“ছাত্রী সংস্থার আসল কাজ নেতাদের শারীরিক চাহিদা পূরণ” – আয়েশা আক্তার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন নেত্রী আয়েশা আক্তার চাঞ্চল্যকর এক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তাঁর দাবি, জামায়াত-শিবিরের ছাত্রী সংস্থা মূলত শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নয়, বরং নেতাদের শারীরিক চাহিদা মেটানো ও সরকারবিরোধী প্রচারণা চালানোতেই নিয়োজিত।
প্রথম পরিচয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম
আয়েশা আক্তার জানান, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইশরাত জাহান মৌসুমীর মাধ্যমে তাঁর পরিচয় হয় ছাত্রী সংস্থার নেত্রী রওশন আরা স্বপ্নার সঙ্গে। পরবর্তীতে সুফিয়া কামাল হলের কয়েকজনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে সাংগঠনিক কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথমদিকে ব্লাড ব্যাংক ও গ্রুপ স্টাডির আড়ালে কার্যক্রম চললেও ধীরে ধীরে তাঁকে টাকা সংগ্রহ ও ফেসবুকে প্রোপাগান্ডায় যুক্ত হতে বলা হয়।
টাকা ও প্রলোভনের ফাঁদ
স্বপ্না নামের নেত্রী তাঁকে জানায়, সংগৃহীত টাকার ২০ শতাংশ কমিশন দেওয়া হবে। এছাড়া, ফেসবুক পেজ ও ভুয়া আইডির মাধ্যমে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালালে মাসে আট হাজার টাকা বেতন মিলবে। এমনকি “সেরা প্রচারক” নির্বাচিত হলে একেকজন সদস্য ৫০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেতেন। তবে সেই টাকা সংগ্রহ করতে যাওয়া সদস্যরা অনেক সময় হলে ফিরতেন না।
অনৈতিক শিক্ষা ও মুতআ বিবাহের বৈধতা প্রচার
আয়েশা আক্তারের অভিযোগ, ছাত্রী সংস্থার লেকচার শিটে আবুল আ’লা মওদুদীর উদ্ধৃতি ব্যবহার করে মুতআ বিবাহকে বৈধ প্রমাণ করার চেষ্টা করা হতো। বলা হতো, কোনো দ্বিধা থাকলে রাতে মুতআ বিবাহ পড়ে সম্পর্ক করা যাবে, আর সকালে তালাক দিলেই গুনাহ হবে না। এতে বোঝা যায়, নারীদের শরীর ভোগ করাকে সংগঠনের নেতাদের অধিকার হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল।
মেয়েদের তালিকা ও “শারীরিক সেবার সূচি”
তিনি জানান, ছাত্রী সংস্থার মেয়েদের মধ্যে যারা তুলনামূলক সুন্দরী, তাদের আলাদা তালিকা রাখা হতো। এমনকি কে কখন পিরিয়ডে আছে, সেটিও নথিবদ্ধ থাকত। সেই তালিকা অনুসারে জামায়াত ও মাওলানা নেতাদের কাছে মেয়েদের পাঠানো হতো। এভাবেই একটি “অসাধু সূচি” তৈরি করে নিয়মিতভাবে মেয়েদের ব্যবহার করা হতো।
নিজের অভিজ্ঞতা ও রক্ষা পাওয়া
এক পর্যায়ে আয়েশাকেও একই ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়। তাঁকে ঢাকার কদমতলীর একটি বাসায় যেতে বলা হয়েছিল। তবে সৌভাগ্যক্রমে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে পতিতাবৃত্তি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এতে তিনি সম্ভাব্য সর্বনাশ থেকে রক্ষা পান।
সরাসরি সতর্কবার্তা
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আয়েশা আক্তার বলেন,
“কে কি ভাববে ভেবে এতদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু নীরবতা মানেই সমর্থন। আমি সব বোনদের অনুরোধ করছি, আপনারা ছাত্রী সংস্থা নামের এই কুফুরি সংগঠন থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।”
বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের স্বীকারোক্তি শুধু একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, বরং জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক চরিত্র ও রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে। ছাত্র সংগঠনগুলো যেখানে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করার কথা, সেখানে নারী শোষণ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ সমাজে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে