ঢাকাশুক্রবার , ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মাত্র ১৮ দিন বয়সে মা-বাবার সাথে এসিডদগ্ধ সোনালী এখন এসএসসি পরীক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ ১০:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সোনালি খাতুন (১৯)। মাত্র ১৮ দিন বয়সে মা-বাবার সাথে এসিড আক্রান্ত হয়েছিল ছোট্ট শিশু সোনালী। সেই সোনালী এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

১৮ দিনের শিশু সোনালী মা-বাবার কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল রাতে। দুর্বৃত্তরা রাতে অন্ধকারে এসিড ছোড়ে সোনালীর মা ও বাবার শরীরে। পিতা-মাতার সাথে এতটুকুন শিশু সোনালীর মুখ ও শরীর ঝলসে যায় সেদিন রাতে।

জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে সোনালী ও তার বাবা-মা এসিড সন্ত্রাসের শিকার হন। ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর রাতে ঘটে সোনালীর পুরো পরিবারের উপর এসিড আক্রমণ।

সে দিনের সেই ছোট্ট সোনালী পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা পাইলট গার্লস হাইস্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। সোনালী সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার নকাটি গ্রামের নুর ইসলাম ও খোদেজা দম্পতির সন্তান।

সোনালীর বাবা নুর ইসলামের চাচার জমির বাঁশঝাড় প্রতিবেশির জমিতে পড়া এবং সেই বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র করে গোলযোগের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ওই বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিরোধ থানায় মামলা পর্যন্ত গড়ায়।

২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর রাত আনুমানিক ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা সোনালী ও তার বাবা-মায়ের ওপর এসিড নিক্ষেপ করে। এতে তার চোখ-মুখ, মাথা ও ঘাড় ঝলসে যায়, পুড়ে যায় শরীরের একটি বড় অংশ।

রাত ১২টায় এসিড আক্রান্ত হওয়ার পর বাবা-মার সাথে সোনালীকে প্রথমে স্থানীয় মির্জাপুর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাদেরকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা হয়।

এরপর সোনালীকে ঢাকায় এক বছর উন্নত চিকিৎসার আওতায় আনা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়। মামলার আসামিরা দীর্ঘদিন জেল খাটার পর মামলাটির নিষ্পত্তি হয়।

স্থানীয় এনজিও স্বদেশ’র সহযোগিতায় একশন এইড বাংলাদেশ’র প্রিভেনশন অব এসিড ভায়োলেন্স প্রকল্পের আওতায় সোনালী ও তার পরিবারকে আত্মবিশ্বাস গঠনমূলক কর্মশালার অন্তর্ভুক্ত করে সহযোগিতা করা হয়। একশন এইড বাংলাদেশ’র সহযোগিতায় ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সোনালী পড়ালেখার সহযোগিতা বাবদ উপবৃত্তি পেয়ে আসছে।

স্বদেশ’র সহযোগিতায় প্রথম আলোর মাধ্যমে সোনালীর নামে দশ শতক জমি বন্ধক করে দেওয়া হয়েছে। জেলা এসিড কন্ট্রোল কমিটি থেকে সহযোগিতা পেয়েছে সে। একশনএইড বাংলাদেশ’র সহযোগিতায় তার পড়ালেখায় আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

তবে সোনালীর এই পর্যন্ত টিকে থাকা ও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। সোনালীকে স্কুলে ভর্তি করার পর স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি। প্রথম দিকে তাকে স্কুলে যেতে নানারকম সামাজিক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

এক্ষেত্রে একশন এইড বাংলাদেশ’র সহযোগিতায় স্বদেশ স্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সমাজের সাধারণ মানুষকে কাউন্সেলিং, সামাজিক সম্পৃক্ততা করে সোনালীর স্কুলে পড়ালেখা অব্যাহত রাখার প্রয়াস চালানোর ফলে সোনালীর শিক্ষা জীবনের মাধ্যমিক স্তর সফলতার সাথে সমাপ্তের পথ সুগম হয়েছে। সোনালী স্বপ্ন দেখছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। সেজন্য তার দরকার আর্থিক ও সামাজিক সহযোগিতা।

পরীক্ষা শুরুর আগে সোনালীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সোনালী খাতুন জানায়, সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরে খুশি। সে স্বপ্ন দেখে আগামীতে সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সমাজের মূল ধারাতে ফিরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে অন্যদেরকে সহযোগিতা করবে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে যাতে তার পথ সুগম হয় সেজন্য সে সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে সে।

সোনালীর বাবা নুর ইসলাম ও মা খোদেজা খাতুন জানান, ১৮ দিন বয়সের ছোট্ট সোনালী আজ একশনএইড বাংলাদেশ, স্বদেশ ও সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্কের (এসবিজিএন) সহযোগিতায় তার পড়ালেখা চালাতে পেরেছে।

তারা বলেন, ‘এজন্য আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে তার শিক্ষক ও সকল সংগঠনকে বিশেষ করে স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, একশন এইড বাংলাদেশ নুরুন নাহার এবং তার সকল শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার দাশ বলেন, ‘সোনালী সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে আজ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়ার পর্যায় এসেছে। এজন্য ওর অদম্য মানসিক সহজ ও সকলের সহযোগিতা ওকে এতো দূর আসতে সাহায্য করেছে। সোনালীকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে সহযোগিতা করা জরুরি। আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে ওকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। আগামীতে সোনালীর জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

মানবাধিকার কর্মী ও স্বদেশ’র নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, একশনএইড বাংলাদেশ, স্বদেশ ও সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্কের (এসবিজিএন) এবং দেশ-বিদেশের যেসব ব্যক্তি ও সংগঠন এসিড সারভাইভার সোনালীকে এই পর্যন্ত আসতে সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি স্বদেশ’র পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা। সোনালীর উচ্চ শিক্ষালাভে স্বদেশ সবসময় পাশে থাকবে।

সূত্র :একাত্তর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।