খৎনা করাতে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যুতে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে অভিভাবকদের মাঝে। যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই আদরের সন্তানকে খৎনা করাবেন; তারাও পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। দেশের স্বাস্থ্যখাতে আস্থা হারিয়ে, কেউ কেউ সিদ্ধান্তও নিয়েছেন দেশের বাইরে খৎনা করানোর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যখাতে মানুষের আস্থা ফেরানো জরুরি। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্রে সুন্নাতে খৎনার জন্য, এলাকাভিত্তিক আলাদা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা দরকার।
তাসকিয়া হক লিরিক ও শিবলী নোমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক দম্পতির একমাত্র ছেলে সন্তান নুরায মুহারিয। যাকে ঘিরেই হাতরে বেড়ান, আগামীর স্বপ্ন। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিছুদিনের মধ্যেই খৎনা করাবেন ছেলেকে। কিন্তু, সম্প্রতি দুই শিশুর মৃত্যু, ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। আতঙ্ক এতোটাই যে সন্তানের খৎনা করাতে এখন তারা যেতে চান বিদেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান বলেছেন, এটা নিঃসন্দেহে ভীতিকর। আমাদের মতো যারা গার্ডিয়ান আছে এবং ছেলে বাচ্চা যাদের রয়েছে, তারা নিশ্চয়ই ভীতির মধ্যে রয়েছেন। এখন করাবেন নাকি পরে করাবেন; এখন করালে কীভাবে ও কথায়, সেই সব প্রশ্ন ভাবাচ্ছে গার্ডিয়ানদের।
তাদের মত দেশের বাইরে নেয়ার সিদ্ধান্ত না নিলেও, চরম দো’টানায় পড়েছেন সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন। ছেলে বড় হচ্ছে, খৎনা করানোরও বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু নিরুপায়, চরম অনিশ্চয়তায় বোরহান।
ঢাকা মেইলের সিনিয়র রিপোর্টার বোরহান উদ্দিন বলেন, ডাক্তার দিয়ে করাবো নাকি হাজম দিয়ে করাবো, সেটা যেমন এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। পাশাপাশি এই মুহূর্তেই ছেলের খৎনা করানো নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি।
এই অভিভাবদের মত উদ্বিগ্ন, সন্তানের খৎনা করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া আরও অনেকেই। তাইতো একের পর এক, এমন ঘটনার আলোচনা দেশের সর্বত্র। আতঙ্কিত অভিভাবকদের অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে লিখেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সমালোচনার ঝড় তুলেছেন নেটিজেনরা। এই অবস্থায় জনমনে আস্থা ফেরানোকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে ছেলে বাচ্চা জন্ম নেয়ার পরপরই সেদিনই খৎনা করিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং এটিও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভেতরে না আনা পর্যন্ত এই অনিশ্চয়তা দূর হবে না।
তবে, এই সমস্যা সমাধানে ৩টি উপায়ও বাতলে দিয়েছেন, এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। ডা. লেলিন চৌধুরীর মতে, প্রথমত, ডাক্তার তার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, যেকোনো দুর্ঘটনা রোধে সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে রাখবে। তৃতীয়ত, যে শিশুটির খৎনা করানো হবে, তার সম্পর্কে ডাক্তারকে সঠিক সময়ে, সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে শিশুটির বাবা-মায়ের।
সবার প্রত্যাশা দুর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করে ঘুরে দাঁড়াবে চিকিৎসা ব্যবস্থা, যাতে খৎনার মতো মামুলি অস্ত্রপোচারে কোনো নিষ্পপ শিশুর মৃত্যু না হয়।