ঢাকারবিবার , ৪ অক্টোবর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‌তি‌ন্নি হত্যায় উত্তাল ইবি, বি‌ক্ষো‌ভে বি‌ভিন্ন সংগঠন। ধর্ষ‌নে হত্যার অ‌ভি‌যোগ।

অপরা‌জিত বাংলা প্র‌তি‌বেদন
অক্টোবর ৪, ২০২০ ১২:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ছাত্রী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের স্নাতক ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছি‌লো। উলফাৎ আরা তিন্নিকে পরিবার বলছে, ওই ছাত্রীর বড় বোনের সাবেক স্বামী দলবল নিয়ে দুই দফা বাড়িতে হামলা চালিয়ে নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করেছে। এরপর ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার চালাতে লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে প্রাক্তন ভগ্নিপতির হাতে নির্যাতিত হয়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়ার নিজ বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় তিন্নি। তার প্রয়াত পিতা ইউসুফ আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা সদস্য ছিলেন।

পা‌রিবা‌রিক সূ‌ত্রে জানা যায়, মারা যাওয়া উলফাত আরা তিন্নির (২৪) বাড়ি শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামে। গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলীর মেয়ে উলফাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।

নিহতের চাচা হেলাল উদ্দিন জানান, তিন্নির বড় বোন মুন্নির একই গ্রামের নুরুদ্দীনের ছেলে শেখপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী জামিরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়। সংসারে অশান্তি থাকায় প্রায় এক বছর হলো তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই জামিরুল তাঁর স্ত্রীকে আবার ঘরে নিতে চান। কিন্তু মুন্নি এতে রাজি ছিলেন না। এ কারণে জামিরুল ইসলাম ওই পরিবারের ওপর অত্যাচার–নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় পরিবারটি একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছিল।

বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার বিষয়ে চাচা হেলাল উদ্দিনের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জামিরুল ইসলাম বেশ কয়েকজন নিয়ে তিন্নিদের বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালান। একপর্যায়ে তাঁরা ফিরে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আবারও জামিরুলরা ওই বাড়িতে আসেন। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় থাকা তিন্নির ঘরে প্রবেশ করেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তাঁরা তিন্নিকে একা পেয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন চালান। তাঁরা তিন্নিকে ধর্ষণ করে হত্যা করেন। হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে যান। কিন্তু তাঁর পা খাটের সঙ্গে লাগানো ছিল। হেলাল উদ্দিনের দাবি, এভাবে ঝুললে কেউ মারা যাবে না। তাঁকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের স্নাতক ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উলফাৎ আরা তিন্নিকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

শনিবার (৩ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ মানববন্ধন করা হয়। এ সময় তারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে ঘৃণ্য এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে রহস্যজনকভাবে হত্যা করা বড় দুঃখের বিষয়। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ ধরণের নির্যাতনের শিকার হবে; একাত্তরে এর জন্যই কী দেশ স্বাধীন করা হয়েছে?
এছাড়াও মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে গ্রেফতারকৃত এবং পলাতক দোষীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার বাস্তবায়নের দাবি জানায়। একই সাথে এই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপর কথা বলেন।

এ‌দি‌কে, তিন্নি হত্যার বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। একইসাথে তিন্নি হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করণসহ সারাদেশে নারীর উপর সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।

শনিবার ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি নূরুন্নবী ইসলাম সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক জি. কে. সাদিক এক যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে এসব দাবি জানান।

যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, উলফাত আরা তিন্নি হত্যাকাণ্ড সারাদেশে নারীর উপর চলমান লাগামহীন সহিংসতারই অংশ। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের কাছে দোষীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রুমন রহমান লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি সন্ধ্যায় দৈ‌নিক অপরা‌জিত বাংলা‌কে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে আত্মহত্যা। তবে কিছু আলামত পাওয়া গেছে। সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা–নিরীক্ষা পর জানা যাবে আরও কোনো ঘটনা আছে কি না। ওই প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম জানান, তিন্নির মৃত্যুটি এখনো রহস্যজনক। তাঁর পরিবারে যে সমস্যা চলছিল, তা পুলিশকে আগে বলা হয়নি, জানলে এ–জাতীয় ঘটনা হয়তো ঘটত না। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাও প্রথমে পুলিশকে জানানো হয়নি, পরে তাঁরা খবর পেয়ে সেখানে গেছেন। এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডাক্তারি পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে, কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঘটনার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যাঁরাই জড়িত থাক, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে শুক্রবার রাতে নিহত তিন্নির মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে শৈলকূপা থানা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হলেও প্রধান আসামি জামিরুলসহ ৪ জন্য পতালক রয়েছে বলে জানা গেছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।