খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারার রামাসু বাজারে ভয়াবহ সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কমপক্ষে তিনজন পাহাড়ি নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। স্থানীয় সূত্র ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বাঙালি সেটলার গোষ্ঠী হামলা চালালেও মামলা করা হয়েছে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে, যা নিয়ে ক্ষোভ ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
পুলিশের প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (FIR) অনুযায়ী, ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত গুইমারার রামাসু বাজার এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হওয়ার কথা প্রথমে বলা হলেও, পরবর্তীতে আহতদের মধ্যে আরও মৃত্যু ঘটে। দোকানপাট ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, পুড়ে ছাই হয়ে যায় একাধিক বাড়ি ও যানবাহন।
আহতদের অবস্থা
সহিংসতায় নারী, শিশু ও পুরুষসহ বহু মানুষ গুরুতর আহত হন। কারও মাথায় সেলাই, কারও মুখে ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। মাঠেই অনেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন।
নিহতের সংখ্যা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।
অভিযোগ ও মামলার বৈপরীত্য
স্থানীয় সংগঠনগুলোর অভিযোগ অনুযায়ী, সহিংসতায় বাঙালি সেটলারদের সম্পৃক্ততা থাকলেও মামলা দায়ের করা হয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে (৩০২/৩৪ ধারা)। এটি নিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশের দায়ের করা FIR ও প্রেরিত বিস্তারিত প্রতিবেদনে আসামির তালিকায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একাধিক সদস্যের নাম রয়েছে।
‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’-র ৮ দফা দাবি
৩ অক্টোবর সংগঠনটি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং আট দফা দাবি পেশ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, ক্ষতিপূরণ প্রদান, প্রকৃত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও আইএসপিআর-এর বিবৃতি প্রত্যাহার।
উপসংহার
রামাসু বাজারের সহিংসতা পার্বত্য চট্টগ্রামের পুরনো জাতিগত উত্তেজনা, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও পক্ষপাতমূলক বিচার প্রক্রিয়ার বাস্তব রূপ তুলে ধরেছে। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের বিচারের দাবি স্থানীয় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জোরালোভাবে তুলছে।