৪৮ টাকার জিরাশাইল কেটে তৈরি হচ্ছে ৬২ টাকার মিনিকেট। যা আবার সুদৃশ্য প্যাকেটে ঢুকে রাজধানীর সুপারশপে প্রিমিয়াম মিনিকেট নামে বিক্রি হচ্ছে ৭৯ থেকে ৮২ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ৩২ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। বছরের পর বছর এমন প্রতারণা চললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবশেষে মাঠে নামছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
কৃষকের চাষের জিরাশাইল ধান ঢোকানো হচ্ছে মেশিনে। পলিশিংয়ের মাধ্যমে যেখানে চালের ওপরের ভিটামিনযুক্ত লেয়ার কেটে ফেলা হয়। দেখতে সুন্দর হলেও গুণহীন শর্করাসমৃদ্ধ চাল রূপ নিচ্ছে মিনিকেট নামে। মানহীন এসব চালই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে খোলাবাজারে।
পরিচয় গোপন রেখে এই মিল মালিক স্বীকার করেন সিন্ডিকেটের চাহিদার কারণে মোটা চালের ভিটামিনযুক্ত অংশ ছেঁটে ফেলে নামসর্বস্ব মিনিকেট তৈরি করেন তারা।
ওই মিল মালিক বলেন, আসলে মিনিকেট বলতে কিছু নেই। জিরাশাইল চালকেই মিনিকেট বলে বস্তায় প্রিন্ট করা হয়। আমরা যেসব মোকামে চালগুলো বিক্রি করি, বড় বড় আড়তদার যারা চাল কেনেন, তাদের ডিমান্ডে মিনিকেট করে বস্তায় চাল দিতে হয়।
নওগাঁর মিল মালিকরা বড় ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী, মিনিকেট নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বস্তায় ভরে এসব চাল বিক্রি করেন।
নওগাঁ জেলা চাল ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, চালের ওপর যে ভিটামিনের আবরণ থাকে, সেটি আমরা অপসারণ করে চকচকে করে থাকি। অসৎ ব্যবসায়ীরা এসব চালের নাম মিনিকেট দিয়ে বসে আছে। এটা হওয়া উচিত না।
নওগাঁর ৪৮ টাকার জিরাশাইল মিনিকেট নাম নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা থেকে। প্যাকেটে ঢুকলে সেই চালের দাম হচ্ছে ৭৯ টাকা। যা আবার সুপার প্রিমিয়াম নামে ৮২ টাকা কেজি দরে ঠাঁই পাচ্ছে সুপারশপের র্যাকে।
এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, বাংলাদেশে মিনিকেট নামে কোনো ধান বা চাল নেই। প্রসেসিং করে মিনিকেট করা হয়। তাহলে ওনারা কেন চুপ করে বসে আছেন। ওনারা এই পদ্ধতিটা বন্ধ করে দিলে বাজারে আজকে এই আলোচনাটা হতো না।
শুধু মিনিকেট না। ১২০ টাকার চিনিগুঁড়া চাল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটে ঢুকে হয়ে যাচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫৫ টাকার পোলাউয়ের চাল।
এই কারসাজির কারণে ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দাম কমছে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর হাতেনাতে যার প্রমাণ পেয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, যখন প্যাকেটজাত চালের দাম অত্যাধিক দেখানো হয়, তখন এটার প্রভাবও খোলাবাজারে চালের ওপর পড়ে।
মিনিকেটের নামে ১৪ থেকে ৩৩ শতাংশ অতিরিক্ত মুনাফা করা হচ্ছে। আর পোলাউ চালে বড় ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভ করছে ২১ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত। এসব বন্ধে কঠোর হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছে যে মিনিকেট নামে কোনো চাল নেই। ৫৪ টাকা কেজি মোটা চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে, এটাকেই সরু ও পলিশ করে সেটা ৭৮ টাকা থেকে ৮২ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
মিনিকেট নামে চাল বিক্রি বন্ধে ব্যবসায়ীদের চিঠি দিচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অনিয়ম রুখতে দ্রুত অভিযানে নামবে কর্তৃপক্ষ।