পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ১৯৭১ সালের ৩১ শে মার্চ হালিশহর,দক্ষিণ কাট্টলী,মধ্যম নাথপাড়া ও আবদুর পাড়া এলাকায় শতাধিক নিরস্ত্র ইপিআর সৈন্যসহ দুই শতাধিক সাধারন মানুষ নির্মম ভাবে হত্যা করে। পুরো এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় অ- বাঙালিরা সেদিন বাঙ্গালী নিধন অভিযানে ব্রাশফায়ারের গুলির পাশাপাশি দা, ধামা, কিরিচ, বর্ষা দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে মানুষ হত্যার উল্লাসে মেতে উঠেছিলো। হত্যাকান্ডের পর সেদিন তারা লাশ গুলো স্থানীয় একটি ডোবায় ফেলে রাখে। রক্তে রঞ্জিত ঐ ডোবাটি পরবর্তীতে বধ্যভূমি হিসাবে স্বীকৃতি পায়। বধ্যভূমিটির আয়তন ছিলো তখন দেড় গন্ডা জমি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ঐ বধ্যভূমিটি এখন দখল বেদখলের খেলায় পনর- ষোল হাত জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে। সেটি ও আজ অযত্ন অবহেলা স্থানীয়দের ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাষ্টবিনে পরিনত হয়েছে। প্রত্যক্ষ ভাবে দেখা যায়। বধ্যভূমির বেদীতে পানি জমেছে, সেখানে ভাসছে শ্যাওলা, খালি বোতল, পুরানো পলিথিন, ছেড়া স্যান্ডেল, ককশিটের টুকরো,নষ্ট হয়ে ভেঙ্গে পড়ছে ইট, ইট এর গায়ে জন্মাচ্ছে পরগাছা।

দক্ষিণ কাট্টলী ১১ নং ওয়ার্ড মধ্যম নাথপাড়া, আবদুর পাড়া বধ্যভূমি

দক্ষিণ কাট্টলী ১১ নং ওয়ার্ড মধ্যম নাথপাড়া, আবদুর পাড়া বধ্যভূমি
যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল এ ভূমি, বধ্যভূমির দেয়ালে থাকা সেই নাম গুলোর নামফলক ও আজ অস্পষ্ট। এই মাটিতে শুয়ে আছে নিরু বলা’র মত বেশ কিছু মায়ের সন্তান। নিরুলার পুত্র সন্তানকে ধরে এনে তার সামনেই জবাই করে সন্তানের রক্ত দিয়ে নিরুবালা কে গোসল করিয়ে ছিল রাজাকারেরা। নিরুবালা দেবী সেই দুর্বিষহ স্মৃতি,দুঃখ, কষ্ট নিয়ে পাগলপারা হয়ে বেঁচে ছিলেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। সেই বীভৎস স্মৃতি কথা এখনো অত্র এলাকার মানুষের মুখে বর্তমান। বধ্যভুমি গণহত্যার স্মৃতি বহন করে। বহন করে গণহত্যার ইতিহাস। বহন করে নিরু বালাদের মত সন্তান হারা শত মায়ের হাহাকার সকাল থেকে সন্ধ্যাবধি দু চোখের অশ্রু। বহন করে স্বাধীনতার ইতিহাস। যে-ই ইতিহাস বহন করে নিয়ে যাবে যোগ থেকে যুগান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। ঐতিহাসিক সেই বধ্যভূমিটি যে কিনা ইতিহাস বহন করছে, আজ সেই যে ধ্বংসের চূড়ায় একদিন হয়তো সে নিজেই ইতিহাস হয়ে যাবে। বধ্যভূমির বিষয় নিয়ে কথা বলি নতুন প্রজন্মের নারী নেত্রী, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক,অত্র এলাকার জননন্দিত সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর “হুরে আার বেগম বিউটি’র” সাথে। তিনি বলেন যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এ বঙ্গভূমি, যে মায়ের সন্তানের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে,আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাদের প্রতি আমার সব সময়ই বিনম্র শ্রদ্ধা। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর আমার ওয়ার্ড নম্বর চসিক -১১,২৫,২৬ যে বধ্যভূমি, শহীদ মিনার গুলো রয়েছে আমি সবটুকু পরিদর্শন করেছি। এবং কোনটির কি কি সমস্যা আছে তা নির্ণয় করে মাননীয় মেয়র মহোদয় কে অবহিত করি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন,অত্র এলাকায় যে বধ্যভূমি, শহীদ মিনার রয়েছে সবগুলোর কি কি সমস্যা আছে অচিরেই তার সমাধান করবেন। কথা হয় শহীদ পরিবারের এক সদস্যের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে জানতে পারি ,শহীদ দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস আসলে স্হানীয় জনপ্রতিনিধি,বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বধ্যভূমিতে মাল্যদান করতে আসেন। তাদের নিকট আমরা বধ্যভূমির এই জরাজীর্ণের কথা তুলে ধরেছি। অনেকে সংস্কার করবে এমন আশ্বস্ত আমাদেরকে করেন, কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কোন খবরই থাকে না। এই বধ্যভূমিটি সংরক্ষন না করলে আগামী প্রজন্ম জানবে না কিভাবে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে হালিশহর ইপিআর ক্যাম্প দখলে নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী পুরো এলাকায় কি হারে গনহত্যা চালিয়েছিলো। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের এই বধ্যভূমিটি সংস্কার করা অতীব জরুরী।