ক্রমেই হিংস্র হয়ে উঠছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সরকারের চৌকাঠের ভিতর ঢুকে পড়েছে দুর্বৃত্তরা! প্রতিটা মুহুর্ত সাধারন জনগনের মধ্যে এক আতঙ্ক বিরাজ করছে কখন যেন কি হয়। মেজর (অবঃ) সিনহা হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে রোমহর্ষক এক ঘটনার জন্ম দিলো দিনাজপুর।
গত ২রা সেপ্টম্বর ২০২০ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ০৩:০০ ঘটিকায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে তাঁর সরকারী বাসভবনে দুস্কৃতকারীরা কুপিয়ে এবং হাতুরি দিয়ে আঘাত করে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ওয়াহিদা খানমের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী। ওয়াহিদা খানমের স্বামী মেজবাহুল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালের পরিচালক কাজী দ্বীন মোহাম্মদ জানান, “হাতুড়ির আঘাতে তাঁর মাথায় দেড় ইঞ্চি পরিমাণ ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, ওয়াহিদা খানমের অবস্থা সংকটাপন্ন। এই অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া সম্ভব নয়।”
এদিকে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাপতি ও সিনিয়র সচিব মো: হেলালুদ্দীন আহমদ এবং জনপ্রশাসন মস্ত্রনালয়ের মহাসচিব ও মো: শেখ ইউসুফ হারুন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,
প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ
**”অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানানো যাচ্ছে যে, গত ০২ সেপ্টম্বর ২০২০ তারিখ রাত আনুমানিক ০৩:০০ টার সময় বেগম ওয়াহিদা খানম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঘোড়ঘাট, দিনাজপুর, তাঁর সরকারী বাসভবনে দুস্কৃতকারীদের হামলার স্বীকার হয়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁকে প্রাথমিকভাবে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অবস্থার অবনতি ঘটলে আই.সি.ইউ তে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তিতে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষ এয়ার এ্যাম্বুলেন্স যোগে “ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল” শের-ই বাংলা নগর ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
উপজেলা পর্যায়ে সরকারের সমন্বকারী হিসাবে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এতজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর এরূপ পাশবিক এবং নির্মম হামলা খুবই দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত। বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন এহেন হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং বেগম ওয়াহিদা খানমের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে।
বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন এ ঘটনার যথাযথ কারন অনুসন্ধ্যান পূর্বক দোষী ব্যাক্তিদের আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচারের জন্য জোড় দাবী জানাচ্ছে।”**
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, আনুমানিক রাত ৩টার দিকে ঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে এক যুবক প্রবেশ করে। প্রথমে ওই যুবক তার বাবাকে আহত করে পাশের ঘরে বাথরুমে আটকে রাখে। পরে ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা চালায়। এলোপাতাড়িভাবে তাকেও হাতুড়ি পেটা করে পালিয়ে যায়।
মূলতঃ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা জেলা প্রশাসকের।
ঘটনার পর জেলা প্রশাসকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা-ওসি আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ধারনা করা হচ্ছে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে নির্বাহী কর্মকতার সরকারি বাসভবনের ২য় তলায় বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ঘটনাস্থলের নিচে একটি মই পাওয়া গেছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, বাসভবনের নাইট গার্ডকে তালা দিয়ে আটকিয়ে রাখে। কাজের মেয়েও নিচে ছিল।
দুস্কৃতকারী ১/২ জন থাকতে পারে বলে বলে পুলিশের ধারনা। এটি কোনো ডাকাতি ছিল না। সম্ভবত হত্যার উদ্দেশ্যই ছিল বলেও জানান তিনি।