মারাত্মক আহত অবস্থায় রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ০৯:০০ টায় তাঁর অস্ত্রোপচার শুরু হয় এবং ১১টা ৫ মিনিটের দিকে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
এরও আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওয়াহিদাকে দেখতে যান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “(ইউএনও)ওয়াহিদা খানমের সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলেছি। এখন তার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। তবে তার প্রেসারটা আপ-ডাউন করছে। যদিও সাক্ষাৎকারে তার প্রেসার ৮০/১২০ এর মধ্যে ছিল। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করুন।” তিনি আরও বলেন, “তাঁর মাথার বাঁ-দিকটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডান পাশের কিছু অংশ প্যারালাইজড অবস্থায় আছে।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ৯ টায় অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগে তার সিটিস্ক্যান করা হয়। ইউএনও ওয়াহিদার প্রেসার নরম্যাল থাকার কারনে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন যা ১১ টা ৫ মিনিটে শেষ হয়।
এদিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের উপপরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম জানান, “(ইউএনও)ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে তাঁকে আইসিইউতে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। আগের চেয়ে অবস্থা কিছুটা উন্নতি বলা যায়, তবে তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।”
অস্ত্রপ্রচার কতটুকু সফল হয়েছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অস্ত্রোপচার সাকসেস হয়েছে কিনা সেটা বলতে আরও সময় লাগবে, সেটা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তবে আশার কথা হলো ইউএনও ওয়াহিদার অপারেশন পূর্ববর্তী ও বর্তমান সব প্যারামিটার ভালো। এটা আশাব্যঞ্জক।”
অস্ত্রোপ্রচার শেষে চিকিৎসকরা জানান, “দুর্বৃত্তের হামলায় ইউএনও ওয়াহিদার মাথার বাঁ-দিকটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাথার কিছু অংশ ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে প্রেসার তৈরি করেছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটি অপসারণ করা গেলে অবস্থার উন্নতি হবে এমন আশা থেকে তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।”
উল্লেখ্য, বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দুর্বৃত্তরা সরকারি আবাসিক ভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে। এ সময় চিৎকারে তার সঙ্গে থাকা বাবা ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাকেও কুপিয়ে জখম করে। পরে অন্য কোয়ার্টারের বাসিন্দারা বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশে খবর দেন। তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুরে পাঠানো হয়। ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে রংপুর ডক্টরস ক্লিনিকে আইসিইউতে ও তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওয়াহিদা খানমকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে এক বার্তায় মন্ত্রী এই পৈশাচিক হামলার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি করেন।