মাদক গ্রহণকারী শনাক্তকরণ পরীক্ষা বা ডোপ টেস্টে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেশিসংখ্যক ব্যক্তি মাদক নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
২০২২ সালে পরীক্ষা করা ব্যক্তিদের মধ্যে মাদক নেওয়া ব্যক্তিদের হার ছিল প্রায় দেড় শতাংশ।
এ বছর তা সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে।
আর মাদক গ্রহণকারী হিসেবে শনাক্ত ব্যক্তিদের ৯৯ শতাংশই গাড়িচালক।
ডোপ টেস্টদেশে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি,
অস্ত্রের লাইসেন্স, বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা গবেষণা,
সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদানের জন্য
স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে মাদক পরীক্ষার সনদ জমা দিতে হয়।
আবার চাকরিতে থাকাকালে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাঁর ডোপ টেস্ট করাতে পারে।
রাজধানীতে চালকদের বেশির ভাগ ডোপ টেস্ট করা হয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন
অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে।
এর বাইরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়,
সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ডোপ টেস্ট হয়।
গত বছর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে এক লাখ ৬৭
হাজার ২৬৩ জনের ডোপ টেস্ট করা হয়।
এর মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দেন এক লাখ ৬৫ হাজার ৮৭৮ জন।
চাকরি ও অন্যান্য কাজের জন্য পরীক্ষা করান এক হাজার ৩৮৫ জন।
তাঁদের মধ্যে পজিটিভ বা মাদকাসক্তি শনাক্ত হয় দুই হাজার ১৯৬ জনের।
এর মধ্যে দুই হাজার ১৮৮ জনই ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দেওয়া ব্যক্তি।
অর্থাৎ ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ৯৯.৬৩ শতাংশই গাড়ির চালক।
আর মোট ডোপ টেস্টের বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১.৩১ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, মাদকাসক্তি মস্তিষ্কের ক্রনিক রোগ।
কোনো ব্যক্তি মাদকাসক্ত কি না তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয় তা-ই ডোপ টেস্ট।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়া মানেই মাদকাসক্ত নন।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে চালকদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
বর্তমানে ডোপ টেস্ট করা হয় শুধু মূত্রের নমুনা নিয়ে।
তবে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে বেশির ভাগ মাদকসেবী শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
কারণ শুধু মূত্র পরীক্ষায় নমুনা হেরফের করার সুযোগ থাকে।
আবার মূত্রের নমুনা সংগ্রহের আগে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে বা নমুনা সংগ্রহের ৭২ ঘণ্টা আগ
থেকে মাদক গ্রহণ বন্ধ রাখলে এই পরীক্ষায় তা শনাক্ত করা যায় না।
এ ক্ষেত্রে রক্ত, চুল বা নক পরীক্ষাসহ বিকল্প পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডোপ টেস্ট মানে কারো জীবিকায় বাধা দেওয়া নয়।
এর মাধ্যমে মাদকসেবী শনাক্তকরণ ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনাই মূল লক্ষ্য।
সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, সমাজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনাও এর বড় লক্ষ্য।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ।
সরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ লাখ।
২০১৮ সালে সারা দেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
তখন সরকারিভাবে মাদকাসক্তের সংখ্যা বলা হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ লাখ।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে গত জুন মাসে ডোপ টেস্ট করা হয় আট হাজার ৩৪৭ জনের। এর মধ্যে পজিটিভ হন ৬০৮ জন। এর ৬০৬ জনই গাড়িচালক। এটা মোট পরীক্ষার ৮.৩৪ শতাংশ।
এর আগে মে মাসে একই সেন্টারে ডোপ টেস্ট করা হয় ১০ হাজার ৩৭ জনের।
এর মধ্যে মাদকাসক্ত শনাক্ত হয় ৬৩০ জনের।
এই সংখ্যা মোট পরীক্ষার ৬.৭ শতাংশ। তাঁদের সবাই গাড়িচালক।