রাজনীতির মাঠে সংঘাত আর সহিংসতার মধ্যেই আগামী সপ্তাহের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৯ই নভেম্বর বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এরপর আগামী ১২ কিংবা ১৩ই নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিকে নির্বাচনে প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া সংক্রান্ত নির্বাচনী অ্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বিকালে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর আলোকে অ্যাপটি আগামী ১২ই নভেম্বর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। অন্যদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতানৈক্যর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে। অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড ছাড়া অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জামের বেশির ভাগ ইতিমধ্যে জেলা নির্বাচন কার্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারির ৯ তারিখ বৃহস্পতিবারের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনী অ্যাপ চূড়ান্ত, ১২ই নভেম্বর উদ্বোধন: এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া সংক্রান্ত নির্বাচনী অ্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বিকালে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আলোকে অ্যাপটির আগামী ১২ই নভেম্বর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। নির্বাচন ভবনের বেইজমেন্টে অবস্থিত কমফারেন্স রুমে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে এটির যাত্রা শুরু হবে। প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার এই পদ্ধতির নামকরণ হয়েছে, ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ও অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম’। পদ্ধতিটি চালু করতে সাংবিধানিক সংস্থার ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। যার মধ্যে সফটওয়্যারের পেছনে ৯ কোটি ১১ লাখ এবং হার্ডওয়ারের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
ইসি সূত্র বলছে, অ্যাপে চারটি বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- যেকোনো নির্বাচনে ঘরে বসে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। ভোটারগণ তার ভোটকেন্দ্রটি এই অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারবেন; সঙ্গে সুবিধা পাবেন কোন পথ দিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছাবেন তার পথনির্দেশনা, নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর কতো ভোট পড়লো তার একটি তথ্য দেখতে পারবেন এবং স্থানীয় সরকারের যে নির্বাচনগুলো হয় তার বিস্তারিত তথ্য যেমন, কবে নির্বাচনটি হয়েছিল, ভোটার সংখ্যা কতো ছিল এবং নির্বাচনের মেয়াদ কবে শেষ হবে সেটিও জানা যাবে অ্যাপটির সহায়তায়। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অ্যাপটি ব্যবহার করতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হবে। কারণ, মনোনয়নপত্র অনলাইনে সাবমিশন করার পর আসনওয়ারী ভোটার সংখ্যানুপাতি ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংবলিত বিশাল ভলিউম হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে স্বাক্ষর সংবলিত নথির প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠাসমূহ শুধু অ্যাপে আপলোড করা যাবে। অ্যাপের সক্ষমতা ও ধারণক্ষমতা বিবেচনায় ইসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা সংক্রান্ত অ্যাপটির কার্যক্রম চূড়ান্ত। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা অর্থাৎ উদ্বোধনের অপেক্ষা। আগামী ১২ই নভেম্বর সম্ভাব্য সময় ধরে উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কারণ তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এই কার্যক্রমটি চালু হয়ে যাবে। কোনো ধরনের ত্রুটি নেই। যত ধরনের সমস্যা ছিল ট্রায়াল বেইজ সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ইসিদের মতানৈক্য: এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কাদেরকে কখন নিয়োগ করা হবে, ব্যালট বাক্স কখন পাঠানো হবে, তফসিলের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা, ইসি সচিবকে মুখপাত্র হিসেবে মনোনীত করাসহ এমন নানা ইস্যু নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। সাধারণত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। এবার তফসিল ঘোষণার আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করার চিন্তা করছেন কিছু কমিশনার। তবে এটি নিয়ে কমিশনের ভেতর মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ চাচ্ছেন তফসিলের পরেই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হোক। সূত্র বলছে, দুইজন কমিশনার চাচ্ছে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ডিসিদেরই নিয়োগ দেয়া হোক। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারা ভোটের মাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। অন্যদিকে কেউ কেউ চাচ্ছেন ইসি’র নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও কিছু রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হোক। যাতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা বাড়ে। ওদিকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা নিয়েও ইসি’র মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়। নির্বাচনের আগে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই বলে জানান দু’জন কমিশনার।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান তখন মানবজমিনকে বলেন, এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। যদিও গত শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। সেখানে ১৭টি রাজনৈতিক দল ইসি’র ডাকে সাড়া দেয়নি। আর ১২টি দল বর্তমানে সুষ্ঠু নির্বাচন করার মতো পরিবেশ নেই বলে মতামত জানিয়েছে। এ ছাড়া গত রোববার ইসি সচিবকে মুখপাত্র হিসেবে মনোনীত করেছে নির্বাচন কমিশন। এটা নিয়েও কমিশনারদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি’র কর্মকর্তারা। এ ছাড়া গত দুইদিন একাধিকবার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল ইসি সচিবকে বিভিন্ন কমিশনারের রুমে আলাদাভাবে যেতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে গণমাধ্যমগুলো থেকে বার বার চেষ্টা করা হলেও কোনো কমিশনার কথা বলতে রাজি হয়নি। ইসি সচিবকে মুখপাত্র করা হলেও তিনিও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। এদিকে সার্বিক বিষয়ে জানতে সিইসিসহ এক নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
