হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসাবে পরিচিত হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলন দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভের ফসল। যার সূত্রপাত শুরু ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর থেকে। সেদিন লাখো কওমি ছাত্র- জনতা জুনায়েদ বাবুনগরীকে পুলিশের তোপের মুখে ফেলে চট্টগ্রামে চলে আসেন আল্লামা শফি ও তার ছেলে আনাস মাদানী। সেই থেকে চরম অসন্তোষ দানা বাঁধে কওমি আলেম-উলামা ও ছাত্রদের মাঝে। এতে মূলতঃ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে আলেম -উলামা ও ছাত্ররা সমাজ । সেই ইস্যুকে কেন্দ্র করে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যে বিরোধ তুষের আগুনের মত জ্বলতে শুরু করে ।
অনুসন্ধানে যে তথ্যগুলো পাওয়া যায় তন্মধ্যে পাঁচটি কারণ এখন খোলাসা হয়ে উঠে। প্রথমতঃ ৫ মে শাপলা চত্বর থেকে বাবুনগরীকে ঝুঁকিতে ফেলে আল্লামা শফী ও তাঁর পুত্র চলে আসা,দ্বিতীয়তঃ পরবর্তীতে কওমি সনদ স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া, তৃতীয়তঃ শফী পুত্র মাওলানা আনাস মাদানী পিতাকে নানা ভাবে প্রলুব্ধ, হেফাজতের প্রভাব কাটিয়ে ছাত্রদেরকে নানাভাবে হয়রাণী, অর্থ লোপাট,শিক্ষকদের প্রতি খারাপ আচরণ,অর্থের বিনিময়ে কওমী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কওমী ধারার বিভিন্ন মাদ্রাসায় মোহতামিম বা পরিচালক নিয়োগ দেয়া, চতুর্থতঃ আনাস মাদানী সরকারের এজেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত এবং পঞ্চমতঃ উল্লিখিত কারণগুলো নিয়ে হেফাজতের নায়েবে আমীর আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মুফতি ইজাহারুলসহ অনেক শীর্ষ আলেমগনের মধ্যে মতবিরোধ । এ সব মিলে শফিপূত্র আনাস মাদানীর উপর এত ক্ষোভ।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আনাস মাদানী শুধু নিজের স্বার্থে পিতাকে অন্যায় পথে পরিচালনা করেননি, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে প্রভাব বিস্তারও করেছেন হাটহাজারী মাদ্রাসায়। কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাক ও হেফাজতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। করেছেন সিনিয়র নেতাদের অবমূল্যায়ন। করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকুরিচ্যুত, নিয়োগ বাণিজ্য। গড়েছেন অঢেল সম্পদ। সরকারের দালাল হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে মাদানী । যার ফসল এই ছাত্র আন্দোলন। এ আন্দোলনে নেপথ্যে থেকে জামায়াত-শিবির-বিএনপি জোট বেঁধে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলনে ভূমিকা রাখে বলে অভিযোগ উঠে আসে। তারা একদিকে, আনাস মাদানীকে সরিয়ে দিতে আন্দোলয়ে নানা কৌশলে সহায়তা করে এবং অন্যদিকে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর ১৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত আল্লামা শফীর জানাযায় সম্মুখ সারিতে থেকে কফিন কাঁধে নিয়ে শেষ বিদায় জানায়।
সূত্রগুলো জানায়,তবে বড় হুজুর হিসাবে আল্লামা শফীর উপর জামায়াত-শিবির-বিএনপি’র অকৃত্রিম ভালবাসা থাকলেও তাঁর পুত্র মাওলানা আনাস মাদানীকে যে কোন ভাবে সরিয়ে সরকারী বলয়কে নস্যাৎ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে কাজের কাজ তাহাই হয়েছে।
সূত্রমতে, জামায়াত ত-শিবির-বিএনপি পন্থী শূরা কমিটির গুটি কয়েকজম সদস্য,শিক্ষক,বহিরাগত এবং হেফাজত নেতা এক গোপন বৈঠক করে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে।
কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করে বলেছে, ছাত্র আন্দোলন শুরুর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর মাদ্রাসায় আল্লামা শফি বিরোধী কওমি উলামারা বৈঠক করেন। এতে চট্টগ্রামসহ দেশের শীর্ষ কওমি উলামারা উপস্থিত ছিলেন। যেখান থেকে সূচনা এই ছাত্র আন্দোলনের। বৈঠকের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও এ বিষয়ে কিছুই জানেননা ভাব সংশ্লিষ্টদের। মুঠোফোন বন্ধসহ নানা কৌশলে তারা গণমাধ্যম থেকেও নিজেদের বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিরোধ ও বিবৃতি নিয়ে কওমি সমর্থকরা সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে নানারকম পোস্ট দিলেও এই ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নিরব রয়েছেন। কোন কথা বলছেন না আল্লামা শফির অনুসারীরাও। এ বিষয়ে কথা বলতে বার বার ফোন করা হলেও কেটে দেন আনাস মাদানী।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর প্রয়ান
