ঢাকারবিবার , ১ নভেম্বর ২০২০
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

তৈরী পোশাক ও অ‌ভিবাসন নি‌ষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ-ফ্রা‌ন্স বা‌ণি‌জ্যিক সমীকরন।

অপরা‌জিত বাংলা প্র‌তি‌বেদন।
নভেম্বর ১, ২০২০ ১১:০০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর অন্যান্য দেশ যখন বাংলাদেশ থেকে সরে আসার কথা তুলেছিলো তখন একমাত্র ফ্রান্সই দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছিলো। কিন্তু সাম্প্র‌তিক ফ্রা‌ন্সের পণ্য বয়কট ও ফ্রান্স বি‌রোধী আন্দোলন হঠাৎ ক‌রে সব কিছুর আমুল প‌রিবর্তন ক‌রে দি‌য়ে‌ছে।

দেখে নেয়া যাক ফ্রান্সের বাংলা‌দে‌শের “তৈরী পোশাক” ও “অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা”~‌তে দু’‌দে‌শের লাভ-ক্ষ‌তির হিসাব।।

ফ্রান্সের ইউরোপীয় ইউনিয়ন মেম্বার এবং সেদেশের সংসদ সদস্য Virginie joron এবার বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন এবং যেসব মার্কেটে বাংলাদেশের প্রোডাক্ট আছে সেগুলো বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন , আমাদের দেশ যদি ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করে তবে ফ্রান্সের কোন ক্ষতি বা আমাদের কোন লাভ আছে কিনা।

উত্তরটি হচ্ছে বাংলাদেশে ফ্রান্সের পণ্য বর্জন হলে তাদের তেমন কিছু আসবে যাবে না। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় যদি ফ্রান্স বাংলাদেশের পণ্য বর্জন করে তবে বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসবে।

বাংলাদেশের RMG সেক্টরে আসতে পারে অবরোধ এতে কাজ হারাতে পারেন লক্ষাধিক পোশাক শ্রমিক।

প্রসঙ্গত উল্লেখ যে, ১৯৭৭ সালে ফ্রান্সে ১০ হাজার পিস শার্ট রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানি ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশের মোট তৈরী পোশাকের প্রায় অর্ধেক (৫১ শতাংশ) আমদানি করে ইউরোপের দেশগুলো। আর ইউরোপের সবচেয়ে বড় তিন ক্রেতা দেশ হচ্ছে যথাক্রমে জার্মানী, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। এছাড়া বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক ও পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ ফ্রান্সের মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি শুরু করেছিলো। তবে বর্তমানে তারা জার্মানিকে ভায়া হিসেবে বেছে নিয়েছে। এখানেও প্রতিবছর বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমান ৮ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ফ্রান্সে বাংলাদেশের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। টাকায় এর পরিমান প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর রপ্তানী ঠেকে ১.৭ বিলিয়ন ডলারের। তবুও ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাকের তৃতীয় আমদানীকারক দেশ হচ্ছে ফ্রান্স। এছাড়া হিমায়িত খাদ্য, পাটজাত পণ্য, বাইসাইকেল, চিংড়ি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সবজি ও গ্রোসারি আইটেম রপ্তানি করে বাংলাদেশ। সেখান থেকেও যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ফ্রান্সের পণ্য বলতে মূলত রাসায়নিক, সুগন্ধি, প্রসাধনসামগ্রী, ফার্মাসিটিক্যালস ও কৃষিভিত্তিক পণ্য আমদানি হয়। যার আমদানী মূল্য তৈরী পোশাক রপ্তানী আয়ের তুলনায় যৎসামান্য। তাই এই মুহুর্তে ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করলে ফ্রান্সের চেয়ে বাংলাদেশেরই ক্ষতি বেশি।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন বিনিয়োগ ও জাতীয় উন্নয়নের দেশটির যথেষ্ট অংশগ্রহণ রয়েছে। চট্টগ্রামের তেল শোধনাগার ও ইস্টার্ন রিফাইনারির পর নতুন রিফাইনারি বানানোর জন্য ফ্রান্সকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে ফ্রান্স। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রজেকটাইল ও দেশের মোবাইল প্রযুক্তিতে সহায়তাকারী দেশ ফ্রান্স।

এলপিজি গ্যাস, ওষুধ ও প্রযুক্তিখাতে ফ্রান্সের অন্তত ১০ টি প্রতিষ্ঠান বৃহৎ বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পেই তাদের ২৫৩ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী।

