিকে আছে কোনোভাবে।