দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগে বিভিন্ন জেলায় ভোটকেন্দ্রে আগুন, নির্বাচনী ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের ভাঙচুর-হামলা এবং নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং কয়েকজনকে আটকও করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৪টি ভোটকেন্দ্রে আগুন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ঈগল প্রতীকের অফিসে আগুন, চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, কুমিল্লার মুরাদনগরে নৌকা প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, বরগুনায় নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন এবং ফেনীর সোনাগাজীতে ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর ৩ উপজেলায় ৪টি ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বাঘা, বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এসব ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে বাগমারার ভোটকেন্দ্র থেকে দু’টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বাঘার একটি ভোটকেন্দ্রের অফিসকক্ষ বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে হতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। অন্য ৩টি ভোটকেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। কেন্দ্রগুলো হলো- বাঘা উপজেলার জুতনশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়ানী ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহনপুরের মতিহার উচ্চ বিদ্যালয় এবং বাগমারার আক্কেলপুর উচ্চ বিদ্যালয়। মোহনপুরের মতিহার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান জানান, তাদের স্কুলটি ভোটকেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তরা স্কুলের একটি শ্রেণিকক্ষে আগুন দেয়। এতে কয়েকটি বেঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল পুড়ে গেছে। বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার জানান, বাগমারার আক্কেলপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ভোটকেন্দ্রের সামনে দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল পাওয়া গেছে।
বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, উপজেলার জুতনশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের পরিত্যক্ত ভবনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এটি মূল ভোটকেন্দ্রের বাইরের অংশ। এই আগুনের ফলে ভোটকেন্দ্রের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ ছাড়া আড়ানী ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষকের অফিসে আগুন লেগেছে। এতে কিছু বই ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে এই স্কুলে আগুন ধরেছে। তদন্তের পর নিশ্চিত করে বলা যাবে। রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, কোন স্কুলে কীভাবে আগুন লেগেছে তার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফেনী-৩: ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার একটি ভোটকেন্দ্রে পেট্রোল দিয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় উপজেলার চর সাহাভিকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে আগুন দেয়া হয়। আগুনে আসবাবপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে যায় বলে জানিয়েছেন সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুদ্বীপ রায় পলাশ। বিদ্যালয় সংলগ্ন বাড়ির মো. কামাল উদ্দিন জানান, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে দুর্বৃত্তরা স্কুলে আগুন দেয়। পরে স্থানীয়রা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে জানালে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফেনীর পুলিশ সুপার মো. জাকির হাসান জানান, থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ও অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নির্বাচনের দিন এ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে কোনো সমস্য নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনে নাগরিক কমিটির স্বতন্দ্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেব সিআইপি’র ঈগল প্রতীকের অফিসে আগুন লাগিয়ে পুড়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোর ৩টায় দিকে উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নে ১ নম্বর ওয়ার্ড হাটখোলা মুড়ার অফিসে আগুন দেয়া হয় বলে জানা গেছে। এ আগুনে অফিসে আসবাবপত্র ও পর্দা পুড়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম। ঈগল প্রতীকের ব্যাপক জনসমর্থনে ক্ষিপ্তরা অফিসটি পুড়িয়ে দিয়েছে এলাকার লোকজনের অভিমত।
চাঁদপুর -৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ): আসনে নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়। এ হামলায় আহতদেরকে শাহরাস্তি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে রাতেই বাড়ি চলে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার সুচিপাড়া উত্তর ইউপির শোরশাক বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন- নৌকা সমর্থক ফরিদ আহমদ এবং ট্রাক প্রতীক সমর্থক ফখরুল খান, রাজু হাওলাদারসহ অজ্ঞাত ৮ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র উভয় প্রার্থীর সমর্থকরা বাজারে প্রচার মিছিল বের করে। ওই সময় দুটি মিছিল অতিক্রমের সময় উৎসক সমর্থকদের উস্কানি বক্তব্যে দু’দলের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
মুরাদনগর (কুমিল্লা): কুমিল্লা-৩, আসনে নৌকার অস্থায়ী ক্যাম্পে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দেওড়া গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম (১৫)কে রামদা, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে মুরাদনগরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের জাহাঙ্গীর আলম সরকারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টারদিকে কুমিল্লা-৩, মুরাদনগর উপজেলার ৩নং আন্দিকোট ইউনিয়নের ৬নং ওয়াডের্র দেওড়া গ্রামের নৌকা প্রতীকের অস্থায়ী ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। আহত দেওড়া গ্রামের লালন সরকারের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম (১৫)কে চাইনিজ কুড়াল ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। আন্দাকোট ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগ সভাপতি সেলিম হায়দার ও ইউপি’র ৩নং সদস্য দুলাল মিয়া জানায়, বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১০টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার ৩নং আন্দিকোট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের নির্বাচনী পথসভা দেওড়া গ্রাম, ফুলঘর গ্রামে শেষ করে আন্দিকোট উঠান বৈঠক করছেন এমতাবস্থায় কিছুক্ষণ পরই স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীক প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সরকার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দেওড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়া দিয়ে নৌকার ক্যাম্পের সামনে দিয়ে দেওড়া গ্রামের পথসভা করতে যাবার পথে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা গাড়ি থেকে নেমে নৌকার অফিসে অর্তকিত হামলা করে অফিসে বসে থাকা অবস্থায় দেওড়া গ্রামের লালন সরকারের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম(১৫)কে মাথায় ৩টি রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। রিয়াজুল ইসলাম মুরাদনগর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার পর উন্নত চিকিৎকার জন্য কুমিল্লা সরকারি হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন আল রশিদ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের জাহাঙ্গীর আলম সরাসরি এ হামলায় জড়িত। তার উপস্থিতিতে এ হামলা হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশন ও অনুসন্ধান কমিটিকে বিষয়টি জানিয়েছি। এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের জাহাঙ্গীর আলম সরকারের মোবাইলে (০১৭১১৫৯১২৫২) বারবার জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোন তোলেননি। বাঙ্গরা বাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিউল আলম বলেন, ঘটনাটি শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাটি তদন্ত করছি। অভিযুক্তদের আটকে অভিযান চলছে।