বর্তমা‌নে ফ্রা‌ন্সে লক্ষা‌ধিক বাংলা‌দেশীর বসবাস। এখানে বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী তাদের জীবনযাপন, পেশা, সরকারের আইনের প্রতি আনুগত্য, নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি, অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি কারণে স্বতন্ত্র এক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছেন।
আবদুস শুক্কুর নামের এক অভিবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয় ফ্রান্সের আইন ও মানুষের বিষয়ে। তিনি একটি বিষয় শেয়ার করেন। ‘একদিন পুলিশ তাকে স্কুটিসহ দাঁড় করায়। সঙ্গে আফ্রিকা মহাদেশীয় তিনজন লোকেও দাঁড় করায়। গাড়ির কাগজ বা অন্য কিছু চেক করার জন্য। প্রথমেই তাকে জিজ্ঞেস করে, কোন দেশ থেকে এসেছেন। যখনই শুনল বাংলাদেশি। তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।’ তিনি গল্পটি বলেই বললেন, আসলে এ দেশে বাংলাদেশিদের কাজের প্রতি একাগ্রতা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণই অন্য সব জাতিগোষ্ঠী থেকে বাংলাদেশীদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে।

‌কিন্তু বর্তমান প‌রি‌স্থি‌তি‌তে বাংলা‌দেশীরা আছেন ভীত ও সন্ত্রস্ত অবস্থায়। এ অবস্থায় বাংলা‌দে‌শে চলমান ফ্রান্স বি‌রোধী আন্দোল‌নের কার‌নে ফ্রা‌ন্সের জনগন ও বি‌ভিন্ন রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লো বাংলা‌দে‌শের সা‌থে বা‌ণি‌জ্যিক সম্পর্ক স্থ‌গিত করার দাবী জানা‌চ্ছে। বাংলা‌দে‌শের তৈরী পোশা‌কের এক‌টি বিশাল বাজার ইউ‌রো‌পে র‌য়ে‌ছে আর ফ্রান্ম হ‌চ্ছে তৈরী পোশা‌কের ইউরো‌পের সব‌চে‌য়ে বড় ক্রেতা। ফ্রা‌ন্সে বাংলা‌দেশী প্র‌তি‌ষ্ঠিত ব্যবসায়ী র‌য়ে‌ছেন। বর্তমান প‌রি‌স্থি‌তি‌তে বাংলা‌দেশী‌দের ‌বেশীরভাগ মুসলমান হওয়ার কার‌নে ফ্রা‌ন্সের শ্যেনদৃ‌ষ্টি এখন মুসলমান‌দের উপর।

‌ভির‌জি‌নি জর‌নের পর গতকাল পাকিস্তানি ও বাংলাদেশী অভিবাসনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানা‌লেন ‘ফরাসি বিরোধী নেতা মেরিন লে পেন’।

এ অবস্থায় য‌দি বাংলা‌দেশী অ‌ভিবাসনের উপর নিষেধাজ্ঞা আসে তাহ‌লে তা বাংলা‌দে‌শের জন্য বিরাট বিরুপ প্রভাব ফেল‌বে।

ক্রমেই বিশ্ব মুস‌লিম দেশগু‌লো বিভক্ত হ‌য়ে পড়‌ছে। সৌ‌দিআরব ইতিম‌ধ্যে তুর‌স্কের সকল পণ্য নি‌ষিদ্ধ ক‌রে‌ছে তার দে‌শে। ফ্রা‌ন্সের সাম্প্র‌তিক মহানবী (সাঃ) অবমাননায় স্কুল ‌শিক্ষক‌কে হত্যার নিন্দা জা‌নি‌য়ে‌ছে সৌ‌দিআরব। মধ্যপ্রা‌চ্যের অন্য অ‌নেক দেশ ফরাসী পণ্য বর্জ‌ন শুরু ক‌রে‌ছে। এদি‌কে ইসরায়েলের সা‌থে মধ্যপ্রা‌চ্যের বেশ‌কিছু দে‌শের শা‌ন্তি চু‌ক্তি‌তে পু‌রো মধ্যপ্রা‌চ্যের ভূরাজনী‌তির প‌রিবর্তন হ‌চ্ছে। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য থে‌কে শুরু হওয়া ফ্রা‌ন্সের বিরু‌দ্ধে পণ্য বয়কট ও আন্দোল‌নের রেশ বাংলা‌দে‌শে এসে ঠে‌কে‌ছে। বাংলাদেশে এক শ্রেনীর আন্দোলনকারী ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের পাশপাপাশি ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচিও পালন করেছেন। বিষয়টি ফ্রান্সে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যে কোন কর্মসূচি দেয়ার আগে তার প্রতিফল সম্পর্কে ধারণা থাকা ও দা‌য়িত্বশীল আচরণ করা বাঞ্চনীয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।