হাটহাজারী মাদ্রাসার পূর্বাপর ঘটনা —
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির জানাযার নামাজ ১৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার,) বাদে জোহর হাটহাজারী মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। এ জানাযায় হাজার হাজার মুসল্লী, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,প্রশাসনিক কর্মকর্তা,হুজুরের ভক্ত, অনুরাগী, ছাত্র জনতা অংশ গ্রহণ করেন। হুজুরের জানাযায় ইমামতি করেন তাঁর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী। জানাযা শেষে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের ভিতর বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সম্মুখস্থ কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
★কওমীর নিয়ন্ত্রক ছিলেন আলামা শফী এবং বেফাক এর সাংগঠনিক কর্মকান্ড—
হাটহাজারী মাদ্রাসার আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে দেশের গোটা কওমি মাদ্রাসাগুলোতে। মূলত কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাক-এ নানা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি নিয়ে ফুঁসে উঠেছে কওমি অঙ্গন। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ সংক্ষেপে বেফাক দেশের সকল কওমি মাদ্রাসা দেখভাল করে।
দেশে কওমি মাদ্রাসা রয়েছে ২২ হাজার। আর শিক্ষার্থী রয়েছে ২৫ লক্ষাধিক। এই বেফাকের অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এখন কওমি ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বেফাকের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশকিছু অডিও ফাঁস হয় গত জুলাইয়ে। এরপর থেকেই উত্তেজনা ছড়াতে থাকে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা।
মেধা তালিকা নিয়ে জালিয়াতি, বেফাকের খাস কমিটি বাতিল, বেফাকের নেতৃস্থানীয় একাধিক আলেমের নাম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ এবং সহকর্মীদের নামে নানা দুর্নাম রটনাসহ আরো অনেক কিছু আলোচনায় আসে। এরই প্রেক্ষিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফসহ তিনজনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে বেফাক।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা সদস্য মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ও মাওলানা নুরুল আমিন যথাক্রমে বেফাকের মহাসচিব ও সহকারী মহাসচিব। তারা আল্লামা আহমদ শফীর আস্থাভাজন। এই বোর্ডের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। বছরের পর বছর পুরো কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন গুটিকয়েকজন। এতে করে বাড়ছে দুর্নীতি, কমছে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা।
★শিক্ষার্থীদের কেন ক্ষোভ–
মঙ্গলবার হঠাৎ করে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আনাস মাদানীকে অপসারণসহ নানা অভিযোগে আন্দোলনে নামে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ- কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি একটি অধিকার। কিন্তু এর বাহবা নেয়ার মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। সংগঠনের উদ্দেশ্য থাকলেও তার ধারেকাছে নেই নেতারা। সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করে সুবিধা হাসিলে ব্যস্ত অনেকেই। বেফাক, হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলামের আমানতের খেয়ানত করে আসছে তারা। মুরুব্বি নামক একতরফা স্বৈরাচারী ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বেফাকের ওপর জবরদখলের সংস্কৃতির চর্চা করার অভিযোগও আনেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কথা- এতে কওমি মাদ্রাসার সুনাম জাতীয়ভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিয়োগে স্বজনপ্রীতি। সাধারণ নিরীহ ওস্তাদ ও ছাত্রদের ওপর আনাস মাদানীর নির্যাতন ও অধিকারহারা করার অভিযোগও আনা হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি- আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা বাস্তবায়ন করতে হবে। আল্লামা আহমেদ শফিকে অক্ষম হওয়ায় পরিচালকের পদ থেকে সম্মানজনক অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা বানাতে হবে। ওস্তাদের পূর্ণ অধিকার ও বিয়োগ-নিয়োগকে শূরার নিকট পুনঃন্যস্ত করতে হবে। বিগত শূরার হাক্কানী আলেমদেরকে পুনর্বহাল ও বিতর্কিত সদস্যদেরকে পদচ্যুত করতে হবে।
