বছর খানেক আগে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি এলাকার নাসরিন বেগম থেকে মাসিক ১০ হাজার টাকা সুদে এক লাখ টাকা ধার নেয় একই এলাকার আবুল কালাম। টাকা পরিশোধ নিয়ে দুই জনের বিবাদের সূত্রে তৃতীয় পক্ষের বসত ঘরে সন্ত্রাসী হামলায় আসবাব পত্র তছনছ হয়েছে। হামলার সময় অল্পের জন্য রক্ষা পায় একটি শিশু।
সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ঘরের মহিলাদের বের করে দেয়। ঘরের চার পাশের টিনের বেড়ায় এলোপাথাড়ি কুপিয়ে তছনছ করে, ভেতরেও চালায় তাণ্ডব। তাদের তাণ্ডবের সময় বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল দেড় বছরের এক দুগ্ধপোষ্য শিশু। শিশুর মা আহাজারি করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। বিষয়টি খেয়াল করে জীবন ঝুঁকি নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন প্রতিবেশী আরেক নারী।
ওই নারী অপরাজিত বাংলা’কে বলেন, দামা-কিরিচ নিয়ে তারা ঘরের বেড়ায় কোপাচ্ছিল। কেউ কেউ ঘরে ডুকে সব ভাংচুর করছিল। শিশুটি ঘুমে ছিল। ঘরের মহিলারা ভেবেছিল বাইরের ঝামেলা বাইরের থাকবে। তাই তারা ঘুমন্ত শিশুটিকে ঘুমে রেখেছিল। একপর্যায়ে তারা সব ভাংচুর করে মশারিতে কোপ দেয়। বাচ্চার মা বাচ্চাকে আনতে চাইলে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আমি গিয়ে তাকে খাট থেকে উদ্ধার করি। না হয় যে কোন অঘটন ঘটতে পারতো।
এই ঘটনায় খুলশী থানায় পাল্টাপাটি দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। প্রথম মামলার বাদি হামলার শিকার সুজন। দ্বিতীয় মামলার বাদি সুদে টাকা খাটানো নাসরিন বেগম।
সুজনের মামলা সূত্রে জানা গেছে, নাসরিন থেকে সুদে টাকা নেওয়া আবুল কালাম তার ফুফাতো ভাই। ১০ জানুয়ারি রাতে টাকা নিয়ে নাসরিনের ভাই মামুন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আবুল কালামকে মারধর করে। এসময় ঘটনাস্থলে সুজনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিল।
পরে মামুন দলবল নিয়ে সুজনের বাসায় হামলা করে ঘর ও আসবাব পত্র ভাংচুর করার পাশাপাশি লুটপাটেরও অভিযোগ ওঠে। সুদে টাকা লগিয়ত করা নাসরিনের ভাই মামুনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে সুজন বাদি হয়ে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেন।
এর পরপরই নাসরিন বাদি হয়ে সুজন, সুজনের স্ত্রীর ভাই সালাউদ্দিন, সুদে টাকা নেওয়া আবুল কালামসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের মামলায় জড়ানোর কারন জানতে নাসরিন বেগমের মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এই ঘটনায় প্রথম মামলা আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার না করে পাল্টা মামলার আসামি সালাউদ্দিনকে আটক করে খুলশী থানার এসআই আনোয়ার হোসেন। এসআই আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামুনদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে। এসআই আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবতর্ন করে দেন ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা।
জানতে চাইলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, ১০ জানুয়ারি রাতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। আমরা দুই মামলার দুই আসামি গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করছি। মামলার তদন্তভার আরেকজন উপ-পরিদর্শককে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে আমরা আইনী ব্যবস্থা নিবো।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার সময় সালাউদ্দিন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। নাসরিনের মামলায় তাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জড়ানো হয়েছে। তারা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবী করেন।