ফ্লাইওভার গুলো ঢাকা এবং চট্টগ্রমের পরিবহনসেবায় কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলেও রাতের ফ্লাইওভার এখন অনেকের কাছে ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ থেকে শুরু করে ভাতের হোটেল, মুরগির খামার, ময়লার ভাগাড় থেকে ঘোড়ার আস্তাবল সবই আছে ঢাকা এবং চট্টগ্রমের ফ্লাইওভারের গুলোর নিচে।
ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা গাড়ি রাখার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। আছে মাদকাসক্তদের আড্ডা ও মাদক বেচাকেনার জন্য নিরিবিলি স্থানও। ফ্লাইওভারের নিচে লোহার বেরিকেড দেয়া অংশ এখন মাদকাসক্তদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। দিনে দুপুরে তারা সেখানে বসে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে। শুধু মাদক সেবন নয়, রাতে কোনো কোনো স্থানে পতিতাদের আড্ডাও জমে। ফ্লাইওভারের আশপাশে চোর ছিনতাইকারীদের আড্ডা, আছে মাদকের আখড়াও। ঢাকার ৬টি ফ্লাইওভারের মধ্যে চারটিতে রাতে ঠিকমতো বাতি জ্বলে না।কুড়িল ফ্লাইওভারের আশপাশে চোর ছিনতাইকারীদের আড্ডা, আছে মাদকের আখড়াও।টিকাটুলীর রাজধানী মার্কেট এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে ছিন্নমূল মানুষের বাস।
চট্রগ্রামের ৪ টির অবস্থা আরো করুন এর মধ্যে মুরাদপুর থেকে ইস্পাহানির মোড়ের আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভার এবং স্টেশন রোড থেকে কদমতলী ফ্লাইওভারে এই ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বেশি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। বিগত সাড়ে আট বছরে রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে ছয়টি ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার হাজার ১৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। অব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ফ্লাইওভারের উপরেও সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। আর নিচের রাস্তাসহ পুরো এলাকা বেদখল হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার গুলোতে বিকেলের পর থেকে যানবাহন চলাচল কমে যায়। আর সন্ধ্যায় লাইট না থাকলে গাড়ি নিয়ে কেউ ওই পথে যায় না। আর এ সময় শর্টকাট পথে যাওয়া মোটরসাইকেল আরোহীরা অভিনব ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। প্রাণে বাঁচলেও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকেই।
এর মধ্যে মুরাদপুর থেকে ইস্পাহানির মোড়ের আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভার এবং স্টেশন রোড থেকে কদমতলী ফ্লাইওভারে এই ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বেশি।
গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভারের ল্যাম্পপোস্টগুলোতে রাতে লাইট জ্বলে না। ফ্লাইওভারগুলোতে নেই সিসি ক্যামেরা। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ খুঁটির গোড়া থেকে চোরেরা বৈদ্যুতিক তার কেটে নিয়ে যাওয়ায় রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকে অপরাধী ও ছিনতাইকারীদের ভয়ে রাতে ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল আরোহীরা যখন-তখন বিপদে পড়ছেন। মাদকসেবীদের আস্তানা হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে কোনো কোনো ফ্লাইওভার। বেশির ভাগ ফ্লাইওভারের নিচে ভোরবেলা ও সন্ধ্যায় চলে মাদক সেবন ও বিক্রি। আর সন্ধ্যার পর শুরু হয় ছিনতাইকারীদের উৎপাত। ফ্লাইওভারের ওপর তারা গাড়ি পার্ক করে ছিনতাইয়ের জন্য অপেক্ষা করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিয়ম না থাকার পরও উড়াল সেতুর যেখানে-সেখানে চালকরা বাস থামিয়ে যাত্রী তুলে নেয়। আর সন্ধ্যায় এ সুযোগটি নেয় ছিনতাইকারী চক্র। বাসের জন্য কোনো যাত্রী অপেক্ষমাণ থাকলে সেখানে ছিনতাইকারী এসে হানা দেয়। মাঝে মধ্যেই উড়াল সেতুর রাস্তার দুই পাশের একটি বাতিও জ্বলে না। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা থাকলেও এগুলো মেরামত করার উদ্যোগ নেই। লাইট নষ্ট থাকায় সন্ধ্যার পর ফ্লাইওভারের ওপরে ও নিচে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে উড়াল সেতুর বেশির ভাগ ল্যাম্পপোস্টের বাতির তার খুলে নিয়ে গেছে চোরচক্র।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন উড়াল সেতুগুলোতে বাতি জ্বলে না এটি তো পুরনো সমস্যা। নগরবাসীর দুর্ভোগ কমানোর জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে উড়াল সেতু বানানো হলেও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে উড়াল সেতুগুলোতে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
দৈনিক অপরাজিত বাংলা