সূত্র মতে, গঠনতন্ত্রে বেফাকের মজলিসে শূরার সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ১২১ জন পর্যন্ত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে কমিটির ব্যাপ্তি ১৫৫ জনের। এর মধ্যে দায়িত্বশীল পর্যায়ে এক মাদ্রাসা থেকে রয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে নেতৃস্থানীয়রা প্রভাব বজায় রাখতে কমিটিতে চেনা-জানাদের জায়গা করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কমিটিতে এলাকাপ্রীতি, স্বজনতোষণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের জায়গা করে দেয়া হয়েছে। এমনকি বেফাক প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছর পর্যন্ত বেফাকের কর্মনীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আসা এবং বেফাকে নিজ নিজ মাদ্রাসা থেকে অন্তর্ভুক্ত করানো প্রিন্সিপালরা বেফাকে যোগ দিয়েই পেয়েছেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ।
★প্রভাব প্রতিপত্তি—
১৫ বছর ধরে বেফাকের সভাপতি হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি যখন প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০০৫ সালে তখনও তার হাটহাজারী মাদ্রাসা বেফাকের আওতাভুক্ত হয়নি।
দ্বীনি শিক্ষায় স্বজনপ্রীতির বিরোধিতা করা হলেও এ ধরনের চর্চা দেশের সবচেয়ে বড় কওমি প্রতিষ্ঠানটিকে সঠিকভাবে পরিচালিত হতে বাধাগ্রস্ত করছে। যারকারণে ছাত্রদের ক্ষোভ ক্রমশঃ দানা বেঁধে আসছিল।
★রুদ্ধশ্বাস ৩৬ ঘণ্টা–
বুধবার। ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর দেড়টা। জোহরের নামাজের পর হঠাৎ করেই চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা ময়দানে ছাত্ররা জড়ো হন। এক এক করে কয়েক হাজার ছাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই জমা হয়ে মাদ্রাসার শাহী গেট ও অন্যান্য প্রবেশপথ বন্ধ করে তালাবদ্ধ করে দেন। মাদ্রাসার চারপাশে শিক্ষার্থীরা মাথার পাগড়ি দিয়ে নাক-মুখ বেঁধে হাতে লোহার রড, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা মসজিদের মাইক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক মাওলানা আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।এ ভাবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিল। আন্দোলনকারীরা ঐ সময়ে ঘোষণা দেন,
আমাদের এই আন্দোলন একান্তই মাদ্রাসা বিষয়ক তাই প্রশাসন ও এলাকাবাসী যেন মাদ্রাসায় হস্তক্ষেপ না করে।
★বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ৫ দাবী–
বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ৫টি দাবি পূরণের জন্য মাইকে ঘোষণা করেন, দাবিগুলো হচ্ছে- আল্লামা শফীর পুত্র মাওলানা আনাস মাদানীকে অনতিবিলম্বে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। সাধারণ ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা বাস্তবায়ন করে সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। আল্লামা আহমদ শফী মাজুর বা অক্ষম হওয়ায় হুজুরকে পরিচালকের পদ থেকে সম্মানজনক অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা বানাতে হবে। ওস্তাদদের পূর্ণ অধিকার ও বিনিয়োগ-নিয়োগকে শূরার নিকট পূর্ণ ন্যস্ত করতে হবে। বিগত শূরার হাক্কানী আলেমদেরকে পুনর্বহাল ও বিতর্কিত সদস্যদের পদত্যাগ করতে হবে।
★প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ না করাতে বারন–
আন্দোলন কারী ছাত্ররা মসজিদের মাইকে বারবার ঘোষনা দিতে থাকে যে, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে প্রশাসনের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা যাবে না। যদি পুলিশ প্রশাসন কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের জন্য মাদ্রাসার ভিতরে প্রবেশ করে তাহলে আমাদের সাধারণ ছাত্রদের লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে। এই বলে বারবার আনাস মাদানী রুমের দিকে এগিয়ে যায় এবং বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন চলাকালে মাদ্রাসার ভেতরে আনাস মাদানিসহ তিনজন শিক্ষকের কক্ষ ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহিকেও। ঐ সময়
শিক্ষার্থীরা হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফী, মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা শেখ আহমদ, মাওলানা আনাস মাদানী, সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা আহাম্মদ দিদার কাসেমীসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষককে মাদ্রাসায় অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা।
