ভূ-রাজনীতির নতুন খেলা
ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক বিশ্ব-শক্তির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থানগত গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে গেছে। এর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে আগ্রহী হয়েছে। প্রমোদ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিলেও এর আড়ালে সাবমেরিন ঘাঁটি গড়ার পরিকল্পনা করছে তারা।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা
চীনের দ্রুত নৌসামরিক শক্তি বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলেছে। শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের জোরে চীন এখন আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশকে তাদের কৌশলগত পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে বাংলাদেশ অনিচ্ছা সত্ত্বেও মহাশক্তির দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে।
ধাপে ধাপে পরিকল্পনা
প্রথম ধাপে দ্বীপের একটি অংশ ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়ে সেখানে বিদেশি প্রমোদ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ অঞ্চলে বিদেশিদের পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে। ধীরে ধীরে এই জায়গা সামরিক ঘাঁটি—বিশেষ করে সাবমেরিন ঘাঁটি—হিসেবে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এড়াতে বিষয়টি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা
ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদেই এই চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা প্রবল। যদিও সরকার প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করছে না, তবে চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্টের ক্ষমতার পরিবর্তনের অন্যতম মূল কারণই ছিল মার্কিন সামরিক ঘাঁটির বিষয়টি। ফলে বর্তমান সরকার মার্কিনিদের সঙ্গে সমঝোতা করেই দায়িত্ব শেষ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৭১ সালের স্বাধীনতার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিনে ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনাও একইভাবে মার্কিন প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর পট পরিবর্তনের ফলে আবারও নতুন প্রস্তাব আনা হয়। এ বার দ্বীপের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।