★ শুরার ১৬ সেপ্টেম্বর (বুূধবারের) বৈঠক-ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বুধবার রাত সাড়ে দশটার দিকে মাদ্রাসার শূরা মজলিসের তিন সদস্যের বৈঠকে মাওলানা আনাস মাদানীকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। এবং ছাত্রদেরকে হয়রানির শিকার না করারসহ এ দু’টি দাবি শূরা বৈঠকে মেনে নেয়া হয়। আর বাকি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে শনিবার শূরা বৈঠকে বসার কথা জানানো হয়। ফলে রাত ১১টার পর বিক্ষোভ থামায় ছাত্ররা।
★আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন-
এ আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন ১৭ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর কার্যালয়ে মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকের গুজব ছড়িয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মাঠে পুনরায় অবস্থান নেয়। তারা বারবার মসজিদের মাইকে মাইকিং করে সাধারণ ছাত্রদেরকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। আন্দোলনকারীরা বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না করে মাদ্রাসা আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আমরা আমাদের দাবি পূরণের জন্য এই আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।
★বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ–আন্দোলনকারীদের বাকি দাবিগুলো পূরণের জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে হেফাজত ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর কার্যালয়, সহযোগী পরিচালক আল্লামা শেখ আহমদের কার্যালয়, আল্লামা ওমর ও মাদ্রাসার শিক্ষাভবন ভাঙচুর চালায়। এ সময় হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফী নিজ কার্যালয়ে ছিলেন।
খবর পেয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও মাদ্রাসার সব গেট বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। দাবি আদায় না হলে মাদ্রাসার সমস্ত একাডেকিম কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও মাইকে ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারী ছাত্ররা।
দ্বিতীয় দফায় শূরা কমিটির বৈঠক– বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত শুরা কমিটির জরুরী বৈঠক -মাদ্রাসার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- আল্লামা সালাউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা নোমান ফয়েজি, মাওলানা সোহায়েদ নোমানী, মহিবুল্লা বাবুনগরী, মুফতি নুর আহম্মদ, মাওলানা দিদার, মাওলানা কবির আহম্মদ ও মাওলানা ফোরহান। শূরা কমিটির সদস্য মাওলানা সালাউদ্দীন নানুপুরী বৈঠকের সিদ্ধান্ত মাইকে পাঠ করে শোনান। মজলিসে শূরার বৈঠকে হেফাজত ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। মজলিসে শূরা অব্যাহতি গ্রহণ করে আল্লামা শফীকে সদরুল মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছে। আল্লামা আহমদ শফী শারীরিক গুরুতর অসুস্থ বিধায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেয়া হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টায় আল্লামা শাফীকে চিকিৎসারজন্য হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে মাদ্রাসা থেকে বের করা হয়। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সটিকে রাস্তায় দীর্ঘ ৪০ মিনিট আটকে রাখে। রাত পৌনে ১টার দিকে আল্লামা শফী মাদ্রাসা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। অভিযানের শঙ্কায় শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়ায়। ওদিকে আল্লামা শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হসপিটালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।
★১৮ সেপ্টেম্বট (শুক্রবারের) দিনলিপি–
তৃতীয় দিন পবিত্র জুমার নামাজ উপলক্ষে হাটহাজারী মাদ্রাসার শাহী গেটের পকেট গেট আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কড়াকড়ি নিরাপত্তা জোরদারের মাধ্যমে খুলে দেয়। মাদ্রাসা কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার নামাজের পূর্বে বয়ান করেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এ সময় তিনি মাদ্রাসা খোলা রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তোমরা ছাত্ররা ঠিকমতো পড়াশোনা করবে। তোমরা পড়ালেখায় মনোযোগী হও এবং আগামীকাল থেকে মাদ্রাসা খোলা থাকবে ও ক্লাস যথারীতি চলবে। তোমরা ক্লাসে অংশগ্রহণ করবে। তিনি আরো বলেন, আল্লামা আহমদ শফী চিকিৎসাধীন আছেন। আপনারা সবাই হুজুরের জন্য দোয়া করবেন। জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেলে মাদ্রাসার শাহী গেটের পকেট গেট পুনরায় তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়।
★ভিপি নূরুর হুংকার—
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, আমরা ৫ মে’র মতো আরেকটি ঘটনার আশঙ্কা করছি। আজকে যদি হাটহাজারীতে কোনো হামলা হয় তাহলে পুরো ঢাকা শহর অচল করে দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারদলীয় প্রভাব মুক্ত রাখার জন্য এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে,১৮ সেপ্টেম্বর(শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৪ টার সময় হেলিকপ্টার যোগে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ৈছে। ভর্তির কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
★হেফাজতের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবুনগরী —
হেফাজত ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর পরবর্তী আমির কে হবেন তা কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
শুক্রবার মধ্য রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটি জানিয়েছেন তিনি। হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে বলেও জানান তিনি।
আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনের কার্যক্রমে কোন প্রভাব পড়বে কেনা এমন প্রশ্নের জবাবে
জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ’অভাবতো কিছু হবেই। ওনার মতো তো আর মানুষ পাওয়া যাবে না। আমার দায়িত্ব হলো এখন কাউন্সিল ডাকা। কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেবে ওটাই হবে।
★আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোতায়েন–
চট্টগ্রামের ৪ উপজেলায় ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নামাজে জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আজ সকাল থেকে হাটহাজারী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া এবং ফটিকছড়িতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও তার জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে হাটহাজারীতে ৪ প্লাটুন, পটিয়ায় ২, রাঙ্গুনিয়ায় ২ এবং ফটিকছড়িতে ২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা iকরবে।
মজলিশে এলমি’র সভায়–
হাটহাজারী মাদ্রাসায় আরো ২ শিক্ষককে অব্যাহতি,৪ জনকে পূনর্বহাল —
২৩ সেপ্টেম্বর -আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় আরো দুই শিক্ষককে অব্যাহতি ও চারজনকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মাদ্রাসার মজলিসে এদারী(পরিচালনা কমিটি)ও মজলিসে এলমি (শিক্ষা পরিচালনা কমিটি) শুরা কমিটির গৃহীত পূর্ব ঘোষনা মোতাবেক এই সিদ্ধান্ত নেয়। এটি আন্দোলনকারী ছাত্রদের পাঁচ৷ দাবীর এক দাবী ছিল।
অব্যাহতি পাওয়া দুই শিক্ষক হলেন- মাওলানা মোহাম্মদ উসমান ও মাওলানা তকি উদ্দিন আজিজ। মাদ্রাসার প্রয়াত মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী থাকাকালীন এ দুজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। পুনর্বহাল হওয়া চার শিক্ষক হলেন- মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা সাঈদ আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ হাসান ও মাওলানা মনসুর। আহমদ শফী থাকাকালীন তাঁদেরকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
মাদ্রাসা থেকে মঙ্গলবার প্রাপ্ত তথ্যে
এ খবর জানা গেছে।
পাঁচ দফা দাবিতে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে ১৭ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে মহাপরিচালকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন আহমদ শফী। একই সঙ্গে তাঁর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। শুরা কমিটির সিদ্ধান্তের পর বর্তমানে মাদ্রাসার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।
★সব ফটক খুলে দেয়া হয়েছে
হাটহাজারী মাদ্রাসায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক– দেশের অন্যতম ইসলামী কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সকল বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের কাঙ্খিত সব দাবী পূরণ হওয়া এবং আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর ছাত্ররা অনেকটা আবেগী হয়ে পড়ে। আল্লামা আহমদ শফীর জানাযার পর মাদ্রাসায় ক্লাস নেয়ার ঘোষনা দেন আল্লামা বাবুনগরী। সেই ঘোষনা অনুযায়ী ২০ সেপ্টেম্বর(রবিবার) থেকে পুরাদমে ক্লাস শুরু হয়েছে এবং দায়রা হাদিসের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
হেফাজত ইসলামের আমীর ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর শুরা কমিটির অনুষ্ঠিত জরুরী বৈঠকে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য মুহতামিমের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনজনকে। মুফতী আবদুস সালাম চাটগামী, আল্লামা শেখ আহমদ, মাওলানা ইয়াহহিয়া- এই তিনজনের প্যানেল মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করবেন। একইসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক ও প্রধান শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মাওলানা হাফেজ শোয়াইবকে সহকারী শিক্ষা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
১৯ সেপ্টেম্বর(শনিবার) আছরের নামাজের পর হাটহাজারী মাদ্রাসার সূরা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে হেফাজতের আমীরের শূণ্য পদের বিষয়ে বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিযুক্ত ওই তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি মাদ্রাসার সকল কাজের সমস্যা সমাধান করবেন এবং সকলের সমান অধিকার থাকবে। কেউ এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের কক্ষ ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে আল্লামা শেখ আহমদ, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা ওমর, মাওলানা ইয়াহিয়া মাহমুদ, মুফতি জসিম উদ্দিনকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বৈঠকে। এছাড়া, আন্দোলন চলাকালীন শূরার বৈঠকে মাওলানা আনাস মাদানী ও মাওলানা নূরুল ইসলামকে বহিষ্কার সহ যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল তাও বহাল রাখা হয়েছে শুরা কমিটির বৈঠকে ।
সূরা কমিটিতে এই করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিয়ম তান্ত্রিক পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মাদ্রাসা খুলে দেয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বাংলাদেশ কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানানো হয়।
শূরা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী, আল্লামা নোমান ফয়েজী, মাওলানা সালাউদ্দীন নানূপুরী , মাওলানা সুহাইব সাহেব , মাওলানা ওমর ফারুকসহ উক্ত জামিয়ার সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ।
মাদ্রাসার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে আনাস মাদানীর বহিষ্কার সহ ৫ দফা দাবী আদায়ে ১৬ ই সেপ্টেম্বর (বুধবার) জোহরের পর থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা।
আন্দোলনরত ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রচার করা লিফলেটে উল্লেখ থাকা দাবী সমূহ পর্যালোচনায় দেখা গেছে সেগুলো ন্যায্য ও যৌক্তিক ছিল বলে সূত্রে জানানো হয়।
একটি সূত্র জানায়,বিশেষ কোন ব্যক্তি,দল বা গোষ্ঠীর উস্কানী কিংবা প্ররোচনায় নয় বরং দীর্ঘদিন ধরে জুলুম ও অন্যায় অবিচারের শিকার হওয়া প্রতিবাদী ছাত্র জনতা নিজেরাই নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে উম্মুল মাদারিস হাটহাজারী মাদ্রাসার সোনালী ইতিহাস ও ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখতে এবং প্রাপ্য অধিকার ফিরে পেতে মূলত এ আন্দোলন করেছে। অন্য একটি সুত্র দাবী করেছে এ আন্দোলনের নেপত্যে জামায়াত-বিএনপির একটি চক্র কাজ করেছে।
প্রতিবাদী ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে বাধাগ্রস্ত করতে একটি কুচক্রী মহলের ইন্দন ছিল বলে অভিযোগ উঠে।
সূত্রটি আরো জানায়,কিছু হলুদ মিডিয়া এ আন্দোলনের সাথে ব্যক্তি বিশেষকে সম্পৃক্ত করার হীন উদ্দেশ্যে আধাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। তারা যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই ব্যক্তি বিশেষের উস্কানিতে এই আন্দোলন হয়েছিল বলে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
আল্লামা আহমদ শফী বা আল্লামা বাবুনগরীর মধ্যকার দ্বন্দ্বের জের ধরে এ আন্দোলন হয়েছে বলে অনেকেই অপপ্রচার চালায়।